অষ্টগ্রামে লাইফজ্যাকেটহীন স্পীডবোট, দুর্ঘটনা ও দায়ভার
গোলাম রসূল:
সম্প্রতি ফেসবুকে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম-বাঙ্গালপাড়া টু কুলিয়ারচর নৌরুটে স্পীডবোট সার্ভিস নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় বইছে। বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। ফেসবুকে অষ্টগ্রামের সচেতন তরুন সমাজ স্পীডবোট সার্ভিসের যে বিষয়টি নিয়ে আওয়াজ তুলেছে সেটি হল লাইফজ্যাকেটবিহীন ও অতিরিক্ত যাত্রী পারাপার। দাবি লাইফজ্যাকেটসহ যাত্রী পারাপার। তাদের দাবির বিষয়টি নি:সন্দেহে জনগুরুত্বপূর্ণ ও জনকল্যাণকর।
আমি ধন্যবাদ জানাই অষ্টগ্রাম-বাঙ্গালপাড়া টু কুলিয়ারচর নৌরুটে স্পীডবোট পরিচালনাকারী মালিকপক্ষকে। তারা সময়োপযোগী ও সঠিক কাজটি করেছেন বলে। এ রুটে আরো আগেই স্পীডবোট সার্ভিস প্রয়োজন ছিল। আমরা যারা হাওরে বাস করি তাদের কাছে নৌরুটের অতিরিক্ত সময় অভিশাপস্বরুপ। ঢাকা থেকে প্রায় ৩৫০ কি.মি দুরত্বে অবস্থিত চট্টগ্রামে যেতে যেখানে সময় লাগে গড়ে ছয়-সাত ঘন্টা সেখানে মাত্র প্রায় ১২০ কি. মি অষ্টগ্রামে যেতেও একই সময় লাগে। এটি ভাবলেই অনেক খারাপ লাগে। অষ্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের চাওয়া ছিল আরো কম সময়ে ঢাকা ও কিশোরগঞ্জের সাথে যোগাযোগ স্থাপন। ইতিমধ্যে অষ্টগ্রাম টু বাজিতপুরে ছয়-সাত মাস মেয়াদী সাবমার্জ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের মাধ্যমে যোগাযোগ এখন অনেকটাই কম সময়ে সম্ভব হয়েছে। কিন্তু স্পীডবোট সার্ভিস অষ্টগ্রামের যোগাযোগে আমূল পরিবর্তন এনেছে। এখন মাত্র ৩০-৪০ মিনিটে বাজিতপুর ও কুলিয়ারচরে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে। যা এক সময় ছিল অষ্টগ্রামবাসীর নিকট স্বপ্ন। তা এখন বাস্তবে রুপ নিয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে নিরাপত্তা নিয়ে। নিয়ম অনুযায়ী স্পীডবোটের যাত্রীদের লাইফজ্যাকেট পড়া বাধ্যতামূলক।
পদ্মা নদীর দুটি নৌরুট মাওয়া-কাওড়াকান্দি ও দৌলতদিয়া-গোয়ালন্দে স্পীডবোট পরিবহন আমি দেখেছি। সেখানে প্রত্যেক যাত্রীর জন্য একটি করে লাইফজ্যাকেট বরাদ্দ রয়েছে। আমি মাওয়া-কাওড়াকান্দি রুটে ও বাঙ্গালপাড়া টু কুলিয়ারচর রুটে স্পীডবোটে চড়েছি। এবার ঈদুল ফিতরে ঢাকায় ফেরার সময় বাঙ্গালপাড়া থেকে স্পীডবোটে কুলিয়ারচর আসার পথে বারবারই আমার মনে হয়েছে বোটটি উল্টে যেতে পারে। অনেক ভয় পেয়েছিলাম অতিরিক্ত যাত্রী ও ভারসাম্যহীনভাবে বোটে বসার কারণে। তবে নিশ্চিত ছিলাম যে সাঁতার জানি, বোট উল্টালে হয়ত মরব না। পানিতে বড় হওয়ার কারণে হাওরের অধিকাংশ মানুষই সাঁতার জানে। কিন্তু যারা সাঁতার জানে না? বিশেষ করে নারী ও শিশু? যদি কোনদিন দুর্ঘটনা ঘটে তাদের কি হবে?
আর এ বিষয়টি নিয়েই অষ্টগ্রামের সচেতন তরুনরা সজাগ হয়েছে। আমি তাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করছি। নিচে ফেসবুকের কয়েকটি স্ট্যাটাস হুবহু তুলে ধরা হল।
ব্যাংকার ফয়েজুল হক শিপু: “প্রয়োজন আবিষ্কারের জন্ম দেয়,আমি ধন্যবাদ জানাই যারা বাঙ্গালপাড়া থেকে কুলিয়ারচর স্পীডবোট এর ব্যবস্থা করেছেন, জনগণের সময়ের কথা চিন্তা করেছেন, জনগণের আরামের কথা চিন্তা করেছেন কিন্তু জনগণের জীবনের কথা চিন্তা করেন নাই, জীবনটা কে নিয়ে ছিনিমিনি করছেন, আপনারা হয়ত বলবেন আপনার ভাল না লাগলে আপনি যাবেন না, তারপরেও কথা থেকে যায়, হয়ত কেউ বিশেষ প্রয়োজনে স্পীডবোট এ চড়তে হয়ত যারা জীবন মরণের প্রশ্নে কিংবা রুটিরুজির জন্য যেতেই হবে তাদের তখন কিছুই করার থাকে না…।”
তরুণ ব্যবসায়ী সৈয়দ অতুল এর ফেসবুক স্ট্যাটাস, “অষ্টগ্রাম টু কুলিয়ারচর স্পিড বোট এর প্রত্যেক যাত্রীর জন্য লাইফ জ্যাকেট এর নিশ্চয়তা প্রদানের জন্য মালিক কর্তৃপক্ষের যথার্থ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। ”
ছাত্রনেতা সামিউর ছোটন লিখেছেন, “সব জায়গায় দেখেছি স্পীডবোট ছাড়ার আগে যাত্রীদেরকে লাইফ জ্যাকেট পড়ায়, তারপরও প্রতি বছর দু-একটা দুর্ঘটনার সংবাদ শোনতে পাই, কিন্তু আমাদের অষ্টগ্রাম কেন যে লাইফ জ্যাকেট এর ব্যবস্থা করছে না এর তীব্র নিন্দা জানাই, সবাই শুধু বিজনেস এর চিন্তা করে কিন্তু সেবার চিন্তা কেউই করে না।”
আমি অষ্টগ্রাম উপজেলা প্রশাসন, ও স্পীডবোট মালিকদের আহবান জানাই আপনারা অষ্টগ্রামের তরুন সমাজের দাবি অনুযায়ী দ্রুত লাইফ জ্যাকেট এর ব্যবস্থা করেন। আর অবশ্যই অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে বোট চালাবেন না। মনে রাখবেন, যদি একটি অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা ঘটে তবে এর দায়ভার কিন্তু আপনাদেরকেই নিতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক, হাওরের সন্তান