এই বর্ষায় ঘুরে আসুন হাওরের রানী অস্টগ্রাম

প্রকাশঃ আগস্ট ২, ২০১৭ সময়ঃ ৮:৫৯ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:১০ অপরাহ্ণ

গোলাম রসূল:

বাংলাদেশের মানুষ মাত্রই পানি পছন্দ করে। পানির সৌন্দর্য এদেশের মানুষকে ব্যাপক টানে। আর তাইত সুযোগ পেলেই প্রতিবছর লাখো মানুষ ছুটে যায় সাগর, নদী আর হাওরের পানি দেখতে। আর বর্ষাকালে হাওরের পানির সৌন্দর্যের কাছে সাগরের দিগন্ত বিস্তৃত নীল জলরাশিও হার মানে। তাই এই বর্ষায় ঘুরে আসুন হাওর, উপভোগ করুন নজরকাড়া সৌন্দর্য। তবে এবার টাঙ্গুয়ার হাওর, হাকালুকি কিংবা বাইক্কা বিল নয়। এবার হাওরের রানীখ্যাত অস্টগ্রামে।

অস্টগ্রামের চারপাশে রয়েছে অনেক নদ নদী, বিল আর হাওর-বাওর। এর কোল আর সীমানা ঘেষে রয়েছে ধলেশ্বরী, মেঘনা, বরাক, কালনী ও ঘোড়াউতরা নদী। বিলের মধ্যে রয়েছে ডোড্ডার বিল, পদ্মা বিল, মান্দার বিল, টোপা বিল, বাদ্রা বিল, চামিল বিল, মামদা বিল, মাটিহাটা বিল, ধোপা বিল, মোজানা বিল, বলিয়ান বিল, মনখোলা বিল। আর জোয়ানশাহী হাওরের অপার সৌন্দর্য দেখলে যেকোন পর্যটক দ্বিতীয়বার এখানে আসতে বাধ্য।

ভৈরব, কুলিয়ারচর, ও বাজিতপুর থেকে লঞ্চ, ট্রলার আর স্পীডবোটে অস্টগ্রামে যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এর যেকোন একটিতে চড়ে আপনি অস্টগ্রামে যেতে পারেন। হুমায়ূনপুরের কাছাকাছি এলেই আপনি পেয়ে যাবেন অপার সৌন্দর্যের খনি। হাওরের অপরুপ দৃশ্য আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকবে। আর আপনি আস্তে আস্তে পৌছে যাবেন সুবিশাল হাওরের সৌন্দর্যের অতল গভীরে।

অস্টগ্রাম নৌকাঘাটে ছোট, মাঝারি আর বড় আকারের ট্রলার সবসময়ই ভাড়া পাওয়া যায়। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী এর যেকোন একটি বেছে নিবেন। দূরত্ব আর সময় অনুযায়ী ট্রলারের ভাড়া নেবে। ভাড়া সাধ্যের মধ্যেই। তবে দরদাম করে নেয়া ভাল। এবার ছুটে চলুন হাওর পানে। বর্ষার পানিতে এখানকার গ্রামগুলিকে ছোট ছোট দ্বীপের মত মনে হবে আপনার কাছে। দ্বীপের চারপাশে শুধু থৈ থৈ পানি আর পানি। পানিরাজ্যের রাজকুমার আর রাজকুমারীরা আপনাকে স্বাগত জানাবে দুহাত বাড়িয়ে। আপনি পাবেন এক অনাবিল আনন্দ আর উচ্ছল অনুভূতি। আপনার চোখের সামনে শুধুই সুন্দর, সুন্দর আর সুন্দর…।

অস্টগ্রামে থাকার জন্য রয়েছে জেলা পরিষদ ডাকবাংলো আর হোটেল। ভাড়া নামমাত্র। ডাকবাংলোয় থাকতে চাইলে আগে থেকেই যোগাযোগ করে নিলে ভাল। খাওয়ার জন্য রয়েছে স্থানীয় কিছু হোটেল। যেখানে পাবেন হাওরের বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু মাছ। যেগুলো শহরে সচরাচর মেলে না।

হাতে সময় থাকলে এখানে আপনি কয়েকটি দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখতে পারেন। অস্টগ্রাম সদর থেকে দেওঘর ইউনিয়নের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনকারী নবনির্মিত বর্তমান রাস্ট্রপতি আব্দুল হামিদ সেতু এরমধ্যে অন্যতম। এই সেতুতে দাড়িয়ে চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করে আপনি মুগ্ধ হবেন একথা নিদ্বিধায় বলা যায়।

ঘুরে আসতে পারেন ঐতিহাসিক কুতুব মসজিদ বা কুতুব শাহ মসজিদ। এটি একটি প্রত্মতাত্ত্বিক নিদর্শন ও বাংলাদেশের একটি প্রাচীন মসজিদ। মসজিদটি সুলতানী আমলে নির্মিত বলে ধারণা করা হয়।

মসজিদটির পাশেই একটি কবর রয়েছে যা কুতুব শাহ-এর বলে ধারণা করা হয়। তার নামানুসারে মসজিদটিকে কুতুব মসজিদ বা কুতুব শাহ মসজিদ বলে ডাকা হয়। ১৯০৯ সালে তৎকালীন প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তর এটিকে সংরক্ষিত হিসেবে নথিভুক্ত করে।

কুতুব মসজিদের বাইরের দেয়ালে বিভিন্ন নকশা করা রয়েছে। এ মসজিদটির ছাদের কার্নিশ বক্রাকার। তৎকালীন ময়মনসিংহ অঞ্চলের এটিই টিকে থাকা সুলতানী আমলের সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদ বলে ধারণা করা হয়।

এছাড়া দেখতে পারেন কাস্তুলের পাথরের মসজিদ, কাস্তুল ঈশা খাঁ-মানসিংহ যুদ্ধস্থল, মসজিদজাম ব্রহ্মাণী মন্দির, হাবিলী বাড়ি, বাঙ্গালপাড়া চৌদ্দমাদালের মন্দির, পাওনের হিন্দুমঠ, যেটির চূঁড়া পাকসেনারা গুলি করে উড়িয়ে দিয়েছিল বলে জানা যায়। চাইলে অস্টগ্রাম রোটারী ডিগ্রী কলেজও দেখে আসতে পারেন। কলেজের নান্দনিক সৌন্দর্য আর অধ্যক্ষ মো: মোজতাবা আরিফ খানের আন্তরিক ও অতিথিবৎসল ব্যবহারে আপনি বিমোহিত হবেন।

অস্টগ্রামের পনির দেশখ্যাত। কিনে নিয়ে যাবেন অবশ্যই। এছাড়া ইকরদিয়ার মুরালিও বর্তমানে খুব জনপ্রিয়। খেতে চাইলে চলে যাবেন ইকরদিয়ায়। অস্টগ্রাম ভ্রমণে আপনি অন্যরকম আনন্দ পাবেন। তাই এই বর্ষায় ঘুরে আসুন হাওরের রানী অস্টগ্রাম।

লেখক: সাংবাদিক, হাওরের সন্তান।

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

September 2024
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
20G