আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদল দিনে

প্রকাশঃ জানুয়ারি ১২, ২০১৫ সময়ঃ ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদল দিনে জানি নে, জানি নে কিছুতে কেন যে মন লাগে না ॥ এই চঞ্চল সজল পবন-বেগে উদ্‌ভ্রান্ত মেঘে মন চায় মন চায় ওই বলাকার পথখানি নিতে চিনে॥ মন সত্যিই চাইছে হারিয়ে যেতে নীল আকাশেরপানে। ঘুড়ি হয়ে নয়তো ময়না-শালিক হয়ে। উড়ে উড়ে যেতে চাই তেপান্তরের মাঠে, ধান শালিকের বেশে। আনমনে ছুটে বেড়াতে চাই আঁকাবাঁকা মেঠো পথ ধরে। খুঁজে ফেরে ভুলে যাওয়া পথ, হারিয়ে যাওয়া দুরন্ত আনন্দময় বিকেলকে।

এক দৃষ্টিতে ভাবতে চাই গহীন অরণ্যের নির্জনতাকে। ভেদ করতে চাই ভেজা মাটির নিরব রহস্যকে। আর গেয়ে উঠতে চাই, কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা। মনে মনে.. । এমন ঝুমঝুম বৃষ্টি, নিঝঝুম প্রকৃতির ঘুম ভাঙিয়ে তাকেও পাগলা হাওয়ার বেগে, মেঘে মেঘে ঘুরে ঘুরে উড়ে বেড়াবার সুযোগ এনে দিয়েছে। আর ঘরবন্দি মানুষগুলো ডানা ছাড়াই মনের আকাশে সাতরঙা রংধনু হয়ে উড়ে বেড়িয়েছে। এমন সময় তাকে বেঁধে রাখে এ সাধ্য কার!!

সবকিছু ছাপিয়ে আজকের শেষ বিকেলের নায়ক বৃষ্টি। শুধু কি বৃষ্টি ,একেবারে মুষলধারে বৃষ্টি!! আকাশের ভাব দেখে মনে পড়ল রবি ঠাকুরের কথা। ‘‘ নীল নব ঘনে আষাঢ় গগনে, তিল ঠাঁই আর নাহিরে। ওগো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে। ” বাহিরে বের না হলেও জানালা খুলে বৃষ্টি ছুঁয়ে দেখার কাজটা সবাই খুব আনন্দের সাথেই করছে। বৃষ্টি দেখেও না দেখার ভান করে থেকেছে এমন মানুষ পাওয়া ভার।

বৃষ্টি আমাদের অন্তরের না বলা কথা অঝোর ধারায় বলে দেয় এক নিমেষেই। মন ছুটে যায় বৃষ্টির নেশায় মাতাল হয়ে হিমেল হাওয়ায় উড়ে উড়ে। আর, আমিই যখন হারিয়ে যাই তখন আমাকেতো হারাতে হবেই। নিস্তব্দ, নির্জলা, নিরঝঞ্জাট নিলীমার ভেলায় ভেসে ভেসে চলে যাই অচীন কোন কল্পরাজ্যে। অচেনা-অজানা রূপকথার রূপকরাজ্যে। শান্তির বিচ্ছুরণে চারদিক জ্বলজ্বল করে উঠে। সোনালু স্বর্ণলতার মতো এক মন থেকে অন্য মনে একেঁ দেয় শুভ্র প্রশান্তি রংতুলির কোমল আঁচড়ে।

অনেকে মোবাইলে ব্যস্ত বৃষ্টির গান খুঁজে বের করতে। ভাবুনতো একবার কি মজার একটা উপলক্ষ। বৃষ্টি-গান আর এক কাপ চা। রাস্তায় থাকা কেউ কেউ একটু বকা-ঝকা দিতেই পারে এই খেয়ালি বৃষ্টিকে। ইদানিংতো আবার তার( বৃষ্টির) মতিগতি ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। এই রোদ এই ঝুম বৃষ্টি। তবুও বলছি , “তোমার তান্ডব দেখে কেউ নাচে ময়ুরের মতো করে আবার কেউ হয়ে যায় জড়োসড়ো। চারদিক হয়ে যাক সব এলোমেলো, অগোছালো, লন্ডভন্ড। বৃষ্টি তুমি তবু ঝরো।”

গাছগুলোর আনন্দ ছিল দেখার মতো!! এতদিন পর প্রকৃতি তাকে ইচ্ছেমত একটা গোসল করার সুযোগ করে দিয়েছে। দেখতে হালকা সবুজ রঙের পাতাগুলোকে এখন গাঢ় সবুজ মনে হচ্ছে। আকাশকে দেখে মনে হচ্ছে , সে যেন এখন একটু সস্তি পাচ্ছে অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝরিয়ে। কে জানে এই বৃষ্টিই হয়তো কারো কান্না হয়ে ঝরেছে।

“দুখিনীর দু:খ বোঝে বাংলার আষাঢ়-শ্রাবণ, তার হয়ে ঝড়ে যায় দিন-রাত; তারপর মহাপ্লাবন। দুখিনীর প্রিয় তাই বাংলার আষাঢ়-শ্রাবণ।” আকাশ এখন অন্ধকার থেকে অন্ধকারে হারিয়ে যেতে শুরু করেছে। ঘন নীল অন্ধকার থেকে ঘন কালো অন্ধকারে। হারিয়ে আর কতদূর যাবে। ভোরের আলো ফুটবেই।

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G