কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করতে কারাগারে পরিবার

প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৫ সময়ঃ ১১:০২ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১২:৩০ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম:

kamarujjamanমানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাত করতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রবেশ করেছে তার স্ত্রীসহ পরিবারের আট সদস্য।

শনিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল দশটার দিকে জেলগেটে এসে দেখা করা জন্য আবেদন জানান কামারুজ্জামানের পরিবারের পক্ষে তার স্ত্রী নূরুন্নাহার।

তিনিসহ মোট ৮ জন দেখা করবেন বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয় । অন্যদের মধ্যে রয়েছেন কামারুজ্জামানের মেয়ে, শ্যালক, ভাতিজা ও ভাগ্নি।

এদিকে কামারুজ্জামানের আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পাওয়ার পর রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তার আইনজীবীরা।

বৃহস্পতিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) পূর্ণাঙ্গ রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পেয়েছেন তারা।

সত্যায়িত অনুলিপি পাওয়ার পর থেকে রিভিউ আবেদনের জন্য নির্ধারিত ১৫ দিন গণনা শুরু হবে বলে দাবি করেছেন কামারুজ্জামানের আইনজীবীরা। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আসামি তার আপিল মামলার রায় ও মৃত্যু পরোয়ানা জানার পর থেকে এ দিন গণনা শুরু হয়েছে। ফলে আগামী ৫ মার্চের মধ্যে রিভিউ করতে হবে।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কারা কর্তৃপক্ষ কামারুজ্জামানকে তার মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনান। এর দু’ঘণ্টা আগে লাল কাপড়ে মোড়ানো মৃত্যু পরোয়ানাটির সঙ্গে আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপিও পৌঁছে কারাগারে।

সে সময় কামারুজ্জামান জানান, তিনি আইনজীবীর সঙ্গে আলাপ করে রিভিউ আবেদনের বিষয়ে জানাবেন।

কামারুজ্জামানের ইচ্ছা অনুসারে ২১ ফেব্রুয়ারি তার ৫ জন আইনজীবী কারাগারে তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি আইনজীবীদের রিভিউ করতে বলেন।

আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি(বর্তমান প্রধান বিচারপতি) এসকে সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির বেঞ্চ গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কামারুজ্জামানের আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ এ রায় দেন। বেঞ্চের অন্য তিন সদস্য হচ্ছেন বিচারপতি আব্দুল ওহাব মিয়া, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।

দুপুর একটা ৫৫ মিনিটে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে ৫৭৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ করা হয়। এর আগে বেলা সাড়ে বারোটার দিকে চার বিচারপতি রায়ে স্বাক্ষর দেওয়া শেষ করেন।

রাত পৌনে আটটায় আপিল বিভাগ থেকে ফাঁসির রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পৌঁছে দেওয়া হয় ট্রাইব্যুনালে। একই সঙ্গে পাঠানো হয় ট্রাইব্যুনালের রায় ও অন্যান্য ডকুমেন্টস, যেগুলো আপিল শুনানির জন্য পাঠানো হয়েছিল আপিল বিভাগে।

১৯ ফেব্রুয়ারি বেলা সাড়ে ১২টার দিকে চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ ট্রাইব্যুনাল-২ এর ৩ বিচারপতি কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানায় স্বাক্ষর করেন। অন্য দুই বিচারপতি হচ্ছেন বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি শাহীনুর ইসলাম।

পরে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার মুস্তাফিজুর রহমান মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে আইজিপি (প্রিজন) এর বরাবরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠিয়ে দেন।

গত বছরের ৩ নভেম্বর কামারুজ্জামানকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর দেওয়া ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে চূড়ান্ত রায় সংক্ষিপ্ত আকারে দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের কিলিং স্কোয়াড আলবদর বাহিনীর বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা কমান্ডার কামারুজ্জামানকে ২০১৩ সালের ৯ মে ফাঁসির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।

মুক্তিযুদ্ধকালে ইসলামী ছাত্রসংঘের ময়মনসিংহ জেলার সভাপতি ছিলেন কামারুজ্জামান। ২২ এপ্রিল তিনি জামালপুরের আশেক মাহমুদ কলেজের ইসলামী ছাত্রসংঘের বাছাই করা নেতাকর্মীদের নিয়ে আলবদর বাহিনী গড়ে তোলেন। বৃহত্তর ময়মনসিংহ আলবদর বাহিনীর কমান্ডার কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে এই বাহিনী ওই অঞ্চলজুড়ে মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধ ঘটায়।

কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনা মোট ৭টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের মধ্যে সোহাগপুর গণহত্যার (৩ নম্বর অভিযোগ) দায়ে চূড়ান্তভাবে ফাঁসির আদেশ হয়েছে তার। এ অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।

অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফাকে হত্যার (৪ নম্বর অভিযোগ) দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পেয়েছেন তিনি। এ অভিযোগে ট্রাইবুন্যাল কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দিলেও সাজা কমিয়ে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। দারাসহ ছয় হত্যার (৭ নম্বর অভিযোগ) দায়ে যাবজ্জীবন ও অধ্যক্ষ আব্দুল হান্নানকে নির্যাতনের (২ নম্বর অভিযোগ) দায়ে আরও ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি। ট্রাইব্যুনালের দেওয়া এ সাজাও বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।

তবে মুক্তিযোদ্ধা বদিউজ্জামান হত্যার (১ নম্বর অভিযোগ) দায় থেকে আপিল বিভাগ তাকে খালাস দেন। এ অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পেয়েছিলেন কামারুজ্জামান। এছাড়া ৫ নম্বর (১০ জনকে হত্যা) ও ৬ নম্বর অভিযোগে (টুনু হত্যা ও জাহাঙ্গীরকে নির্যাতন) ট্রাইব্যুনালের রায়ের সঙ্গে একমত হয়ে আপিল বিভাগও খালাস দিয়েছেন।

প্রতিক্ষণ /এডি/মাহমুদ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G