এবার ডুবল শনির হাওর, বাড়ল কৃষকের কান্না

প্রকাশঃ এপ্রিল ২৩, ২০১৭ সময়ঃ ১:৫৪ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ২:৪৯ অপরাহ্ণ

রাজন চন্দ, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:

হাওর পাড়ের শতশত মানুষের দিন রাতের পরিশ্রমকে ব্যর্থ করে অবশেষে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বৃহৎ শনির হাওর ডুবে গেছে।

রবিবার ভোরে হাওরপাড়ের সাহেবনগরের পূর্বপাশের বাঁধ ও জালখালি বাঁধ ভেঙে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে যায়। এতে চারটি উপজেলায় ৫০টিরও বেশি গ্রামের মানুষের মধ্যে চলছে হাহাকার।

গত দুই সপ্তাহে সুনামগঞ্জের সবকটি হাওর তলিয়ে যাওয়ার পর একমাত্র ভরসা ছিল শনির হাওর। গত পাঁচ দিন ধরে কৃষকরা পালাক্রমে কেউ বাঁধে কাজ করছিলেন, কেউ জমির কাঁচাপাকা ধান কাটার চেষ্টা করছিলেন। শেষ পর্যন্ত এই হাওরটিকেও রক্ষা করা গেল না।

জেলার তাহিরপুর উপজেলার চারটি ইউনিয়ন, জামালগঞ্জ ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার কিছু অংশ নিয়ে শনির হাওরের অবস্থান। এ হাওরের তাহিরপুর অংশে আট হাজার হেক্টও জমি রয়েছে। অন্য দুই উপজেলায় পড়েছে বাকি জমি। ২৫ দিন ধরে তিন উপজেলারই হাজার হাজার কৃষক স্বেচ্ছাশ্রমে শনির হাওরের তিন কিলোমিটার বাঁধ রক্ষায় প্রাণপণ লড়াই করছিলেন। তারা বস্তা দিয়ে বাঁধ উঁচু করা, ক্লোজার বাঁধ রক্ষার জন্য পালাক্রমে ২৪ ঘন্টাই বাঁধে ছিলেন।

হাওর পাড়ের নোয়ানগর গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদির কাঁদতে কাঁদতে ডুবে যাওয়া জমির কাঁচা ধান মুখে দিয়ে চিবুনি দিচ্ছিলেন। বিলাপ করে এ সময় তিনি বলছিলেন, ‘আল্লায় আমারে কেনে পাইন্নে ভাসাইয়া নেয় না, বাড়িত গিয়া বচ্ছা কাচ্ছারে (ছেলে মেয়েদের) কিতা খানি দিতাম।’

কান্না শুধু আব্দুল কাদিরেরই নয়, শনির হাওরপাড়ের বারুঙ্কা, লোহাচুরা, আনোয়ারপুর, চিকসা, বীরনগর, জয়নগর, ধুতমা, উজান তাহিরপুর, মধ্যতাহিরপুর, ভাটি তাহিরপুর, ঠাকুর হাটি, গোবিন্দশ্রী, শাহগঞ্জ, শ্রীপুর, নিশ্চিন্তপুর, ইকরামপুর, নোয়ানগর, মারালা, সাহেবনগর, গোপালপুর, রামজীবনপুর, পৈ-ুপ, জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলী, রাধানগর, ইসলামপুর, মসলঘাট, বিশ্বম্বরপুর উপজেলার শাহপুর, বসন্তপুর, ধাওয়া, পাঁচগাওসহ ৫০টির বেশি গ্রামের মানুষের।

শনি হাওর পাড়ের কৃষক সেলিম আখঞ্জী বলেন, আমাদের শেষ সম্ভল ছিল শনি হাওর কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটিও চলে গেল, সারা বছর চলব কিভাবে তাই ভাবছি।
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুছ ছালাম বলেন, শনি হাওরের বাঁধ ভেঙ্গে প্রায় ৮ হাজার হেক্টর বোরো জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল জানান, সাহেবনগরের পূর্বপাশের বাঁধ ও জালখালি বাঁধটি পাউবো সময়মত মূল বাঁধ হতে তিন ফুট উঁচু করে দিলে এই সমস্যা হতো না। তিনি বলেন, ‘হাওরপাড়ের কৃষকদের নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে আমি ২৫দিন ধরে কাজ করেছি।এ হাওরটি তলিয়ে যাওয়ার দায়ও পাউবো এড়াতে পারবে না।’

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বললেন, বাঁধ ভেঙে শনির হাওর তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা করতে প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগই গ্রহণ করবে উপজেলা প্রশাসন।

সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, বর্তমান সরকার কৃষকবান্ধব। কৃষকদের সকল দুর্যোগ ও সমস্যা সমাধানে সকল কৃষকদের কৃষি ঋণ মওকুফসহ নানান উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।

প্রতিক্ষণ/এডি/সাই

 

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

September 2024
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
20G