এখনও কি ঘুম ভাঙার সময় হয়নি?
শারমিন আকতার
শেয়ালের কাছে মুরগী রাখতে দিলে কী হয় জানেন তো? ঠিক তেমনি আমাদের দেশের রক্ষকরাই ঐ শেয়ালের মতো প্রতিনিয়ত ভক্ষণ করছেন ভক্ষকের মতো। এই ছবিটা দেখুন, চেয়ে চেয়ে দেখছে চারজন তরতাজা তরুণ নও জোয়ান পুলিশ; আর একজন বলিষ্ঠ দেহের অধিকারী পুলিশ এলোপাথারি মারছেন একটা অসহায় শিশুকে! যেন হাতির পায়ে চামচিকা!
সাবাস পুলিশ ভাই, অবসরেও নিজের শক্তিমত্তার চর্চা করে যাওয়ার জন্য। আর অবসরে বসে বসে প্রামাণ্য চিত্র দেখে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য আপনাদেরকেও সেলুট জানাই। এমন সাহসী, অকুতভয়ী, শক্তিমান, নির্মম পুলিশ অফিসার যখন এদেশে আছেন; তখন আর দু:চিন্তা করার কিছু আছে অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে?
হায় আমার স্বদেশ মাতা, আপনার মাথাব্যথার কারণ হওয়ার জন্য আর কি কিছু প্রয়োজন আছে? এদের হাতেই নাকি আমাদের নিরাপত্তার ভার দেওয়া হয়েছে! ভাগ্যিস ও ছেলে ছিল; তাই শুধু মার খেয়েই শেষ হল।
একবার ভাবুনতো, যদি মেয়ে হতো তাহলে কী কী হতে পারতো তার সাথে? আবার সুনিপুণ একতার শক্তিতে বলিয়ান হয়ে সত্যকে বাক্সবন্দিও হতে হতো। সেক্ষেত্রে ঐ নাম না জানা ছেলে শিশুটা শুধু মার খেয়েছে; এ আর এমন কী, তাই না?
এদের শাস্তি কে দেবে এই বাংলার মাটিতে? এরাতো কুমিরছানা! কেউ বিচার চায়লে তাকেই কামড়ের আঘাতে ছিন্নভিন্ন করে দেবে বড় কুমিরের দলবল।
এমন দেশটি কোথাও পাবে নাকো তুমি। থামেন থামেন, আর বলবেন না। এটুকু অক্ষরে অক্ষরে সত্যি। আর বাকিটা শুধুই গানের কলি মাত্র। ভুলে যান একথা, ‘সকল দেশের সেরা সে যে আমার জন্মভুমি’।
আমরা বড় অসহায় জনগণ। কেউ কাটে এধারে আর কেউ কাটে ওধারে। আমরা এতটাই অভাগা যে সাগরের দিকে তাকালে সেও মুখ ফিরিয়ে নেয়। সব সম্ভবের দেশে আমরা না পারি নিশ্বাস নিতে; না পারি উদ্বাস্তু হয়ে পালাতে। হয়তো এই শিশুটা আজ যে নির্মমতার শিকার হয়েছে; কাল এখান থেকেই জন্ম নেবে এক ক্ষিপ্ত আহত বাঘের।
আমরা আমাদের বাংলা চলচ্চিত্র নিয়ে প্রচুর হাসাহাসি করি, না দেখার কথা বলে গর্ব করি। হিন্দী গানের জলসা সাজিয়ে উদোম নৃত্যে মেতে উঠি। অথচ একটু লক্ষ করলে দেখবেন, আমাদের চলচ্চিত্রের কাহিনীচিত্র ষোলোআনায় সত্যি! মিলিয়ে নেবেন, তাহলেই সত্য-মিথ্যার প্রভেদটা আশা করি বুঝবেন। সে তর্কে যাওয়া আমার উদ্দেশ্য নয়। আমি এটাই বলতে চাইছিলাম যে, আজকের এই অসহায় শিশুটি কাল যদি কোনো অপরাধে জড়িয়ে পড়ে কিংবা রক্ষকদের পায়ের তলায় আনবে বলে শপথ করে বিপথে পা বাড়ায়; তাহলে আমি বা আমরা কাকে অপরাধী বলব?
সে গভীর ঘটনার পেছনের সত্যটা ভাবার সময় এসে গেছে। কখন জাগবো আমরা? কবি নজরুলের কথা বড় বেশি মনে পড়ছে। যাঁর জীবনটাই গেল প্রতিবাদ করতে করতে। তাঁর ভাষায় বলেতে চাই, “আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে?”
=======