ইফতারের সীমাহীন গুরুত্ব ও ফযীলত

প্রকাশঃ জুন ১৬, ২০১৬ সময়ঃ ১২:৫০ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১২:৫৬ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ

7745

“রোজাদারের জন্য দুটি খুশি। একটি ইফতারের সময়, অপরটি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়।”
– হযরত মুহাম্মদ (সঃ)

চলছে রমযান মাস। মুসলমানদের জন্য বহু আরাধ্য বরকতময় মাস এই রমযান। দেখতে দেখতে কেটে গেছে এই পবিত্র মাসের ৯টি দিন। রমযানে মুসলমানদের খাদ্যাভ্যাস বদলে যায়। দুপুরের খাবার ও নাস্তার বদলে থাকে ইফতার ও সেহরি। ইফতার ও সেহরি শুধুই খাদ্য গ্রহণের দুটি সময় নয়। বরং এদের রয়েছে বিশেষ ধর্মীয় গুরুত্ব ও ফযীলত। আজ আমরা জেনে নেবো, ইসলামে ইফতারকে কতটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়েছে এবং সঠিকভাবে ইফতার গ্রহণের ফযীলত।

ইফতার শব্দটি আরবি ফুতুর শব্দ থেকে আগত। ইফতার/ ফুতুর শব্দের অর্থ হচ্ছে নাস্তা করা, হালকা খাবার গ্রহণ করা, সকাল ও বিকেলের ছোট্ট খাবারসহ ইত্যাদি। অপর অর্থে ইফতার শব্দের অর্থ হচ্ছে বিরতি ভঙ্গ করা অথবা দিন ও রাতের মধ্যবর্তী সময়ের হালকা খাবার। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় রোজা ভঙ্গের জন্য সূর্যাস্তের পর সন্ধ্যা বেলায় যে ছোট হালকা খাবার, নাস্তা খাওয়া হয় তাকে ইফতার বলে।

মানুষের স্বভাবই এই যে, সে তার কাজের পুরুস্কার চায়, পরিশ্রমের প্রতিদান চায়। তাই একজন মুসলমান যখন আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের লক্ষ্যে সারাদিন রোজা রাখে; পানাহার, ইন্দ্রিয় লিঞ্ঝা, ভোগ বিলাস, লোভ-লালসা প্রভৃতি সর্বপ্রকার পাপ কাজ থেকে বিরত থাকে, তখন দিনান্তে তার মধ্যে প্রতিদান লাভের একটি আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় রোযা বা সিয়াম পালনকারীর জন্য মহান আল্লাহতায়ালা পুরস্কারস্বরূপ ইফতারের ব্যবস্থা রেখেছেন। সে জন্যই রাসূল (সাঃ) রোজাদারের দুটো খুশির একটি হিসেবে ইফতারকে অভিহিত করেছেন। মহানবী (সাঃ) আরো বলেন, ইফতারের মুহূর্তে আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দার ওপর সন্তুষ্ট হন এবং গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন। দোয়া কবুল হওয়ার এক অতুলনীয় সময় ইফতার। রাসুল (সাঃ) বলেন, “ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া ফেরত দেয়া হয় না। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত ইফতারের সময় অধিক পরিমাণে দোয়া করা।”

85e2d7486a4622db89a937f885698d56-02

এ ছাড়া অপর একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রোজাদারের দোয়া আল্লাহর নিকট এতই গুরুত্বপূর্ণ যে তিনি রমজানের সময় আরশ বহনকারী ফেরেশতাদের উদ্দেশে ঘোষণা করেন, “রমজানে তোমাদের পূর্বের দায়িত্ব মওকুফ করা হলো, এবং নতুন দায়িত্বের আদেশ করা হলো, তা হলো আমার রোজাদার বান্দাগণ যখন কোনো দোয়া মোনাজাত করবে, তখন তোমরা আমিন! আমিন!! বলতে থাকবে।” এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় আরশ বহন করার দায়িত্ব পালনের চেয়েও রোজাদারের দোয়ার সঙ্গে আমিন! আমিন!! বলা আল্লাহর কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। তাই ইফতারের সময়সহ রমজানের দিনে ও রাতে অধিক পরিমাণে দোয়া মোনাজাত করা অনেক সওয়াব ও সৌভাগ্যের বিষয়।

শুধু নিজে সঠিক নিয়মে, সঠিক নিয়তে ইফতার করাই সওয়াবের কাজ নয়; বরং অন্য রোযাদারকে ইফতার করানোর মধ্যেও মুমিনদের জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে। সহজ উপায়ে অধিক সওয়াব অর্জনের অন্যতম উপায় হচ্ছে রোযাদার ব্যক্তিকে ইফতার করানো। হাদীসে বর্ণিত আছে, হাশরের দিন একজন মুমিন ব্যক্তি তার আমলনামায় অসংখ্য রোজার সওয়াব দেখতে পেয়ে আশ্চর্য হয়ে বলবেন, আমি তো এত রোজা রাখিনি এবং এত অধিক হায়াতও পাইনি। তখন ওই আমলগুলো একটি প্রতীক হয়ে বলবে, রোজাদারকে ইফতার করানোর প্রতিদানে তার সমপরিমাণ সওয়াব হয়ে আজ এ বিপদের সময় তোমরা সাহার্যার্থে আমার আগমন। তাই প্রত্যেকের উচিত নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী রোজাদার ব্যক্তিকে ইফতার করানো।
এছাড়া, যে ব্যক্তি রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে। ওই রোজাদারের সওয়াবের সমপরিমাণ সওয়াব সে লাভ করবে। তবে ওই রোজাদারের সওয়াব কম হবে না। যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্তিসহকারে ইফতার (আহার) করাবে, আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করার পূর্ব পর্যন্ত তৃষ্ণার্ত করবেন না।

iftar-dates

ইফতারের কিছুক্ষণ পূর্বেই ইফতার সামনে নিয়ে অপেক্ষা করা এবং যথাসময়ে ইফতার করা সুন্নত। সূর্যাস্তের পরপর আযান দেওয়ার সাথে সাথেই ইফতার করতে হবে। এ বিষয়ে আল্লাহপাক বলেছেন, “আমরা বান্দাদের মধ্যে অধিকতর প্রিয় তারাই যারা তাড়াতাড়ি ইফতার করে।” তাড়াতাড়ি ইফতার করা সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেন, “মানুষ যতদিন তাড়াতাড়ি ইফতার করবে ততদিন তাদের কল্যাণ হতে থাকবে।” রাসূল (সাঃ) আরো বলেন, আল্লাহতায়ালা তিনটি কাজ পছন্দ করেন।
১• দ্রুত ইফতার করা
২• দেরিতে সেহ্‌রি খাওয়া,
৩• নামাজে একহাতের ওপর অন্যহাত রেখে দাঁড়ানো।
আমাদের মাঝে কিছু কিছু মানুষ আছে ইফতারের সময় হলেও কিছুটা দেরি করতে থাকে, এর দ্বারা তারা নিজেকে বেশি পরহেজগার ও মুত্তাকি বলে গণ্য করে থাকেন। নিঃসন্দেহে ইসলাম ইবাদতকে সহজতর করেছে, যাতে মানুষের মন-প্রাণ ইবাদতের প্রতি আকৃষ্ট হয়। রাসুলে কারিম (সা.) আরও ইরশাদ করেছেন, ‘আমার উম্মত ততদিন পর্যন্ত অবশ্যই সুন্নতের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে, যতদিন পর্যন্ত তারা ইফতার করার জন্য নক্ষত্র উদয়ের অপেক্ষা না করবে।’ মূলত আগের যুগে যেসব সম্প্রদায়ের ওপর রোজা ফরজ ছিল তারা ইফতার করতে বিলম্ব করায় ইফতারের ফজিলত থেকে বঞ্চিত হতো। এই উম্মত যেন সে বঞ্চনার শিকার না হয়—বিভিন্ন হাদিসের মাধ্যমে নবীজী (সা.) সেদিকেই সবাইকে সতর্ক করেছেন।

মহানবী (সাঃ) ইফতারের সময় এই দোয়া পড়তেন, “আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলাইকা তাওয়াক্কুলতু ওয়াআলা রিজিককা আফাতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমানি।” অর্থাৎ, “হে আল্লাহ আমি তোমারই জন্যই রোজা রেখেছি, তোমার দয়ার ওপর ভরসা করছি , আর তোমার দেয়া রিজিক দ্বারা ইফতার করছি। সবকিছু তোমারই রহমত এবং তুমিই শ্রেষ্ঠ দয়াবান।” আমিন!
হাদিস শরীফের ভাষ্য অনুযায়ী, ইফতারের শুরুতে খেজুর খাওয়া সুন্নত। তা না থাকলে পানি পান করা যেতে পারে। তবে ইফতারে অপচয় ও অসংযমী আহার-আয়োজন রমযানের মূল্যবোধপরিপন্থী। তাই সকলেরই ইফতারের আয়োজনে সংযমের পরিচয় দেওয়া উচিত।

 

 

প্রতিক্ষণ/এডি/সাদিয়া

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G