আমরা মানুষ না, কেবলই যাত্রী

প্রকাশঃ মে ৩১, ২০১৫ সময়ঃ ৯:১৫ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১:১৮ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্ক

busরবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন “রেখেছো বাঙালি করে মানুষ করোনি”। মাঝে মাঝে ভাবি,মানুষ করে বানানো হয়েছে কিন্তু মানুষ হইনি। এরকম ভাবার অনেক কারণই আছে। তবে কখনো কখনো মনে হয় আমি মানুষ না, শুধুই একজন যাত্রী।

জীবনযুদ্ধে প্রতিনিয়ত চলাচল করতে হয় সাধারণ পাবলিক বাসে। সরকারকে নিয়মিত তাদের প্রাপ্যটা বুঝিয়ে দেয়ার পরও বিনিময়ে একটা ভাল পাবলিক বাসও পাই না।

আজকের কথাই বলি, মোহম্মদপুর থেকে লেগুনায় করে ফার্মগেট অফিসে আসছিলাম। লেগুনায় ওঠার কিছুক্ষণ পর মনে হল পায়ের কাছ থেকে প্রচন্ড উত্তাপ আসছে এবং গরম পানি ফোঁটার শব্দ। তাকিয়ে পুরো আঁতকে উঠলাম। দেখি একটি ডিব্বায় গরম পানি ফুটছে, আর তা ছিটকে বেরিয়ে আসছে, যার লাইন মেশিনের সাথে একটি তারের মাধ্যমে সংযুক্ত। হেলপারকে বললাম এটা ভাই কেমন আচরণ! এতে তো মানুষের হাত পা পুড়বে। হেলপার সাহেব পুরাই নির্বিকার। এমন একটা ভাব যেন কথা তার কানেই যায় না। পরে ভাবলাম যদি হেলপার সাহেব আমাকে রাগ করে নামিয়ে দেন তাহলে কোথায় যাব এই ভয়ে তাকে কিছু বলিনি

এবার বলছি গতকাল রাতের কথা। রামপুরা থেকে “বন্ধু” পরিবহনে নিরাপদ বন্ধু ভেবে চড়ে বসলাম পল্টন যাবো বলে। বন্ধু ভাবার কারণ মাত্র আটটি টাকার বিনিময়ে পৌঁছে যাবো পল্টন। কিন্তু কিছুদূর যাবার পরই বুঝলাম বন্ধু আমার কত বড় শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ আরো একটা “বন্ধু” বাস আমাদের বাসকে যখনি ওভারটেক করার চেষ্টা করলো তখন তারা “দুই বন্ধু” মোটামুটি আমাদের কথা ভুলে বন্ধুত্বের যুদ্ধে নেমে গেল। নিষেধ করলাম, কিন্তু ড্রাইভার যেভাবে উত্তেজিত হয়ে উঠলো ভয়ে আর কিছু বলার সাহস পেলাম না। ড্রাইভার সাহেব যদি নামিয়ে দেন তাহলে কিভাবে যাব! আমার দ্বারা ৭০/৮০ টাকা রিক্সা ভাড়া দিয়ে সেই পল্টন যাওয়া সম্ভব না। আবারো ভাবতেই হল আমিতো মানুষ না, কেবলই একজন যাত্রী।

আরো কিছুদিন আগের কথা । উত্তরা থেকে পল্টন আসছিলাম “প্রচেষ্টা পরিবহনে”। উত্তরায় আসার পর কন্ডাকটর ভাড়া নিয়ে যান। ভাংতি না থাকায় ১০০ টাকা দিই। সে বাকীটা পরে দিচ্ছে বলে সামনে চলে যায়। পেপার পড়ায় মন দেই, বাস বাড্ডায় আসার পর নতুন এক কন্ডাকটর এসে আবার ভাড়া চায়। যতই তাকে বুঝাই ভাই আমিতো ভাড়া দিলাম। সে কোন ভাবেই মানে না। সে বলছে আমাদের আর কোন কন্ডাকটর নেই। পড়লাম মহাবিপদে। যাত্রীরা আমার পক্ষ নিলেও লাভ হল না। ড্রাইভার সাহেবের হুমকি-ধমকিতে আবারো ভাড়া দিতে হলো। চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম তখন কোন ট্রাফিক পুলিশও নেই !

এভাবেই আমরা যারা নিজেদের মানুষ বলে পরিচয় দিচ্ছি, তারা শুধুই কেবল যাত্রীতে পরিণত হচ্ছি। আমাদের সাথে এদের ব্যবহার যেন একজন যাত্রীর মতোই। কখনও আবার সেটা হয়ে যায় বস্তার মতো। বস্তা আর মানুষ ঠাঁসাঠাঁসি করে কোন রকম যেতে হয়। মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ বলে এটাই আমাদের সম্বল । হাজার অত্যাচারের পরও কিছুই বলার থাকে না। তবে মাঝে মাঝে কিছু কিছু বাস দেখলে মনে হয়। বাসটারই কত কষ্ট , সে কিভাবে সেবা দিবে। সিট নেই, সিটের ফোম নেই, ইঞ্জিন এর বেহাল অবস্থা । এই বাসেই যেন ৪০০ বছরের পুরাতন শহরটা ভরে আছে।
আসলে আমরা শ্রমের বিনিময়ে টাকা উপার্জন করে সে টাকায় আয়কর দিই। কাজেই আর কিছু না পাই আর না পাই সরকারের কাছ থেকে অন্তত একটু শান্তিতে চলাচলের সুযোগতো পেতে পারি। অন্তত মানুষ হিসেবে আমাদের গণ্য করা হোক।
কত মেয়র এলেন, কত সরকার গেলেন কিন্তু আমরা এই খেটে খাওয়ারা শুধুমাত্র যাত্রী হয়েই রইলাম মানুষ পারলাম না।
মুনওয়ার আলম নির্ঝর
লেখক: সাংবাদিক

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G