কিডনির ক্ষতি করে যেসব অভ্যাস

প্রকাশঃ জানুয়ারি ১৩, ২০১৬ সময়ঃ ৩:৩৬ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৮:৩৪ পূর্বাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্ক

kidneyআমাদের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হচ্ছে কিডনি। এটি আমাদের শরীরের রক্ত পরিস্রাবণ, হরমোন উৎপাদন, খনিজ শোষণ, ইউরিন উৎপন্ন, টক্সিন নিষ্কাশন এবং এসিড প্রশমিত করে। সুতরাং আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসেবে কিডনির যত্ন নেওয়া আবশ্যক। কিডনির কর্মক্ষমতা ২০% থাকলেও সে তার কাজ চালিয়ে যায়। সে কারণেই কিডনির ক্ষতি হলেও বছরের পর বছর তা টের পাওয়া যায় না। এজন্যই কিডনি রোগকে ‘নীরব ঘাতক’ বলা হয়ে থাকে। তাই খুব বেশি দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই কিডনির যত্নের ব্যপারে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। চলুন জেনে নিই এমন কিছু অভ্যাসের কথা যা কিডনির উপর প্রচুর চাপ প্রয়োগ করে এবং সময়ের সাথে সাথে কিডনির গুরুতর ক্ষতি করে।

১। পেইন কিলারের অপব্যবহার: সামান্য ব্যথার জন্য পেইন কিলার খাওয়া খুব খারাপ একটি অভ্যাস। বেশিরভাগ পেইন কিলারের গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন- কিডনির ক্ষতি করে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, দীর্ঘদিন যাবত ব্যথা নাশক ঔষধ সেবন করলে রক্তের প্রবাহ কমে যায় এবং কিডনির মূল কাজ ব্যাহত করে।

rtgggg২। পর্যাপ্ত পানি পান না করা: কিডনির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে রক্ত বিশোধন করা এবং বর্জ্য ও বিষাক্ত পদার্থ শরীর থেকে বাহির করে দেয়া। যখন আপনি সারাদিনে পর্যাপ্ত পানি পান না করেন, তখন বর্জ্য ও বিষাক্ত পদার্থগুলো শরীরে জমা হতে থাকে এবং শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে।  

৩। কফি খাওয়ার অভ্যাস: চিনির মতই কফির ক্যাফেইনও ব্লাড প্রেসার বৃদ্ধি করতে পারে এবং কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ প্রদান করে। সময়ের সাথে সাথে অত্যধিক কফি পান কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে।

৪। অনেক বেশি লবণ খাওয়া: শরীরে কার্যাবলী সঠিক ভাবে সম্পাদনের জন্য সোডিয়াম বা লবণ প্রয়োজন হয়। কিন্তু অনেকেই আছেন যারা খুব বেশি লবণ খেয়ে থাকেন। ফলে তাদের ব্লাড প্রেসার বেড়ে যায় এবং কিডনির উপর প্রচুর চাপ প্রয়োগ করে। তাই দৈনিক ৫ গ্রামের বেশি লবণ খাওয়া উচিৎ নয়।

৫। প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া না দেয়া: অনেকেই ব্যস্ততার কারণে বা পাবলিক টয়লেট ব্যবহার এড়িয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্রাবের বেগ চেপে রাখেন। নিয়মিত এই অভ্যাসের ফলে প্রস্রাবের চাপ বৃদ্ধি পায় এবং কিডনি ফেইলিউর, কিডনি পাথর এবং ইন্দ্রিয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ হারায়।

coffee৬। বেশি চিনি খাওয়া: বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা দিনে ২ টা বা তার অধিক চিনি সমৃদ্ধ পানীয় পান করে তাদের ইউরিনে প্রোটিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। আর প্রস্রাবে প্রোটিন থাকার অর্থ হলো আপনার কিডনি সঠিকভাবে কাজ করছে না। এটি কিডনি ড্যামেজের পূর্ব লক্ষণ। এই পর্যায়ে চিকিৎসা গ্রহণ করলে কিডনি ড্যামেজ হয়ে যাওয়া রোধ করা যায়।

৭। ভিটামিন ও মিনারেলের ঘাটতি: সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য ও কিডনির কাজ সঠিক ভাবে পরিচালনার জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ বিশেষ করে তাজা ফলমূল ও সবজি খাওয়া প্রয়োজন। ভিটামিন ও মিনারেলের ঘাটতি হলে কিডনি নষ্ট হওয়া ও কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন বি৬ কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৮। অ্যালকোহল গ্রহণ: অনেক বেশি অ্যালকোহল গ্রহণ করলে কিডনি ও লিভার ক্ষতিগ্রস্থ হয়। অ্যালকোহল হচ্ছে এমন এক বিষ যা কিডনি ও লিভারের উপর অনেক বেশি চাপ প্রয়োগ করে।  

৯। ঘুম বঞ্চনা: রাতের ঘুমের প্রয়োজনীয়তার কথা আমরা সবাই জানি। রাতের ঘুম ঠিকমত না হলে বিভিন্ন প্রকার অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায় এবং সেই তালিকায় কিডনি রোগ ও অন্তর্ভুক্ত। রাতে ঘুমের সময়ে কিডনি তার কলার মেরামত বা পুনরুদ্ধারের কাজ করে। সুতরাং আপনার শরীরকে তার নিজের মত আরোগ্য লাভ করার ও মেরামত করার সুযোগ দিন।

১০। অতিভোজন: একটি গবেষণার ফলাফলে দেখা যায় যে, যারা একদিনে ২২০০ ক্যালরির বেশি খাবার খান তাদের কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা ৪২% বৃদ্ধি পায়। এটার কারণ হতে পারে স্থূলকায় মানুষ অনেক বেশি চিনি, লবণ ও প্রোটিন গ্রহণ করে বলে।
  
১১। অনেক বেশি প্রাণীজ প্রোটিন খাওয়া: অত্যধিক পরিমাণে প্রোটিন খেলে বিশেষ করে লাল মাংস খেলে কিডনির উপর বিপাকীয় চাপ বৃদ্ধি পায়। তাই প্রোটিন বেশি খাওয়া অর্থ হলো আপনার কিডনিকে অনেক কঠিন কাজ করানো এবং এর ফলে সময়ের সাথে সাথে কিডনি অকেজো হয়ে যায়।

 

প্রতিক্ষণ/এডি/এফটি

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G