আর্সেনিক বিষে পঙ্গু হচ্ছে মানুষ
প্রতিক্ষণ ডেস্ক
আর্সেনিক বিষক্রিয়া, দক্ষিণ আর দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের এক অভিশাপ। আর্সেনিকের ভয়ানক ছোবলে কারো নেই হাত, কারো বা পা, আবার অনেকেই বিকলাঙ্গ কিংবা অসুস্থ।
মেহেরপুরের তিনটি উপজেলার প্রতিটি পরিবারেই দেখা যায় এমন চিত্র। স্থানীয়দের হিসেবে, চলতি বছরেই আর্সেনিকের বিষ ক্রিয়ায় মারা গেছে ৩০ জন। তারপরেও ওইসব এলাকায় এখনও ব্যবস্থা হয়নি বিশুদ্ধ পানির।
মেহেরপুরের ধুসরপুর।আর দশটি গ্রামের মতই এর প্রকৃতি,তবে ভেতর থেকে নামের মতই যেন ক্রমাগত ধুসর হচ্ছে এখানকার মানুষের বেচে থাকার সংগ্রাম।
মানুষের এই ছুটে চলা বাঁচার তাগিদে, একটুখানি বিষমুক্ত পানির আশায়। আশ পাশের ৩/৪ গ্রামের মানুষের জন্য একমাত্র সুপেয় পানির যোগান আসে এখান থেকেই। কুয়ো আকৃতির বিশেষ ব্যবস্থা থেকে টেনে তোলা এ পানি সবার ভাগ্যে জোটে না,দীর্ঘ অপেক্ষার পরও।
এ এলাকার শতভাগ টিউবওয়েলে মেলে বিপদের লাল রঙের দেখা। আলমপুর, সুবিদপুর, আমঝুপি, তারানগর, জয়পুর, আনন্দবাস, ভোলাডাঙ্গা মতো গ্রামে এমন পরিবার নেই যেই পরিবারে আর্সেনিকে কেউ আক্রান্ত হয়নি এবং মারা যায়নি। ১৫ বছর ধরে একটু একটু করে গ্রাম মেহেরপুরের নানা জনপথের মানুষ ক্রমেই নি:স্ব হচ্ছে আর্সেনিকমুক্ত পানির আশায়।
বেসরকারী একটি উন্নয়ন সংস্থার জরিপ বলছে গ্রামগুলোর ৯০-৯৫ ভাগ পানিতেই আছে আর্সেনিক কিংবা অত্যাধিক আয়রন। এমন কি গভীর নলকূপেও মেলে আর্সেনিকের দেখা। পানিতে যেখানে আর্সেনিকের সহনিয় মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ শতাংশ, সেখানে মেহেরপুরের প্রায় সব অঞ্চলেই ৩০০ শতাংশের বেশি উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
আলমপুর গ্রামের বাসিন্দা আম্বিয়া খাতুনের কেটে ফেলতে হয়েছে হাতের আঙ্গুল। আর্সেনিকের ক্ষত থেকে ক্যান্সার বাড়বে এ আশঙ্কায় আম্বিয়ার মত অনেকেকেই কেটে ফেলতে হয়েছে হাত-পা আঙুল। ডাক্তারী ভাষায় এ এমন এক রোগ যার কোন চিকিৎসা নেই।
এ আম্বিয়াদের কান্না থামে না অজানা ভয়ে। যে পানি জীবন বাচায়,সে পানিই তাদের বেচে থাকার আতঙ্ক। তবুও তাদের জীবনের জন্য নিত্য যেতে হয় এ পানির সংস্পর্শে।ফলে বাড়ছে সংক্রামন। প্রায় ২ দশক ধরে আর্সেনিক নিয়ে আলোচনা,তবে কারো যেন মনে নেই আম্বিয়াদের কথা। বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার চারিদিকে। এলাকার মানুষকে পানের জন্য ছুটতে হয় নদীতে। কিন্তু সেই পানি পাট পাচানোর জন্য পানের উপযোগি নয়।
কিন্তু নদী বিধৌত বাংলাদেশে পানিতে কেন এতো আর্সেনিক। এমন প্রশ্নের উত্তরে জাতিসংঘের সাবেক এক পরিবেশ বিশেষজ্ঞ বললেন, এটি মানবসৃষ্ট করলেই হয়েছে।
কাজলা নদীর পানি, দেখেই বুঝা যাচ্ছে কতোটা বিষাক্ত দূষিত। কিন্তু বিশুদ্ধ পানির জন্য যখনই গভীর বা অগভীর যেই নলকূপই খোলা হোকনা কেন তা থেকে উঠে আসে আর্সেনিক বিষ। বাধ্য হয়েই পান করতে হয় নদীর এই বিষাক্ত পানি।
প্রতিক্ষণ/এডি/বিএ