কী ঘটেছিল মহাকাশে পাঠানো প্রাণীদের সাথে?

প্রকাশঃ মে ২৮, ২০২১ সময়ঃ ১০:০৭ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১০:১০ পূর্বাহ্ণ

মহাশূন্য নিয়ে সবারই কৌতূহল তুঙ্গে। অনেক নভোচারীরাই এখন পর্যন্ত মহাশূন্যে ভেসেছেন। ১৯৬৯ সালে সবার প্রথম অ্যাপোলো ১১ নিয়ে সফলভাবে মহাশূন্য ভ্রমণ করে চাঁদে অবতরণ করেন মার্কিন মহাকাশচারী ও প্রকৌশলী নীল আর্মস্ট্রং এবং বাজ আলড্রিন।

তবে জানেন কি? মানুষের পাশাপাশি অনেক প্রাণিও মহামূন্য ভ্রমণ করে ইতিহাসে আজও স্মরণীয় হয়ে আছে। তাদের অনেকেরই করুণ পরিণতি হয়েছে। ভ্রমণরত অবস্থায় প্রাণ হারিয়েছে, যা সত্যিই দুঃখজনক। আবার অনেক প্রাণি সফলভাবে মহাশূন্য ভ্রমণ করে ফিরেও এসেছে পৃথিবীর বুকে।

মাছি

সর্বপ্রথম মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল মাছিকে। মহাকাশচারীদের উপর মহাজাগতিক বিকিরণের প্রভাব কতটুকু পড়বে, যে বিষয় সম্পর্কে জানতে মার্কিন বিজ্ঞানীরা মাছিকে বেছে নেয়। কারণ মাছি আর মানুষের মধ্যে জিনগত বিভিন্ন বিষয়ে মিল আছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে নাৎসিদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া একটি ভি-২ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রে মাছি দিয়ে বোঝাই করে ১০৯ কিলোমিটার দূরে বাতাসে পাঠানো হয়। পৃথিবীতে ফিরে আসার সময়, মাছিগুলোর ক্যাপসুলটি নিউ মেক্সিকো থেকে প্যারাস্যুটের সাহায্যে নামানো হয়েছিল।

ক্যাপসুলটি খোলার পরে, বিজ্ঞানীরা মাছিগুলোকে জীবিত দেখতে পান। মহাজাগতিক বিকিরণের প্রভাবে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তার বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন, মানুষ অনায়াসেই মহাশূন্যে ভ্রমণ করতে পারবে।

বানর এবং শিম্পাঞ্জি

এ পর্যন্ত ৩২টি বানর এবং শিম্পাঞ্জি মহাকাশে গিয়েছে। প্রথমবার দ্বিতীয় আলবার্ট নামক একটি বানর মহাকাশ যাত্রা করে। ১৯৪৯ সালে ১৩৪ কিলোমিটার পৌঁছায় সে; তবে দুর্ভাগ্যক্রমে প্যারাসুট ব্যর্থতার কারণে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশমাত্রই মারা যায়।তার আগের বছর প্রথম অ্যালবার্ট নামক আরেকটি বানরকে পাঠানোর পরপরই মহাশূন্যে পৌঁছানোর আগেই তার দম বন্ধে মৃত্যু হয়।

ইঁদুর

মহাকাশ ভ্রমণ মানবদেহে কেমন প্রভাব ফেলবে? সে সম্পর্কে বিস্তর জানতে বিজ্ঞানীরা একে একে অনেকগুলো ইঁদুর পাঠিয়েছেন মহাকাশে। নাসা সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে অবস্থিত ইঁদুরের একটি বিস্তৃত গবেষণা প্রকাশ করেছে।নাসার সমীক্ষা দেখা যায়, ইঁদুরগুলো মাইক্রোগ্রাভিটি অবস্থার সঙ্গে দ্রুত খাপ খায়। প্রথম ইঁদুরটি ১৯৫০ সালে ১৩৭ কিলোমিটার যাত্রা করে মহাকাশে। প্যারাসুট ব্যর্থতার কারণে রকেট বিচ্ছিন্ন হয়ে ইঁদুরটি মারা যায়।

কুকুর

প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের অধীনে বেশ কয়েকটি কুকুর মহাকাশে গেছে। এর মধ্যে বিখ্যাত হয়ে আছে কুকুর লাইকা। ১৯৫৭ সালে মস্কোর এক রাস্তা থেকে উদ্ধারকৃত এই কুকুরটিকে উপযুক্ত প্রাণি হিসেবে বিজ্ঞানীরা মহাকাশে পাঠান। যদিও তার আগে অন্যান্য কুকুর মহাকাশে গিয়েছিল; তবে লাইকা মহাকাশ প্রদক্ষিণকারী প্রথম প্রাণি হিসেবে বিখ্যাত।তবে লাইকা আর ফিরে আসেনি। তাকে মাত্র একবেলার খাবার এবং সাত দিনের অক্সিজেন দিয়ে পাঠানো হয়েছিল। সোভিয়েত সরকার দাবি করে, সে সাতদিন বেঁচেছিল। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, যাত্রাপত্রে মাত্রা ৫ ঘণ্টার মধ্যেই অতিরিক্ত গরম তাপে পুড়ে মারা যায় লাইকা।

কচ্ছপ

১৯৬৮ সালে চাঁদে কাউকে পাঠানোর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছিল। এরপর রাশিয়ানরা জন্ড-৫ নামক মহাকাশযানটির ক্যাপসুলে মাটি এবং কিছু বীজ, কৃমি এবং দুটি কচ্ছপ মহাকাশে পাঠায়। কচ্ছপগুলো চাঁদের চারপাশে প্রদক্ষিণ করে ছয় দিন পরে পৃথিবীতে ফিরেও আসে।

যদিও পরিকল্পনা অনুযায়ী জন্ড-৫ যানটির কাজাখস্তানে অবতরণ করার কথা ছিল; তবে ক্যাপসুলটি বন্ধ হয়ে গেলে শেষ পর্যন্ত ভারত মহাসাগরে পড়ে যায়। সেখান থেকে পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল যানটি। সুসংবাদ হলো, কচ্ছপ দু’টিকে জীবন্ত উদ্ধার করা হয়। যদিও তাদের ওজন ১০ শতাংশ কমে গিয়েছিল।

ব্যাঙ

১৯৭০ সালে নাসা অরবিটিং ব্যাঙ ওলোটিথ মহাকাশযানে করে পাঠায় মহাশূন্যে। দু’টি বুলফ্রোগকে পাঠানো হয়েছিল। ভারসাম্য অবস্থা বোঝার জন্য বিজ্ঞীনারা ব্যাঙদের মহাকাশে পাঠায়। এরপর দেখা যায়, ৬ দিন পর ব্যাঙগুলো ফিরে আসে, তাও আবার সুস্থ অবস্থায়।

মাকড়সা

১৯৬৯ সালে চাঁদে প্রথম মানুষের সফল অবতরণ হওয়ার পর প্রাণিদের মহাকাশে পাঠানোর বিষয়ে কম জোর দেওয়া হত। তবে বিজ্ঞানীরা তখনও প্রাণির জৈবিক ক্রিয়ায় মাইক্রোগ্রাভিটির প্রভাব সম্পর্কে আরও জানতে আগ্রহী ছিলেন । ১৯৭৩ সালে, অনিটা এবং আরবেলা নামক দু’টি মাকড়সাকে বিজ্ঞানীরা তাদের পরবর্তী পরীক্ষার জন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। তারা মহাকাশে গিয়েও চলাফেরা করতে পারবে কি-না তা জানতে চেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। এরপর দেখা যায় তারা সফলভাবে মহাকাশে গিয়েও চলাফেরা করতে পেরেছে, তবে পৃথিবীর চেয়ে তুলনামূলক কম।

মাছ

মাছও গিয়েছে মহাকাশে! বিস্ময়কর হলে সত্যিই। ১৯৭৩ সালে লবণ পানিতে মাম্মিচোগ মাছ এবং এর ৫০টি ডিম পাঠানো হয় মহাকাশে। প্রাণির উপর মাইক্রোগ্রাভিটির প্রভাব সম্পর্কে জানতে নাসা মাছ পাঠায় মহাকাশে। তবে মাছগুলো অসুস্থ হয়ে পেড়ে কিছুদিনের মধ্যেই। ২০১২ সালে, জাপানি স্পেস এজেন্সি আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে মাছ প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের অ্যাকোয়ারিয়ামে একটি অটোমেটিক ফিডিং সিস্টেম, একটি পানি সঞ্চালন ব্যবস্থা এবং দিনরাত প্রতিনিধিত্ব করার জন্য এলইডি লাইট ছিল। এই পরীক্ষার উদ্দেশ্য ছিল বিকিরণের প্রভাব মাছের হাড়ের অবক্ষয় এবং পেশির অপচয় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া।

টর্ডিগ্রাডস

টর্ডিগ্রাডস যা জলের ভালুক নামেও পরিচিত। ২০০৭ সালে মহাকাশে প্রেরণ করা হয় টর্ডিগ্রাডকে। তাকে পুরোপুরি শুকিয়ে ১০ দিনের জন্য একটি রকেটে মহাকাশ প্রদক্ষিণের জন্য পাঠানো হয়।

যখন তারা পৃথিবীতে ফিরে আসার সময় পুনরায় হাইড্রেটেড হয়েছিল, তখন বিজ্ঞানীরা দেখেন, জলের ভালুকের শরীরের ৬৮ শতাংশ শীত ও মহাকাশ বিকিরণ থেকে বেঁচে গেছে।

নিমোটোডস

২০০৩ সালে কলোম্বিয়া মহাকাশযানটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। এতে থাকা ৭ নভোচারী মারা যান। এই যানটি বিধ্বস্ত হলেও জীবন্ত উদ্ধার করা হয় কয়েকটি নিমাটোড পোকাকে।

প্রতিক্ষণ/এডি/শাআ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G