অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা

প্রকাশঃ এপ্রিল ১৪, ২০১৫ সময়ঃ ৭:৫৯ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৭:৫৯ পূর্বাহ্ণ

আলমগীর খন্দকার

Alamgir Khandokerকদিন ধরেই চৈত্রের খররোদে পুড়ছে ধরা। এরই মধ্যে দেশজুড়ে বয়ে গেছে ভয়াল কালবৈশাখীও। গত ৩ মাসে রাজনীতির ওপর দিয়েও বয়ে গেছে প্রবল ঝড়। গেল সোমবারও দেশজুড়ে ছিল হরতাল। অনির্দিষ্ট কাল ধরে চলছে ‘অকার্যকর’ অবরোধ। এর মধ্যেই প্রকৃতির নিয়মে চলে এলো বৈশাখ। বাঙালির প্রাণের নববর্ষ। ঝঞ্চা-বিক্ষুব্ধ এ সময়েও সবাইকে জানাই শুভ নববর্ষ। বৈশাখের অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা/ মুছে যাক গ্লানি ঘুচে যাক জরা..

রাজনীতিতে ঝড়-ঝঞ্চা যাই হোক, বাঙালি তার নববর্ষ বরণে ঘরে বসে থাকবে না। সমস্ত বাধা, প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে আজ প্রাণের টানে ঘর ছেড়ে বের হবে বাঙালি। উৎসবে মাতবে সমস্ত দেশ। রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় আগেই শুরু হয়েছে বৈশাখী মেলা। হরেক রকম পসরা বেচতে-কিনতে সেখানে হাজির হচ্ছেন শহুরে-গ্রামীণ নাগরিকেরা। তবে আজ উৎসবের ঢল নামবে সবখানে। আজ যে বাঙালি প্রাণের বাঁধ ভাঙার দিন!

বাংলাদেশে বর্ষবরণ এখন পরিণত হয়েছে একটি সর্বজনীন উৎসবে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই শামিল হন এতে। কী বাঙালি কী অবাঙালি সবার প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়েছে পয়লা বৈশাখ। দেশের প্রধানতম অসাম্প্রদায়িক উৎসবে রূপ নিয়েছে নববর্ষ বরণ।

নববর্ষের  প্রথম দিনটা রাজধানীর বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুরু হয়। বহু দিনের চর্চিত রীতি অনুসারে এদিন ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ গানের মধ্য দিয়েই বৈশাখকে আবাহন করা হয়। বটমূল ছাড়াও এদিন অনুষ্ঠান হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায়, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরসহ বিভিন্ন স্থানে।চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা বৈশাখের অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পয়লা বৈশাখের উৎসবে সবচেয়ে বেশি মাতে তরুণ-তরুণীরা।

রাজধানীর শাহবাগ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, টিএসসি, রমনা উদ্যান, ধানমন্ডি লেক এলাকা এদিন ভরে যায় তরুণ-তরণীদের মিলনমেলায়। বাবা-মার হাত ধরে পথে নামে শিশু, বালক-বালিকারাও। বছরের অন্যদিনগুলো যাই হোক, শহরে অনেক বাসায়ই বৈশাখের প্রথম দিনটা শুরু হয় পান্তা-ইলিশে।

তবে আবহমান বাংলার গ্রামীণ সমাজে নববর্ষের প্রথম দিনটিও শুরু হয় গতানুগতিকভাবেই। এদিনও কিষাণ-কিষাণীকে তাদের নিত্যকাজেই ব্যস্ত থাকতে হয়। তবে গ্রামের অনেক স্থানে জমে মেলা। বিকালের দিকে হয়ত সেখানে একপাক ঘুরে আসেন কিষাণ। অনেক কিষাণ-মেয়েই এদিন পড়েন রঙিন সুতির শাড়িটা। হালখাতা অনুষ্ঠানের চল অনেকটা উঠে গেলেও গ্রামের অনেক গঞ্জে তা এখনো আয়োজন করা হয়।  POHELA-BOISAKH-3

বাংলা সনের প্রবর্তন কবে হয়েছিল তা নিয়ে পন্ডিতমহলে নানা বিতর্ক রয়েছে। বেশিরভাগ পন্ডিতের মত, মোগল সম্রাট আকবর এর প্রবর্তক। তিনি ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে ‘তরিক ই ইলাহি’ নামের একটি নতুন সনের প্রবর্তন করেন দিল্লিতে। তখন থেকেই আঞ্চলিক পর্যায়ে বাংলা সনের গণনা শুরু হয়েছিল। তবে রাজা শশাঙ্ক, সুলতান হোসেন শাহ ও তিব্বতের রাজ স্রংসনকেও বাংলা সনের প্রবর্তক বলে মনে করেন কেউ কেউ।

এর আগে বৈদিক যুগে অঘ্রানকে বছরের প্রথম মাস বলে গণ্য করা হতো। তবে এই অঞ্চলের চাষাবাদের সঙ্গে মিলিয়ে খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে ফসলি সন হিসেবে বৈশাখকেই বছরের প্রথম মাস ধরে বাংলা সনের গণনা শুরু হয়েছিল। সুবাদার মুর্শিদ কুলি খানের সময়ে বৈশাখ মাসের শুরুতে খাজনা আদায়কে কেন্দ্র করে পয়লা বৈশাখে এক ধরনের আর্থসামাজিক আনন্দ-উৎসবের সূচনা হয়েছিল বলে মনে করেন গবেষকরা।

প্রায় একই ধরনের চিন্তা থেকে ‘রাজপুন্যাহ’ অনুষ্ঠানে কাছাকাছি সময়ে বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে বৈসাবি, বিজু, সাংগ্রাইং ইত্যাদি নামে বর্ষবরণ করে থাকেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজনরাও। তবে আধুনিক ধারায় পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনের রীতি প্রচলন করেন কলকাতার ঠাকুর পরিবারের ছেলে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কলকাতার শান্তি নিকেতনে তিনিই প্রথম গেয়েছিলেন তাপস নিঃশ্বাস বায়ে/ মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক যাক যাক/ এসো এসো…।

বছরের প্রথম দিনে সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করছি সবার। ভালো থাকবেন, প্রতিদিন।

প্রতিক্ষণ/তপু

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G