আলো ছড়াবে স্বপ্নের মেরিন ড্রাইভ

প্রকাশঃ মার্চ ৩০, ২০১৭ সময়ঃ ৩:০৫ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৬:১৪ অপরাহ্ণ

মুহিববুল্লাহ মুহিব, কক্সবাজার প্রতিনিধি:

পথ চলতে চলতে সাগর, পাহাড় ও ঝর্ণাকে সঙ্গী করার স্বপ্ন আর দূরে নয়। সমুদ্রের কোলঘেঁষে নির্মিত নান্দনিক কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে এগুলেই পূরণ হবে স্বপ্ন।

পাহাড়ের ছায়া মাড়িয়ে মেরিন সড়কটিতে দাঁড়িয়ে সন্ধ্যায় বিশাল সমুদ্রের বুকে সূর্যাস্তের মনোমুগ্ধকর দৃশ্যও দেখা এখন আর কল্পনা নয়।সকাল কিংবা পড়ন্ত বিকালে সড়কের পাশের হিমছড়ি ঝর্ণা ও সৈকত জুড়িয়ে দেয় পর্যটকদের হৃদয়-মন।

কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে নান্দনিক রূপে যোগ হচ্ছে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক। অপার সম্ভাবনাময় সড়টি উন্নত বিশ্বের আদলে নির্মিত। সৈকতের কুল ঘেঁষে তৈরি এই সড়কটি  দেশী-বিদেশী পর্যটকদের বিনোদনে উচ্ছ্বাস বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

রাস্তার এক পাশে পাহাড় এবং অন্যপাশে সমুদ্র। একদিকে পাহাড়ী সবুজের সমারোহ; অন্যদিকে সমুদ্রের নীল জলরাশি।এমন স্বপ্নিল আবহ এ মেরিন ড্রাইভটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে পর্যটকদের কাছে।

এ বিষয়টি মাথায় রেখে কক্সবাজারকে আরো পর্যটকবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন উদ্যেগ নিচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে সড়কটির দৈর্ঘ্য আরও ৩২ কিলোমিটার বাড়িয়ে মায়ানমারের পাশ ঘেঁষে টেকনাফ পর্যন্ত প্রসারিত করেছে সরকার।

সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ৪শত ৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে দীর্ঘ ৮০ কিলোমিটার কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিণ ড্রাইভ সড়কটির নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। গত ১২ ফেব্রুয়ারী কক্সবাজারের একটি অনুষ্ঠানে পরিবহন সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবাইদুল কাদের বলেছেন, আগামী এপ্রিল মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্নের মেরিন ড্রাইভ সড়কটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন। এতে  পর্যটন শিল্প বিকাশে সহায়তার পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড়  সমুদ্র সৈকত ভ্রমণে ভিন্ন স্বাদ যোগ করবে।

প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্যে দেশী-বিদেশী পর্যটকরা অভিভূত হয়ে দীর্ঘ সমুদ্রের বুকে সূর্যাস্তের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে পারবে সহজে। এ  মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৬ ইসিবি।

বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পকে আরো বিকশিত করতে কক্সবাজারকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। নেওয়া হয়েছে পর্যটনবান্ধব কর্মসূচি। তারমধ্যে মেরিন ড্রাইভ সড়ক দেশি-বিদেশি পর্যটকদের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে।সম্প্রতি কক্সবাজারের একটি হোটেলে আয়োজিত সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

পাহাড় আর সমুদ্রের মাঝে মেরিন ড্রাইভের এই রাস্তা পর্যটকদের আকর্ষণ করে

জানা যায়, কক্সবাজারের সঙ্গে টেকনাফকে সংযুক্ত করতে বিদ্যমান ৪৮ কিলোমিটার সাগর ও পাহাড় ঘেরা সড়কটি উন্নয়নে প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০৩ কোটি ২১ লাখ টাকা।

২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সড়কের দৈর্ঘ্য আরো ৩২ কিলোমিটার বাড়ানোর পাশাপাশি ভূমি অধিগ্রহণ সহ আরো বিভিন্ন কাজ অর্ন্তভূক্ত করা হয়। ফলে ব্যয় বেড়ে গিয়ে ৪শত ৫৬ কোটি টাকাতে দাঁড়ায়। এতে মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত।  সড়কটিকে পর্যটক বান্ধব করতে দু’পাশে থাকবে ওয়াকওয়ে।

দেশী-বিদেশী পর্যটকদের সুবিধার্থে সড়ক জুড়ে থাকবে শেড, গাড়ী পার্কিং, চেঞ্জিং রুম। আরো থাকবে ফ্লেক্সিবল পেভমেন্ট।

দীর্ঘ ৮০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ সড়কে ৩টি বড় আরসিসি সেতু, ৪২টি বক্স কালভার্ট, ৩ হাজার মিটার সসার ড্রেন এবং ৫০ হাজার মিটার সিসি ব্লক ও জিও টেক্সটাইলও থাকছে।

৩ ধাপে মেরিন ড্রাইভ সড়কটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রথম ধাপে কলাতলী থেকে ইনানী পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার, দ্বিতীয় ধাপে ইনানী থেকে শীলখালী পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার। মেরিন ড্রাইভ সড়কের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। তৃতীয় ধাপে চলছে শীলখালী থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার সড়কের কাজ।

সংশ্লিষ্টদের মতে, মেরিন ড্রাইভ সড়কটি পর্যটন শিল্প বিকাশের পাশাপাশি মিয়ানমারের সঙ্গে সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নেও অবদান রাখবে।

প্রতিক্ষণ/এডি/রাহা

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G