কক্সবাজারে পাহাড় ধস : নিহত ২
নিজস্ব প্রতিবেদক
কক্সবাজার হিলটপ সার্কিট হাউস সংলগ্ন রাড়ার স্টেশন পাহাড়ের একাংশ ধসে মাটিচাপা পড়া মা-মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার গভীর রাতের এ ঘটনায় এখনও নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত তিনজন। তাদের উদ্ধারে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস, বিজিবি ও সেনাবাহিনী। নিহত মা-মেয়ে হলেন, স্থানীয় ব্যবসায়ী খায়রুল আমিনের স্ত্রী লুৎফুন নাহার জুনু (২৫) ও কন্যা নীহা মনি (৬)। বাড়িগুলোর উপর প্রায় ১০ ফুট মাটিচাপা পড়ে আছে।
পাহাড় ধসের খবর পেয়ে কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তাদের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে এসে যোগ দেন সেনাবাহিনীর ১৬ ইসিবির একটি টিম।
তবে বৃষ্টিপাতের কারণে উদ্ধারকাজ চালাতে সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আবদুল মজিদ।
সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল প্রায় দেড় ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে মৃত জাফর আলমের ছেলে কক্সবাজার তৈয়বিয়া তাহেরিয়া সুন্নীয়া মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শেফায়েত (১৪) ও জাকের হোসেনের ছেলে নুরুন নবীকে (১৭) জীবিত উদ্ধার করেন। প্রতিবেশি ও নিজেদের চেষ্টায় ধ্বংসস্তুপ থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন জহিরুল হকের মেয়ে শারমিন আকতার (২০), খায়রুল আমিনের ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী আয়াত (১০)।
শেফায়েত জানান, খাবার খেয়ে অন্যরা ঘুমিয়ে গেলেও সে রাত জেগে পড়ছিলো। রাত ২টার দিকে বাড়ির পূর্বপাশ থেকে হঠাৎ বিকট শব্দ হলে তিনি ভয় পেয়ে টেবিল থেকে উঠে বাইরে তাকানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছু বুঝে উঠার আগেই বাড়ির উপর পাহাড়ের মাটি এসে পুরো বাড়ি দুমড়ে মুছড়ে দেয়। দরজার কাছাকাছি থাকায় বাড়ির বাইরের একটি দেয়ালের কিনারে পড়েন তিনি ও তার ফুফাতো ভাই কক্সবাজার সরকারি কলেজের সদ্য এইসএসসি ক্লাসে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী নরুন্নবী (১৭)।
তিনি আরো বলেন, মাটি চাপায় এখনো নিখোঁজ রয়েছেন বাড়ির মালিক শাহ আলম (৪৫), তার স্ত্রী রোকেয়া বেগম (৩০) ও ভাতিঝি সদ্য এসএসসি পাশ করা রিনা আকতার (১৭)।
কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ইনচার্জ আব্দুল মজিদ জানান, রাড়ার স্টেশন পাহাড়ের একাংশ গাছসহ ধসে পড়ে পাদদেশের চারটি সেমিপাকা বাড়ি মাটি চাপা পড়েছে। এ ঘটনায় ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মা-মেয়ের দুটি মরদেহ ও মাটিচাপার প্রায় দেড় ঘণ্টা পর দুজনকে জীবিত উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীরা বলেন, মাটিচাপা পড়ার পর অপর দুটি বাসায় বসবাস করা লোকজন ভাগ্যক্রমে নিজেদের চেষ্টায় বেরিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন। বিকেল নাগাদ নিখোঁজদের উদ্ধার করা সম্ভব হতে পারে বলে ধারণা করেন তিনি।
বাহারছরা এলাকার মুহাম্মদ মুরাদ বলেন, পাহাড় ধসে প্রাণহানি রোধ করতে রোববার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারিদের সরে যেতে মাইকিং করা হয়। আজ সোমবারের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনকে অন্যত্র সরে যাবার সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। কিন্তু রাত পার হবার আগেই পাহাড়ের মাটি বেশ কয়েকটি তাজা প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।
অন্যদিকে, পরবর্তী প্রাণহানি ঠেকাতে পাহাড় ও পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসরতদের দ্রুত সরিয়ে নিতে কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসে ঘটছে প্রাণহানির ঘটনা। তাই শুরু হয়েছিল পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া। এরমধ্যেই ঘটলো এ দুর্ঘটনা।
উল্লেখ্য, জিওলজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশ এক বিবণরীতে সম্প্রতি প্রচার করে প্রবল বর্ষণে কক্সবাজার, টেকনাফ ও চট্টগ্রামে যেকোনো সময় ভূমিধস হতে পারে।
প্রতিক্ষণ/ডেস্ক/সজল