এরশাদকে দালাল বলায় সংসদে উত্তেজনা
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডট কম
কূটনীতিক পাড়া গুলশান-বনানী এলাকা থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয় সরিয়ে নেয়ার দাবি এবং এরশাদকে দালাল বলে সম্বোধন করায় সংসদে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়েছে।
হট্টগোলে জাতীয় পার্টির একমাত্র প্রতিপক্ষ ছিলেন ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) সভাপতি এসএম আবুল কালাম আজাদ।
মাগরিবের নামাজের বিরতির পর পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বিএনএফ সভাপতি ও ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘গুলশান থেকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়সহ জাতীয় পার্টির অফিস সরিয়ে নিতে হবে।’ নিজের নির্বাচনী এলাকার মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থেই তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যালয় সরানোর দাবি করেন।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা এ দাবির তীব্র বিরোধিতা করেন। কারণ, এরশাদের বাসভবন এবং কার্যালয়ও রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত।
এ সময় ক্ষিপ্ত হয়ে আবুল কালাম আজাদও জাতীয় পার্টিকে আক্রমণ করেন। তিনি জাতীয় পার্টিকে দালাল বলে ভর্ৎসনা করলে উত্তেজনা আরো ছড়িয়ে পড়ে।
এসময় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা সমস্বরে প্রতিবাদ জানালে সংসদ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আবুল কালাম আজাদ ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘পোষ্য বিরোধী দলের এত বড় বড় কথা মানায় না।’
তখন জাতীয় পার্টির কয়েকজন সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদকে উদ্দেশ করে নানা মন্তব্য করেন, দু’একজনকে তার দিকে তেড়ে যেতেও দেখা যায়। উত্তপ্ত এ মুহূর্তে চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
বক্তব্যের কিছুক্ষণ আগেই অধিবেশন কক্ষ ত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ। এসময় সরকার দলীয় ট্রেজারি বেঞ্চে ছিলেন- বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত।
তার এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাতে কথা বলতে শুরু করেন জাতীয় পার্টির সদস্য মো. শওকত চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘কি দল তাকে আমি চিনি না। বিএন নাকি!’ এ কথা বলায় আবার প্রতিবাদ করেন আবুল কালাম আজাদ। এরশাদ সাহেব মনোনয়ন প্রত্যাহার না করলে তিনি এমপি হতে পারতেন না। তার এমপি হওয়ার জন্য এরশাদের অবদান রয়েছে।
এরপর স্পিকারের কাছে ফ্লোর নিয়ে কথা বলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।
তিনি বলেন, ‘বেগম জিয়ার অফিস আর এরশাদের এক নয়। বেগম জিয়া অফিস থেকে সন্ত্রাস বোমাবাজির নির্দেশ দিচ্ছেন। আমরা উদ্বেগ উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে যাচ্ছি শুধু। কিন্তু কোথায় অ্যাকশন? কোনো পদক্ষেপ তো নেয়া হচ্ছে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরাই প্রথম পেট্রোলবোমা, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রথম শান্তির মিছিল করেছি। সারাদেশের মানুষ একটি শঙ্কা ও আতঙ্কের মধ্যে অবস্থান করছে। আমরা এর অবসান চাই।’
জিয়া উদ্নি বাবলু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যেন তার সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন।’ তিনিও আবুল কালাম আজাদের বক্তব্য এক্সপাঞ্জের দাবি জানান এবং তাকে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানান।
উত্তেজনা সামলাতে গিয়ে অনেকটা হিমশিম খেতে হয় সভাপতির আসনে থাকা ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়াকে। পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করলেও কেউ থেমে ছিলেন না।
পরে ডেপুটি স্পিকার আবুল কালাম আজাদের বক্তব্য পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই-বাছাই করে অসংসদীয় শব্দ প্রত্যাহারের আশ্বাসে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
একই দাবিতে আবুল কালাম আজাদ গতকাল রোববার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
উল্লেখ্য, ৫ জানুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অনির্দিষ্টকালের অবরোধ ঘোষণার পর সারাদেশে ব্যাপক সহিংসতা শুরু হয়েছে। এরপর থেকেই গুলশান থেকে খালেদা জিয়ার কার্যালয় সরিয়ে নেয়ার জোর দাবি উঠছে। এলাকাটিতে বিদেশি কূটনীতিকরা থাকায় অনেকে তাদের দাবির পক্ষে যুক্তি হিসেবে তুলে ধরেন।
প্রতিক্ষণ/এডি/রাখি