জটিল চিকিৎসায় কীট-পতঙ্গের ব্যবহার!
ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডট কম:
মানব সভ্যতার সূচনা লগ্ন থেকে মানুষ নানা উপায়ে প্রকৃতির সাহায্য নিয়েছে। আর চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রকৃতির এই অবদান অপরিসীম। শুধু যে লতা আর গুল্ম এর ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে আমাদের চিকিৎসা বিজ্ঞান তা কিন্তু নয়, এর পেছনে প্রানী কূলের অবদান নেহায়েত কম নয়।
আমাদের চিকিৎসা বিজ্ঞান ধাপে ধাপে অনেক দূর এগিয়েছে । কিন্তু এখনও এমন কিছু চিকিৎসা ব্যাবস্থা প্রচলিত আছে যা অনেকটা আশ্চর্যকর বিষয়ের পর্যায়ে পরে। যেমন, কম্বোডিয়ায় গরুর প্রশ্রাবকে এখনও ঔষধ মনে করা হয় এবং তা অনেকেই খেয়ে ফেলে নির্দিধায়, আর তা গরম গরম খাওয়াটাই শ্রেয়!! বিশ্বে এরকম আরও কিছু অদ্ভুত চিকিৎসা ব্যাবস্থা রয়েছে যার সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত আছে জীবিত প্রানি।
মৌমাছির হুলের দংশন ব্যাথাদায়ক হলেও প্যারালাইসিস চিকিৎসায় এর ব্যাবহার হয়। অর্থাৎ যাদের প্যারালাইসিস আছে তাদের প্যারালাইসড অংগে এর দংশন দেয়া হয়। ফলে সে স্থানে যেমন হালকা ব্যাথা অনুভূত হয় তেমনি অনেক ক্ষেত্রে কিছু কিছু রোগী সামান্য পরিমানে তাদের প্যারালাইসড অঙ্গ নড়াতে সক্ষম হয়। অনেকের মতে এই চিকিৎসা দীর্ঘকালিন সময় ধরে করা হলে প্যারালাইসিস সম্পূর্ন ভাবে সারিয়ে তোলা সম্ভব।
শূককীট দিয়ে চিকিৎসাঃ
এই চিকিৎসা ব্যাবস্থায় মাছির শূককীট ছেড়ে দেয়া হয় যে কোন ক্ষত বা পচে যাওয়া ঘা’তে। এই শূককীট গুলো খুবই কার্যকরভাবে ঘা থেকে পঁচে যাওয়া টিস্যু গুলোকে সর্বাধিক কার্যকর উপায়ে খেয়ে ফেলে। এ কারনে খুবই সল্প পরিমানে ঘা অবশিষ্ট থাকে যা ঘা শুকাতে অনেক বেশী কার্যকর ভুমিকা পালন করে। এই ব্যাবস্থা অনেকের কাছে নোংরা মনে হলেও এর প্রচলন অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। ফ্রান্সে ২০১২ সালে একটি জড়িপে দেখা যায় যে, মাছির শূককীটেরা খুবই কার্যকর ভাবে মরা বা আক্রান্ত টিস্যু গুলোকে সরাতে পারে যা খুবই উপকারি, আর এতে কোন প্রকার ব্যাথা অনুভব না হওয়ায় এর প্রতি অনেকের আকর্ষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০০৫ সালে একটি জরিপে দেখা যায় যে, যারা খুব বেশি মানষিক অবসাদে ভোগেন তারা যদি ডলফিনের সাহচার্যে আসেন তবে তারা কোন প্রকার ঔষধ ছাড়াই অনেক সহজেই এই অবসাদ থেকে মুক্তি পান। এছাড়াও কিছু প্রতিবন্ধি শিশুদের ওপর জরিপ চালিয়ে দেখা যায়, যে সকল শিশু প্রতিবন্ধি তারা ডলফিনের সাথে পানিতে খেলা করলে খুব সহজেই সমাজে যে কারো সাথে মিশতে পারে। যা তাদের জন্য খুব বেশী দরকার। এছাড়াও কয়েকজন বিজ্ঞানির দাবি, ডলফিন যে আওয়াজ করে তাতে ক্যান্সার তৈরি করা সেল গুলোও ধ্বংস হয়।
এই চিকিৎসা ব্যাবস্থার উৎপত্তি হয় তুর্কিতে। এই চিকিৎসা ব্যাবস্থায় ব্যাবহার করা হয় চিকিৎসক মাছ বা Garra rufa obtusas প্রজাতির মাছ। এটি মূলত দেয়া হয় চর্ম রোগের ক্ষেত্রে। এই চিকিৎসা ব্যাবস্থায় মাছ গুলো মরা চামড়া খেয়ে ফেলে, আর ভাল চামড়া গুলো অবশিষ্ট থেকে যায় । ফলে চর্ম রোগ খুব তারাতাড়ি ঠিক হয়ে যায়।
পিপড়া চিকিৎসাঃ
আফ্রিকার চালক পিঁপড়ার ব্যাবহার শত শত বছর ধরে চলে আসছে। এই পিঁপড়া গুলোর চোয়াল অনেক শক্তিশালী হয়। বলা হয় প্রকৃতির সব থেকে ভয়ংকর কামড়। কেননা একবার কামড় দিলে তা ছাড়ানো অসম্ভবের পর্যায়ের পরে। কেননা আপনি যদি এদের টেনে তুলতে যান তবে এদের শরীর থেকে মাথা আলাদা হয়ে যাবে কিন্তু কামড় ছাড়বে না। এখন বুঝে দেখুন কেমন কামড় দিতে সক্ষম এরা। এদের ব্যাবহার করা হয় কোথাও কেটে গেলে অর্থাৎ সেলাইয়ের বিপরিতে। বেশী কেটে গেলে সেলাই দিতে হয়, কিন্তু এই পিঁপড়া আপনার কাছে থাকলে শুধু ধরে কোন মতে কেটে যাওয়া দু’অংশের মাঝখানে ধরবেন। এর পর আগলা হয়ে যাওয়া চামড়া কামড়ে ধরলেই টান দিন। দেখবেন মাথা কামড়ে আছে। এই ভাবে আদিকালে সেলাই দেয়া হত। আর এই কামড় সপ্তাহ খানেকের আগে ছাড়বে না, তাই নিশ্চিন্তে থাকা যায়।
হাতে বা পায়ের কোথাও যদি রক্ত জমাট বেঁধে যায় তাহলে সেই অংশে জোক লাগিয়ে রাখলে খুব সহজেই এই জমাট বাধা রক্তের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায় ।এছাড়াও অনেক সময় যাদের হার্টের ব্লক আছে তাদের এই চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। কেননা জোক যখন কামড় দেয় তখন খুবই কার্যকর Anti clotting agent নিঃসরণ করে যা অনেক সময় ব্লক খুলতে কার্যকর ভূমিকা পারন করে।
চিকিৎসায় কুকুরঃ
আমরা সকলেই জানি যে কুকুরের এমন কিছু ইন্দ্রিয় রয়েছে যা সত্যিকার অর্থে অসাধারণের পর্যায়ে পরে। ঠিক এরকম একটি ইন্দ্রিয় হল তাদের ঘ্রান শক্তি। তারা মালিকের ঘ্রান শুকে বলে দিতে পারে তাদের ডায়াবেটিকস কোন পর্যায়ে আছে। এর জন্য অবশ্য কুকুরকে আলাদা ভাবে প্রশিক্ষন দিতে হয়। আর এই কাজটির জন্য রীতিমত প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা কুকুরদের এই প্রশিক্ষন দিয়ে থাকে। এর সর্বাধিক ব্যাবহার হয় সেই সকল শিশুর ক্ষেত্রে যাদের জন্মগত ডায়াবেটিকস আছে। কেননা ঘুমের মধ্যে যদি শিশুর শরীরে গ্লুকজের মাত্রা বেড়ে যায় বা কমে যায় তাহলে হয়ত সেই শিশুটি ঘুম থেকে উঠতে পারবে না। আর এই ক্ষেত্রে এই কুকুর গুলো তা টের পেলে বাবা মাকে ডাকা ডাকি শুরু করে। ফলে বাবা মাকে ২৪ ঘন্টা কিছু সময় পর পর সন্তানের গ্লুকোজ লেভেল মাপতে হয়না।
এরকম আরো কিছু নিউজঃ
## পরীক্ষা দিতে গরুকে প্রবেশপত্র প্রদান!
## চুল-দাঁড়ি না কাটার অপরাধে জেল!
## মাথা খাটিয়ে মাথা ব্যাথা দূর
## জ্বর হলেই প্যারাসিটামল খাচ্ছেন?
প্রতিক্ষণ/এডি/পাভেল