কোয়েল পাখি পালনে হতে পারেন সাবলম্বী

প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৫ সময়ঃ ৪:২৬ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:০২ পূর্বাহ্ণ

কৃষি প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম:

koelকোয়েল পাখির সাথে আমরা কমবেশী পরিচাত। কোয়েল পাখির মাংস ও ডিম পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে আমাদের শরীর গঠনে সাহায্য করে। কোয়েল পাখি পালন সহজ ও লাভজনক। কবুতরের মতো কোয়েল পাখি শখ করে কিংবা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পালন করা যায়। কিন্তু বর্তমানে কোয়েল পাখি বানিজ্যিক ভাবে পালন করে অনেকে সাবলম্বী হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে জাপান, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ডসহ আরও অনেক দেশে কোয়েল পাখি পালন করা হচ্ছে। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই পালন করা হচ্ছে এ পাখি। কোয়েল পাখি সবচেয়ে ছোট আকারের পোলট্রি। আনুমানিক ৯০ দশকের গোড়ার দিকে এটি ভারত থেকে বাংলাদেশে আসে। কোয়েল পালনে ভালো ফল পেতে হলে প্রথমেই এর বাচ্চা সতর্কতার সঙ্গে পালন করতে হবে।

এজন্য কোয়েলের বাচ্চা তিন মাস পর্যন খুবই যত্ন সহকারে বড় করতে হবে। বাংলাদেশে গরমের সময় প্রায় দুই সপ্তাহ এবং শীতের সময় তিন থেকে চার সপ্তাহ পর্যন কোয়েল পাখিকে তাপ দিতে হয়। এতে বাচ্চা পাখির মৃত্যুহারও অনেক কম হয়। কোয়েল গৃহপালিত পাখির মধ্যে অন্যতম। কবুতরের চেয়ে একটু ছোট। এর জন্মস্থান জাপান হলেও বাংলাদেশের আবহাওয়া কোয়েল পাখি পালনের সম্পূর্ণ উপযোগী।

চলুন তাহলে জেনে নেই কোয়েল পাখি পালন সম্পর্কে।

কোয়েল পাখির জাত:

পৃথিবীতে কোয়েলের ১৬টি প্রজাতি রয়েছে। এর মধ্যে দুটি প্রজাতি বাংলাদেশে দেখা যায়। তার একটি জাপানিজ কোয়েল আর অন্যটি হলো বব হোয়াইট কোয়েল (মাংস উৎপাদনকারী)। জাপানি কোয়েলের অনেক জাত ও উপজাত রয়েছে। ডিম উৎপাদনকারী কোয়েল হচ্ছে ফারাও, ব্রিটিশ রেঞ্জ, ইংলিশ হোয়াইট, ম্যানচুরিয়াল গোল্ডেন, বব হোয়াইট (আমেরিকা), হোয়াইট বেস্ট কোয়েল (ইন্ডিয়ান) ইত্যাদি। বর্তমানে এসব জাতের কোয়েল বাংলাদেশে পালন করা হচ্ছে।

বাসস্থান:

কোয়েল পাখি সাধারণত মেঝে ও খাঁচায় উভয়ভাবেই রেখে পালন করা যায়। বাচ্চা অবস্থায় প্রতিটি কোয়েলের জন্য খাঁচায় অনত ৭৫ থেকে ১০০ বর্গ সেন্টিমিটার হারে জায়গার প্রয়োজন হয়। বয়স্ক প্রতিটি কোয়েলের জন্য খাঁচায় ১৫০ বর্গ সেন্টিমিটার পরিমাণ জায়গা রাখার প্রয়োজন হয়। কোয়েলের ঘরে পর্যাপ্ত আলোবাতাসের প্রয়োজন হয়। সাধারণত দৈর্ঘ্য ১২০ সেন্টিমিটার, প্রস্থ ৬০ সেন্টিমিটার এবং উচ্চতা ২৫ সেন্টিমিটার একটি খাঁচায় ৫০টি কোয়েল পালন করা যায়। প্লাস্টিকের খাঁচায় কোয়েল পালন করা সহজ।

তিন সপ্তাহ বয়স পর্যন বাচ্চার খাঁচার মেঝের জালের ফাঁক হবে ৩দ্ধ৩ মিলিমিটার এবং বাড়ন ও পূর্ণবয়স্ক কোয়েলের মেঝের জালের ফাঁক হবে ৫দ্ধ৫ মিলিমিটার। খাঁচা তিন থেকে চারটি স্তরে করা যেতে পারে। কোয়েলের বাসা বন্য পশুপাখির নাগালের বাইরে রাখতে হবে। খাঁচায় খাদ্য ও পানির পাত্র থাকতে হবে। আমাদের দেশে সাধারণত তুষ, বালি, ছাই, কাঠের গুঁড়া এসব দিয়ে কোয়েলের মেঝের লিটার তৈরি করা হয়। অবস্থা দেখে কোয়েলের এ লিটার পরিবর্তন করতে হবে, যাতে কোনোভাবেই পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর না হয়। প্রথমেই পাঁচ থেকে ছয় ইঞ্চি পুরু তুষ বিছিয়ে লিটার তৈরি করতে হবে এবং লক্ষ্য রাখতে হবে যেন লিটার ভেজা না হয়।

কোয়েলের খাদ্য:

কোয়েল পাখি যেসব খাদ্য থেকে পেয়ে থাকে, সেগুলো হলো_ গম ভাঙা, ভুট্টা, চালের কুঁড়া, শুকনো মাছের গুঁড়া, তিলের খৈল, সয়াবিনের খৈল, ঝিনুকের গুঁড়া ও লবণ। চার সপ্তাহ বয়স পর্যন কাঙ্ক্ষিত বৃদ্ধির জন্য ২৭ ক্রড প্রোটিন এবং ২ হাজার ৮০০ কিলোক্যালোরি/কেজি শক্তি দিতে হবে।

খাদ্য সরবরাহ:

কোয়েল পাখিকে শুষ্ক গুঁড়া/ম্যাশ ফিড প্রদান করতে হবে। চার সপ্তাহ পর্যন প্রতিটি কোয়েল দিনে চার গ্রাম করে খাদ্য খায়। পঞ্চম সপ্তাহ বয়স থেকে দৈনিক প্রতিটি কোয়েল ২০ থেকে ২৫ গ্রাম খাদ্য খায়। একটি কোয়েলের বছরে খাদ্য লাগে আট কেজি। এদের খাদ্য রূপানর হার ৩:১।

স্বাস্থ্যসেবা:

খাদ্যের সঙ্গে সব সময় ০.২৫ ভাগ ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন, জিএস এবং ডিম পাড়াকালে ভিটামিন, মিনারেল, ডিএল, এবং ক্যালসিয়াম দিতে হবে। প্রতি ১০০ কেজি খাদ্যে ২০০ মিলিমিটার করে প্রোপিয়নিক এসিড মেশাতে হবে। গরমের সময় প্রতি লিটার পানিতে দুই গ্রাম করে স্যালাইন এবং বেশি বৃষ্টির সময়ে প্রতি লিটার পানিতে এক গ্রাম করে কসুমিঙ্ প্লাস দিতে হবে।

খাঁচায় কোয়েল পালন:

কোয়েল পাখির ঘরে যাতে পর্যাপ্ত আলোবাতাস ঢোকে সে ব্যবস্থা রাখতে হবে। একটি খাঁচায় ৫০টি বয়স্ক কোয়েলের জন্য অবশ্যই ১২০দ্ধ৬০দ্ধ৩০ সেন্টিমিটার আকারের খাঁচার প্রয়োজন হয়। খাঁচার দুই পাশে একদিকে খাবার পাত্র এবং অন্যদিকে পানির পাত্র দিতে হবে। কোয়েলের ডিম ফোটাতে চাইলে স্ত্রী এবং পুরুষ কোয়েল একত্রে রাখতে হবে।

ডিম ও বাচ্চা উৎপাদন:

ডিম থেকে বাচ্চা ফোটাতে হলে তিনটি স্ত্রী কোয়েলের সঙ্গে একটি পুরুষ কোয়েল প্রজননের জন্য রাখতে হবে। কোয়েল কখনও কুঁচে হয় না বলে মুরগির নিচে বা ইনকিউবেটরে কোয়েলের ডিম ফোটানো যায়। ১৬ থেকে ১৮ দিনে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। বাচ্চা ফোটানো ও ডিম উৎপাদনের জন্য কোয়েলের ঘরে ১৬ ঘণ্টা আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে।

পূর্ণবয়স্ক কোয়েল থেকে বেশি ডিম পেতে হলে কোয়েলের পঞ্চম সপ্তাহ বয়সে ১২ ঘণ্টা, ষষ্ঠ সপ্তাহে ১৩ ঘণ্টা, সপ্তম সপ্তাহে ১৪ ঘণ্টা, অষ্টম সপ্তাহে ১৫ ঘণ্টা ও নবম সপ্তাহে ১৬ ঘণ্টা আলো দিতে হবে। তবে যতক্ষণ দিনের আলো থাকবে কৃত্রিম আলো ততক্ষণ দিতে হবে না। কৃত্রিম আলোর জন্য ১০০ বর্গফুট জায়গায় ৬০ ওয়াটের একটি বাল্ব যথেষ্ট।

কোয়েলের রোগ:

কোয়েলের তেমন রোগবালাই হয় না। তবে কোয়েলের রক্ত আমাশয় হতে পারে। কোয়েলের রানীক্ষেত ও রক্ত আমাশয় প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আছে। তবে প্রতি ১০০ কেজি খাদ্যে ২০০ মিলিমিটার প্রোপিয়নিক এসিড মিশ্রিত করলে এ ছত্রাক দ্বারা খাদ্য আর সংক্রমিত হয় না।

কোয়েল পাখি পালনের সুবিধা:

* কোয়েল আকৃতিতে ছোট বলে পালন করতে জায়গা কম লাগে। খাঁচায় পালন করা যায়। একটি মুরগির পরিবর্তে ছয় থেকে সাতটি কোয়েল পাখি পালন করা যায়।

* অল্প পুঁজিতে লাভ বেশি হয়।

* খুব দ্রুত বড় হয়। ২৫ থেকে ২৬ দিন বয়সের কোয়েল খাওয়ার উপযোগী হয় এবং ওজন হয় ১৫০ থেকে ২০০ গ্রাম।

* উৎপাদন খরচ কম ও বাজারে চাহিদা এবং দাম বেশি। এক জোড়া কোয়েলের বাচ্চার দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা।

* কোয়েল পালন করা সহজ, সবাই পালন করতে পারেন। ছয় থেকে আট সপ্তাহ বয়সে ডিম পাড়া শুরু করে। একটি ডিমের ওজন আট থেকে ১২ গ্রাম।

কোয়েল পাখি পালন করে হতে পারেন সাবলম্বী। ঘুচাতে পারেন বেকারত্ব।

প্রতিক্ষণ/এডি/সজল

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G