ইতিহাসের কুখ্যাত খুনের ঘটনা

প্রকাশঃ ডিসেম্বর ১০, ২০১৫ সময়ঃ ৯:১১ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:২১ অপরাহ্ণ

জাহিদ বিন মনির

 

lincolnSUM_1811021cআব্রাহাম লিংকন

১৮৬৫ সালের ১৪ এপ্রিল রাজধানী ওয়াশিংটনের ফোর্ড থিয়েটারে নাটক দেখার সময় জন উইলকস বুথ নামের আততায়ীর হাতে নিহত হন আব্রাহাম লিংকন। তিনি ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম রাষ্ট্রপতি। তিনিই রিপাবলিকান পার্টির প্রথম রাষ্ট্রপতি।

১৮৬১ হতে ১৮৬৫ সাল পর্যন্ত হোয়াইট হাউসে নিয়মিত অফিস করেছেন দাস প্রথার চরম বিরোধী এই নেতা। ১৮৬৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দাস প্রথার অবসানের মাধ্যমে দাসদের মুক্ত করে দেন।  দাস প্রথার অবলুপ্তি ও গৃহযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠ প্রেসিডেন্টদের একজন মনে করা হয় তাকে। লিংকনের মাথার পেছনে গুলি করে পালিয়ে যান উইলকস। এর ১২ দিন পর ভার্জিনিয়ার উত্তরাঞ্চলের একটি খামারের গোলাঘরে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিয়ন সেনাদের হাতে নিহত হন উইলকস। কিন্তু ১৯০৭ সালে প্রকাশিত একটি বইয়ে দাবি করা হয়, আসলে গোলাঘরে যিনি নিহত হয়েছেন তিনি উইলকস নন।

বাদশাহ ফয়সালf1_i97

ভাতিজার বুলেটে প্রাণ হারিয়েছিলেন সৌদি বাদশাহ ফয়সালের। ফয়সাল বিন আব্দুল আজিজ যিনি বাদশাহ ফয়সাল নামেই অধিক পরিচিত। ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সৌদি আরবের বাদশাহ ছিলেন। দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আধুনিক নীতি প্রণয়নসহ বিভিন্ন সংস্কারের কারণে তিনি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তার পররাষ্ট্রনীতির মূলনীতি ছিল ইসলাম ঘেঁষা, সমাজতন্ত্র বিরোধী এবং ফিলিস্তিনের প্রতি সহানুভূতিশীল। ১৯৭৫ সালের ২৫শে মার্চ সৎ ভাইয়ের ছেলে ফয়সাল বিন মুসাইদ তাকে হত্যা করে।

নিজের বৈঠকঘরে যুক্তরাষ্ট্র ফেরত ভাতিজা মুসাইদের সঙ্গে কোলাকুলি করতে যান। এসময় পকেট থেকে রিভলবার বের করে মুসাইদ তাকে হত্যা করে। সেখানে অপেক্ষমান কুয়েতি প্রতিনিধি দলের সামনেই ঘটে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড। প্রথমদিকে মুসাইদকে মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত ঘোষণা করা হলেও চিকিৎসকরা পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করেন ফয়সালকে হত্যা করার সময় মুসাইদ সুস্থ ছিল। শেষ পর্যন্ত বাদশাহ ফয়সালকে হত্যকাণ্ডের দায়ে জনসমক্ষে শিরোশ্ছেদে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

148810-004-F3773930রফিক হারিরি

গাড়ি বিস্ফোরণের মাধ্যমে হত্যা করা হয় রফিক হারিরিকে। রফিক বাহা এল দিন আল হারির সংক্ষেপে রফিক হারিরি নামেই বিশ্বব্যাপী পরিচিত ছিলেন লেবাননের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এই রাজনীতিবিদ দুই মেয়াদে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। প্রথম মেয়াদে ১৯৯২ থেকে ৯৮ এবং দ্বিতীয় মেয়াদে ২০০০ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত লেবাননের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। গৃহযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে লেবাননের বাণিজ্য ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নিজের শক্তিশালী প্রভাব বজায় রাখেন হারিরি। এ সময়ে দেশটির উন্নতির রূপকার হিসেবে মনে করা হয় তাকে। ২০০৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারিতে গাড়ি বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় তার।

এ দুর্ঘটনার জন্য শুরু থেকেই সিরিয়ার শিয়া সরকার ও লেবাননের শিয়া বিদ্রোহী সংগঠন হিজবুল্লাহকে দায়ী করা হয়। তবে উভয় পক্ষ থেকেই তাদের প্রতি অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে জাতিসংঘের করা প্রথম দুটি তদন্ত প্রতিবদনে সিরিয়ার যুক্ত থাকার বিষয়ে শক্তিশালী দাবি তোলা হলেও এখন পর্যন্ত বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়নি।

মহাত্মা গান্ধীGandhi_smiling_R

উগ্র হিন্দুত্ববাদীর গুলিতে নিহত হন মহাত্মা গান্ধী। মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী অন্যতম প্রধান ভারতীয় রাজনীতিবিদ, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রগামী ব্যক্তিদের একজন। ভারতের জাতির জনক এবং অহিংস আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা। এছাড়াও বৃটিশ শাসনামলে তিনি ছিলেন সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা। এর মাধ্যমে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে জনসাধারণের অবাধ্যতা ঘোষিত হয়েছিল। গান্ধী ভারতে এবং বিশ্বজুড়ে মহাত্মা (মহান আত্মা) এবং ভারতে বাপু নামে পরিচিত। ভারত সরকারিভাবে তার সম্মানার্থে তাকে ভারতের জাতির জনক হিসেবে ঘোষণা করেছে । ২ অক্টোবর তার জন্মদিন ভারতে গান্ধী জয়ন্তী হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। তার নিজের পরিধেয় কাপড় ছিল ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় ধুতি এবং শাল যা তিনি নিজেই চরকায় বুনতেন।

১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি গান্ধীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সে সময় তিনি নতুন দিল্লীর বিরলা ভবন মাঝে রাত্রিকালীন পথসভা করছিলেন। তার হত্যাকারী নথুরাম গডসে ছিলেন হিন্দু মৌলবাদী চরমপন্থী সংগঠন হিন্দু মহাসভার আদর্শ দ্বারা অনুপ্রাণিত। ১৫ নভেম্বর ১৯৪৯ সালের পাঞ্জাবের আম্বালা জেলে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

Yitzhak Rabinআইজ্যাক রবিন

ফিলিস্তিনের সঙ্গে শান্তি প্রক্রিয়া চালু করায় প্রাণ দিতে হয় আইজ্যাক রবিনকে। সম্ভবত ইসরায়েলে সবচেয়ে ভদ্র আর নম্র রাজনৈতিক নেতা ছিলেন আইজ্যাক রবিন। কারণ জায়নবাদী ইসরায়েলের এই একমাত্র নেতাকেই দেখা যায় ফিলিস্তিনের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নিতে। আইজ্যাক রবিন দু মেয়াদে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। প্রথমবার ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৭ এবং দ্বিতীয়বার ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সাল। এর আগে ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় তিনি ইসরায়েলি বাহিনীর নেতৃত্ব দেন। তিনি তার দ্বিতীয় মেয়াদকালে, (১৯৯৩ সালে) প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও) এর সঙ্গে অসলো চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির মাধ্যমে মূলত ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা হয়। চুক্তির ফলে গাজা ও পশ্চিম তীরের সীমিত আকারের কিছু অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ পায় ফিলিস্তিনিরা।

এই চুক্তির কারণে ১৯৯৪ সালে ইয়াসির আরাফাত স্বদেশি সিমন পেরেজের সঙ্গে যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান তিনি। এই চুক্তি স্বাক্ষরের পর ইসরায়েলের রক্ষণশীলরা রবিনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করে। শেষ পর্যন্ত এই চুক্তি স্বাক্ষরের দায়েই প্রাণ দিতে হয় তাকে। ১৯৯৫ সালের ৪ নভেম্বর ইগল আমির নামে এক উগ্রপন্থি ইহুদি তাকে হত্যা করে। দেশটির এক আদালত ইগল আমিরকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেন।

জন এফ. কেনেডিjohn-f-kennedy-clothes

১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর কেনেডি খুন হন। জন ফিটজেরাল্ড কেনেডি বা জন এফ. কেনেডি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫তম রাষ্ট্রপতি। সংক্ষেপে যাকে ডাকা হতো জেএফকে নামে। কেনেডি ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৬৩ সালে নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। দিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীতে কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে ডেমোক্র্যাটদের হয়ে রাজনীতিতে জড়ান কেনেডি।

১৯৫৩ থেকে ১৯৬০ পর্যন্ত মার্কিন সিনেটে ডেমক্র্যাটদের প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। ১৯৬০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তৎকালীন রিপাবলিকান উপ-রাষ্ট্রপতি রিচার্ড এম নিক্সনকে পরাজিত করেন। তিনি একাধারে থিওডর রুজভেল্ডের পর যুক্তরাষ্ট্রের দিতীয় কনিষ্ঠতম রাষ্ট্রপতি, বিশ শতকে জন্ম নেয়া প্রথম রাষ্ট্রপতি, যুক্তরাষ্ট্রের সর্বকনিষ্ঠ নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি এবং প্রথম আইরিশ আমেরিকান রাষ্ট্রপতি। তিনিই যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র রাষ্ট্রপতি যার ঝুলিতে পুলিৎজার পুরস্কার রয়েছে। ১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর কেনেডি আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। লি হার্ভি অসওয়াল্ডকে এই ঘটনার জন্য অভিযুক্ত করা হয়। কিন্তু তার বিচার করা সম্ভব হয়নি কারণ দুইদিন পরেই জ্যাক রুবি নামক একজনের গুলিতে হার্ভি নিহত হন।


লুথার কিং

বুলেটের আঘাতে ৩৯ বছর বয়সে ঝরে যায় বর্ণবাদ বিরোধী নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের প্রাণ। কিংবদন্তি আফ্রিকান-আমেরিকান মানবাধিকার কর্মী মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র ১৯২৯ সালের ১৫ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন।মার্টিন লুথার কিং সিনিয়র এবং আলবার্টা উইলিয়ামস কিং দম্পতির ঘরে তার জন্ম। তিনি গান্ধীর অহিংস আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। এর ফলে ১৯৫৯ সালে গান্ধীর জন্মস্থান ভারত সফর করেন। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় অহিংস আন্দোলনের জন্য ১৯৬৪ সালে তিনি নোবেল পুরস্কারে ভূষিত BRAND_BIO_BIO_Martin-Luther-King-Jr-Mini-Biography_0_172243_SF_HD_768x432-16x9হন।


১৯৬৩ সালে ওয়াশিংটনে কৃষ্ণাঙ্গদের অর্থনৈতিক মুক্তি, চাকরির সমতা অর্জন এবং সর্বক্ষেত্রে সমান অধিকার লক্ষ্যে কিং বেয়ারড রাস্তিন এবং আরো ছয়টি সংগঠনের সহায়তায় এক বিশাল সমাবেশের আয়োজন করেন। প্রায় তিন লাখ মানুষের উপস্থিতিতে কিং তার সেই বিখ্যাত ‘আই হেভ এ ড্রিম’ শীর্ষক ভাষণ দেন যা এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ ভাষণগুলোর মধ্যে একটা বিবেচিত হয় ।

শেষের দিকে দারিদ্র্যমোচন এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধের দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চেয়েছিলেন। ১৯৬৭ সালের ৪ এপ্রিল নিউইয়র্কে দেয়া এক ভাষণে তিনি এই যুদ্ধের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘আমেরিকানরা ভিয়েতনামকে তাদের কলোনি বানানোর যে বাসনা করেছে তা পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ঘৃণ্য আর বর্বরোচিত একটা অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকবে।’ ১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল আততায়ীর বুলেট মানবতাবাদী এই নেতার প্রাণ কেড়ে নেয়। কিংয়ের মৃত্যুর দুই মাস পর তার হত্যাকারী জেমস আর্ল রে’কে লন্ডন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৬৯ সালের ১০ মার্চ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় রে। সীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়ার কারণেই মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে তাকে ৯৯ বছরের সাজা দেন যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত।

ইন্দিরা গান্ধী60019921-indira

দেহরক্ষীদের গুলিতে প্রাণ হারান ইন্দিরা গান্ধী। ইন্ধিরা প্রিয়দর্শিনী গান্ধী বিশ্বব্যাপী যার পরিচিতি ইন্দিরা গান্ধী নামে। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর কন্যা ইন্দিরা ছিলেন ভারতের তৃতীয় এবং প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। তার নেতৃত্বে ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত টানা তিন মেয়াদে ভারত শাসন করে কংগ্রেস। এরপর ১৯৮৪ সালেও আবার প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসেন ইন্দিরা। শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শ্রীমাভো বন্দরনায়েকের পর বিশ্বে তিনিই প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত সমস্যা মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে বেশ কৌশলী ভূমিকা পালন করেন তিনি। এ জন্য তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের (রাশিয়া) সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন তিনি। এছাড়াও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ইন্দিরা গান্ধী। ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর সকালে দুই দেহরক্ষীর গুলিতে নিহত হন ইন্দিরা গান্ধী। ওই দিন সকালে প্রধানন্ত্রীর বাসভবনের ভেতরেই একটি উদ্যান পথের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তার দুই শিখ দেহরক্ষীর গুলিতে মৃত্যু হয় তার। ১৯৮৪ সালেই শিখদের পবিত্র তীর্থস্থান স্বর্ণমন্দিরে সেনা অভিযান চালায় ইন্দিরা সরকার। এতে অসংখ্য শিখের মৃত্যুর পাশাপাশি নিখোঁজও হন অনেকে। এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই বিয়ন্ত সিং ও সৎবন্ত সিং নামের ওই দুই দেহরক্ষী ইন্দিরাকে লক্ষ্য করে ৩৩ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। বিয়ন্ত সিংহ ঘটনাস্থলেই অন্যান্য দেহরক্ষীদের গুলিতে নিহত হন। সৎবন্ত সিং এবং হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী কেহার সিংকে ফাঁসি দেয়া হয়।

Shek-Mujibশেখ মুজিবুর রহমান

১৫ আগস্ট সপরিবারে নিহত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ রাষ্ট্রের রূপকার। বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। জনসাধারণের কাছে তিনি ‘শেখ মুজিব’ এবং ‘শেখ সাহেব’ হিসেবে বেশি পরিচিত এবং তার উপাধি ‘বঙ্গবন্ধু’।

১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকারের সাথে যোগসাজশ ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র’ মামলায় তার বিচার শুরু হয়। পরবর্তীতে তিনি তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয় অর্জন করে। তথাপি তাকে সরকার গঠনের সুযোগ দেয়া হয়নি। পাকিস্তানের নতুন সরকার গঠন নিয়ে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান এবং জুলফিকার আলী ভুট্টোর সঙ্গে শেখ মুজিবের আলোচনা বিফলে যাওয়ার পর ১৯৭১ সালের মার্চ ২৫ মধ্যরাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঢাকা শহরে গণহত্যা শুরু করে। ওই রাতেই তাকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়।

৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামে স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়। ১০ এপ্রিল ১৯৭২ শেখ মুজিব পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। পরবর্তীকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। হত্যাকাণ্ডের ৩৫ বছর পর বঙ্গবন্ধুর ৫ খুনির ফাঁসি কার্যকর হয়। বঙ্গবন্ধুর বাকি খুনিরা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বসবাস করছে। আইনি জটিলতা ও কূটনৈতিক তৎপরতার অভাবে তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি।

রাজীব গান্ধী

image_1302_197943১৯৯১ সালের ২১ মে জনসভায় জঙ্গি আক্রমণে নিহত হন। রাজীব রত্ন গান্ধী ছিলেন ভারতের সপ্তম প্রধানমন্ত্রী। তিনি ইন্দিরা গান্ধী ও ফিরোজ গান্ধী দম্পতির জ্যেষ্ঠ পুত্র। ১৯৮৪ সালের ৩১শে অক্টোবর মায়ের মৃত্যুর পর চল্লিশ বছর বয়সে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ভার নেন। ১৯৮৯ সালের ২ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে পরাজয়ের আগ পর্যন্ত তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন ইতালীয় বংশোদ্ভূত সোনিয়া মাইনোর সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। পরে সোনিয়াকে বিয়েও করেন তিনি। সেই সোনিয়া মাইনোই বর্তমানে সোনিয়া গান্ধী ও গান্ধী পরিবারের কর্ণধার। রাজীব গান্ধী লাইসেন্স প্রথা, শুল্ক ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক কার্যকলাপের জন্য অনুমতি প্রদানের নিয়মনীতি ঢেলে সাজান। টেলিযোগাযোগ ও শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ তথা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রসারের ক্ষেত্রে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতিসাধন প্রভৃতি নানা কাজের কারণে প্রশংসিত হন।

তবে ১৯৮৭ সালের মাঝামাঝি বোফর্স কেলেঙ্কারি তার সৎ ও দুর্নীতিমুক্ত ভাবমূর্তিটি নস্যাৎ করে দেয়। ফলে ১৯৮৯ সালের নির্বাচনে ভরাডুবি ঘটে তার দল কংগ্রেসের। ১৯৮৭ সালে শ্রীলঙ্কায় ভারতীয় শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রেরণ করেন। এই বাহিনীর সঙ্গে লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলম (এলটিটিই) জঙ্গিগোষ্ঠীর সম্মুখ সমরের জন্য তাকেই দায়ী করা হয়। ১৯৯১ সালের ২১ মে তামিলনাড়ুতে একটি নির্বাচনী জনসভায় এলটিটিই জঙ্গির আক্রমণে নিহত হন তিনি। ওই ঘটনায় শ্রীলঙ্কার তামিল টাইগারদের সাত সদস্য শান্তন, পেরারিবালন, মুরুগন, নলিনী, রবার্ট পায়াস, জয়কুমার এবং রবিচন্দ্রনকে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি দেয়া হয়। ১৯৯৮ সালে তিন আসামি শান্তন, পেরারিবালন ও মুরুগনকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। আসামিরা ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলেও ফাঁসির আদেশ বহাল থাকে। আর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন নলিনী, রবার্ট পায়াস, জয়কুমার এবং রবিচন্দ্রন। পরে ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে ফাঁসি এড়ান তিন আসামি শান্তন, পেরারিবালন ও মুরুগন।

benjir bhuttoবেনজির ভুট্টো

২০০৭ সালে আততায়ীর বুলেটে নিহত হন বেনজির ভুট্টো। পাকিস্তানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বেনজির ভুট্টো। পাকিস্তান ছাড়াও মুসলিম বিশ্বে প্রথম নারী হিসেবে সরকার প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন ভুট্টো কন্যা। ডটার অব দ্য ইস্ট খ্যাত বেনজির দুই মেয়াদে ১৯৮৮-১৯৯০ এবং ১৯৯৩-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর বড় মেয়ে এবং পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির স্ত্রী। সামরিক শাসন কবলিত পাকিস্তানে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনের ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

পাকিস্তান ছাড়াও গত শতাব্দীতে বিশ্বব্যাপী যে সকল নারী নেতৃত্বের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেছে নতাদের মধ্যে তিনি একজন। ২০০৭ সালে রাওয়ালপিন্ডি শহরে পিপির একটি নির্বাচনী র‍্যালিতে অংশ নেন ভুট্টো। এ সময় বুলেট প্রুফ গাড়ি থেকে সমর্থকদের উদ্দেশে হাত নাড়ার জন্য মাথা বের করেন তিনি। সে সময় তাকে উদ্দেশ করে কেউ একজন গুলি ছুড়লে গুরুতর আহত হন ভুট্টো। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে রাওয়াপিন্ডি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই স্থানীয় সময় ৬টা ১৬ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।

প্রতিক্ষণ/এডি/জেবিএম

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G