জহির উদ্দিন মিশু
সরকারের লাইসেন্স নবায়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে চলছে বেশ কিছু এমএলএম কোম্পানি। এরমধ্যে এমএক্সএন মডার্ন হারবাল ফুড, ওয়াল্ড মিশন ২১, স্বাধীন অনলাইন পাবলিক লিমিটেড এবং রিচ বিজনেস সিস্টেম এই চার বহুস্তর বিপণন(এমএলএম) কোম্পানি পন্য বিপনন ও বিক্রির দিক দিয়ে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। মূলত সরকার লাইসেন্স দেয়ার পর থেকে এই কোম্পানিগুলোর প্রতি মানুষের বেশ ঝোঁক দেখা যায়। এ চারটি কোম্পানিকে ২০১৪ সালের মার্চে এমএলএম ব্যবসা করার লাইসেন্স পায় যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের কার্যালয় (রেজসকো) থেকে।
কিন্তু সম্প্রতি বহুস্তর বিপণন(এমএলএম) কোম্পানি নিয়ে বেশ সমালোচনা চলছে। একদিকে এমএলএম কোম্পানি অপরদিকে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নীতি-নির্ধারকমহল। সবমিলিয়ে এ খাতের সার্বিক ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাচ্ছে, এটা বলা মুশকিল। এই খাতে বিনিয়োগকারী মালিকেরা এখন সম্পূর্ণভাবে আর্থিক ঝুঁকিতে আছেন বলে প্রতিক্ষণডটকমের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা। সরকার নীতিমালা এবং লাইসেন্স দেয়ার পর কেন এধরনের বিমাতাসুলভ আচরণ করছে এটাই তাদের প্রশ্ন।
গত ০৬ জুলাই সোমবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে দেওয়া বিবৃতিতে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাতিল হওয়া মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানিগুলো হাইকোর্টে রিট করে প্রতারণার ফাঁদ পেতে নিরীহ মানুষকে ঠকাচ্ছে। এসব কোম্পানির পণ্য বা সেবা প্রকৃত মূল্যে বিনিময় না হওয়া এবং মোড়কের মান ঠিক না থাকায় এমএলএম কোম্পানি আইনের ৬ ধারায় লাইসেন্স বাতিল করা হয়। এরপরও এসব কোম্পানি হাইকোর্টে রিট করে ব্যবসা পরিচালনা করছে।
মন্ত্রী বলেন, ‘যদিও আরজেএসসি অফিস থেকে আবেদনকৃত কোম্পানিগুলোর ওপর সরেজমিনে পরিদর্শন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মাত্র চারটি কোম্পানিকে দেশে এমএলএম ব্যবসা করার অনুমোদন দিয়েছিল। কিন্তু বাকী ২৭টি অবৈধ।’
এ প্রসঙ্গে ওয়ার্ল্ড মিশন ২১ লিমিটেডের মার্কেটিং ডিরেক্টর জাকির হোসাইন বলেন, ‘সরকার সংসদে আইন করে এমএলএম ব্যবসার সুযোগ দিয়েছে। এখন কোনো কারণ ছাড়া লাইসেন্স নবায়ন না করলে তাদের বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়বে। হাজার হাজার মানুষ বেকার হবে।’ তিনি বলেন,‘ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকার লাইসেন্স নবায়নের সুযোগ দেবে বলে আমরা আশা করছি।
জানা গেছে, আইন অনুযায়ী বৈধভাবে এমএলএম ব্যবসা করার সুযোগ থাকলেও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এমনকি লাইসেন্স নবায়নের বিষয়েও কোনো দিকনির্দেশনা দিতে পারছে না মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে আরজেএসসি লাইসেন্স দানকারী প্রতিষ্ঠান হলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছাড়া তারাও কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারছে না।
তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নবায়নের সিদ্ধান্ত না দেয়ায় আদালতে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন উদ্যোক্তারা। এ বিষয়ে রিচ বিজনেস সিস্টেম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসাইন মোহাম্মদ হেলাল বলেন, ‘তারা আইন ও বিধিবিধান মেনে এমএলএম ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন। এখন সরকার তাদের লাইসেন্স নবায়ন করছে না। তাই বিনিয়োগ সুরক্ষায় তাদেরকে এখন আদালতে যেতে হবে’। চলতি সপ্তাহে তারা আইনগত পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান তিনি। এদিকে এমএলএমএর নামে ব্যাপক প্রতারণার অভিযোগ ওঠেছে ‘ফাইটোসাইন্স’ নামক একটি কোম্পানির বিরুদ্ধে।
উল্লেখ্য, এর আগে ইউনিপে থেকে টাকা হাতিয়ে নেবার অভিযোগে ‘ফাইটোসাইন্স’ কোম্পানির মালিক জাহাঙ্গীর আলম ওরফে এমজে আলম এর বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা দায়ের হয়েছিল। মূলত এ জাতীয় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কারণেই লাইসেন্স পাওয়া প্রকৃত এমএলএম কোম্পানিগুলো সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন এমএলএম সংশ্লিষ্টরা। শিগগিরই প্রতারক কোম্পানিগুলো বন্ধ করে সঠিক কোম্পানিগুলোকে ব্যবসার সুযোগ দেবার জোর দাবি জানান তারা।
বাণিজ্যমন্ত্রী ও এমএলএম কোম্পানি গুলোর এমন বিপক্ষ অবস্থান এ খাতের সাথে সংশ্লিস্টদের বেশ আতঙ্কিত করে তুলেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নীতিমালা করার পর এখন হঠাৎ করে এমএলএম কোম্পানি বন্ধ করে দিলে বেশ অর্থনেতিকভাবে বেশ হুমকির মুখে পড়বে বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া হঠাৎ করে কয়েক লক্ষ লোক বেকার হয়ে পড়লে এটা দেশের জন্য অস্বস্থির কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলেও মনে করেন তারা। এর আগে ২০১২সালে ডেসটিনির কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার পর, গাছ এবং মাল্টিপারপাসের পেছনে বিনিয়োগ করা লক্ষ লক্ষ গ্রাহককে পথে বসতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা। শিগগিরই এ বিষয়টি সুরাহার দাবি জানান এমএলএম গ্রাহকরা। তবে এএলমএম গ্রাহকরা যাই বলুক না কেন, এই সেক্টরটিকে নিরাপদ মনে করছেন না বাণিজ্যমন্ত্রী। সেকারণেই বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রনাধীন প্রতিষ্ঠান জয়েন্ট স্টক ৪টি কোম্পানিকে অনুমোদন দেয়ার পরও মন্ত্রী বিভিন্ন সমযে কোম্পানিগুলো সম্পর্কে গণমাধ্যমে তার উদ্বেগ-উৎকন্ঠা অব্যাহত রেখেছেন।