আবহাওয়া ও মাইগ্রেনের সম্পর্ক
প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন পুরুষের মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে। প্রতিদিন দুই লাখের মতো লোক মাইগ্রেনের সমসসায় আক্রান্ত হন। ব্যক্তিভেদে মাইগ্রেনের উপসর্গ ভিন্ন হতে পারে। কেউবা প্রচণ্ড মাথাব্যথার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ে। আবার কেউ তীব্র আলো সহ্যই করতে পারে না।
মাইগ্রেনের ব্যথার সময়কালও একেকজনের ক্ষেত্রে একেকরকম হয়ে থাকে। ৪ ঘণ্টা থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত এই ব্যথা স্থায়ী হতে পারে।
মাইগ্রেনের প্রকৃত কারণ এখনো উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়নি। তবে মনে করা হয়, মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক আচরণের ফলে স্নায়ুবিক সংকেত, মস্তিষ্কের রাসায়নিক পদার্থ এবং রক্ত কনিকা ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে মাথাব্যথা করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন মাইগ্রেনের সমস্যার পেছনে আবহাওয়াও একটি প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে পারে।
যুক্তরাজ্যের প্রখ্যাত চিকিৎসক ক্লারি মরিসন বলেন, ‘মাঝারি থেকে তীব্র মাথাব্যথাকে মাইগ্রেন হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। ব্রিটেনে প্রতি পাঁচজন নারীর একজন এবং প্রতি পাঁচজন পুরুষের মধ্যে একজন এই সমসসায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন’।
‘মাইগ্রেনের নেপথ্যে অনেক কারণ কাজ করতে পারে। হতে পারে সেটা শারীরিক, মানসিক, পরিবেশগত। আবার ওষুধের প্রতিক্রিয়ায়ও কোন ব্যক্তি মাইগ্রেনে আক্রান্ত হয়’, যোগ করেন তিনি।
তাঁর মতে, যাদের ঘন ঘন এই ব্যথা উঠে তাদের প্রধান কারণগুলো মানসিক কিংবা শারীরিক। তার মধ্যে আছে মানসিক চাপ, পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া, উদ্বেগ এবং কাজের ভিন্ন ভিন্ন সময়সূচী।
তিনি ব্যাখ্যা করেন, ‘পাশাপাশি, অনেক মানুষই বুঝতে পারে না যে তাদের মাইগ্রেনের পেছনে আবহাওয়াও একটা কারণ হিসেবে কাজ করে। এমনকি আবহাওয়ার কারনেই ব্যথা মারাত্মক পর্যায়ে পৌছতে পারে।’
‘যার মধ্যে উজ্জ্বল আলোতে, তীব্র দুর্গন্ধে বা ইলেকট্রনিক পর্দায় দীর্ঘক্ষণ কাজ করা এবং আবহাওয়ার পরিবর্তনকে দায়ী করা যায়। এর মধ্যে রয়েছে তীব্র শীত বা গরম অনুভূত হওয়া, সরাসরি প্রখর রোদে কাজ করা, প্রবল ঝড়বৃষ্টি কিংবা শুষ্ক বাতাসের কবলে পড়া ইত্যাদি।’
আবহাওয়ার এই ধরণের পরিবর্তনের কারণে কারো কারো মস্তিষ্কে সেরনটনিন নামক রাসায়নিক পদার্থের স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়ে মাথাব্যথা দেখা দিতে পারে।
আবহাওয়ার কারণে মাইগ্রেনের ব্যথা দেখা দিলে আক্রান্ত ব্যক্তি ভয়ানক হতাশায় নিমজ্জিত হয়। ওষুধ খেলেও অনেকসময় মাথাব্যথা কমে না। উপরন্তু তার পক্ষে আবহাওয়া পরিবর্তন করাও সম্ভব হয় না।
যারা ঘন ঘন এই ধরণের মাথাব্যথার সম্মুখীন হচ্ছেন, তাদের জন্য ড. মরিসনের পরামর্শ হল একটা ডায়রিতে মাইগ্রেনের ব্যথার সময়কাল ও কারণগুলো লিপিবদ্ধ করে রাখা। যেসব আবহাওয়াজনিত কারণে তীব্র ব্যথা দেখা দেয়, পরবর্তীতে ওই ধরণের পরিস্থিতি যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা।
মাইগ্রেনের ব্যথা থেকে মুক্তি পাবার জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, পুস্তিকর খাদ্যগ্রহণ এবং শারীরিক ব্যায়ামের বিকল্প নেই বলে জানান তিনি।
প্রতিক্ষণ/এডি/নাজমুল