গভীর সমুদ্রের ভূতুড়ে জাহাজগুলো!
প্রতিক্ষণ ডেস্ক
পৃথিবীর অনেক ঘটনার কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। উপযুক্ত ব্যাখ্যা না থাকায় এসব ঘটনাকে আমরা ভূতুড়ে ঘটনা হিসেবেই আখ্যা দেই। তেমনই সমুদ্র যাত্রায় অনেক সময় অলৌকিক অনেক ঘটনার ব্যাখ্যা আজও বের করা সম্ভব হয়নি। রহস্যজনক ভাবে হারিয়ে গেছে অনেক জাহাজ। অনেক সময় যাত্রীদেরও কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। আবার হারিয়ে যাওয়া এসব জাহাজ নাকি আজও সমুদ্রে ভেসে ওঠে! প্রতিক্ষণের পাঠকদের জন্য আজ থাকছে তেমনই কিছু ভূতুড়ে জাহজের গল্প।
এমভি জোয়িতা :
এমভি জোয়িতা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে তৈরি বিলাসবহুল মোটরচালিত নৌযান। ওটার নকশা এমন ছিল যে চাইলেও ওটাকে ডোবানো সম্ভব নয়। ১৯৩১ সালে রোনাল্ড ওয়েস্ট নামের এক চলচ্চিত্র পরিচালকের নির্দেশে ওটা বানানো হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নৌযানটি কাজে লাগানো হয়। ১৯৫৫ সালে ২৫ জন যাত্রী নিয়ে টোকিলাও দ্বীপের উদ্দেশে রওনা হয় জোয়িতা। রওয়ানা হওয়ার দুই দিনের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছানোর কথা থাকলেও জোয়িতার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। পাঁচ সপ্তাহ অনুসন্ধানের পর নৌযানটি অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেলেও মেলেনি কোনো যাত্রী। অক্ষত জাহাজ থেকে ভুতুড়ে ঘটনার মতোই গায়েব হয়ে যায় যাত্রীরা। কারো মতে, ক্রুদের বিদ্রোহের বলি হয়েছিল যাত্রীরা, আবার কারো মতে ইঞ্জিন কক্ষে পানি ঢুকে যাওয়ায় পালিয়ে যায় সবাই।
এলিজা বেটেল:
১৮৫২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা রাজ্যের মেয়র এবং অন্যান্য সন্মানিত ব্যক্তির বিলাসভ্রমণের জন্য তৈরি করা হয় এলিজা বেটেল। ১৮৫৮ সালে জাহাজটিতে আগুন লেগে যায়। একশ’ যাত্রীর মধ্যে ছাব্বিশ জনই মারা যায়। সমুদ্রের ৮০০ ফুট নিচে ডুবে যায় জাহাজটি।
লোকশ্রুতি রয়েছে, পূর্ণিমার রাতে জাহাজটিকে পানির নিচ থেকে জ্বলন্ত অবস্থায় ভেসে উঠতে দেখা যায়। আর ভেতর থেকে ভেসে আসে গানের সুর।
লেডি লোভিবোন্ড:
১৭৪৮ সালে জাহাজটির ক্যাপ্টেন সাইমন রিড তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে পর্তুগালের উদ্দেশে রওনা হন। জন রিভারস নামক জাহাজের এক কর্মকর্তা ক্যাপ্টেনকে খুন করে জাহাজের দায়িত্ব নিয়ে নেন। এরপর রহস্যজনকভাবে একে একে মারা যায় সবাই। ৫০ বছর পর পর নাকি জাহাজটির প্রেতাত্মা সমুদ্রে ভেসে ওঠে।
ইয়াং টিজার:
১৮১৩ সালে ব্রিটেনে পণ্য রফতানির জাহাজগুলোর ওপর নজর রাখতে আমেরিকানরা নিয়োগ করে ইয়াং টিজার নামের একটি জাহাজ। গতির কারণে জাহাজটি বিশেষ জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু ২৭ জুন দুটি শক্তিশালী জাহাজ মিলে যখন ইয়াং টিজারকে ধাওয়া করে তখন ৩০ যাত্রীসহ জাহাজটি ডুবে যায়। পরের বছর সেই একই দিনে একই স্থানে জাহাজটি আবার দেখা যায়। তবে কাছাকাছি আসার সঙ্গে সঙ্গেই নাকি জাহাজটি হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।
ওকটাভিয়াস:
১৭৭৫ সালে গ্রিনল্যান্ডের কাছে এক তিমি শিকারি খুঁজে পান জাহাজটি। তিনি তার দল নিয়ে জাহাজটি ঘুরে দেখেন। তাদের মতে, জাহাজের সব আরোহী ছিল মৃত আর বরফে আবৃত। ক্যাপ্টেনকে তার কক্ষে চেয়ারে একটি কলম হাতে মৃত অবস্থায় বসে থাকতে দেখা যায়। পাশে একজন নারী ও চাদরে মোড়া একটি ছোট শিশু। ক্যাপ্টেনের ব্যাগ থেকে পাওয়া জিনিসপত্রের তারিখ থেকে বোঝা যায় ১৩ বছর ধরে জাহাজটি এ অবস্থায় রয়েছে। এর কিছুদিন পরই জাহাজটি গায়েব হয়ে যায়।
ফ্লায়িং ডাচম্যান:
সতেরো শতকের শেষ দিকের এই ভুতুড়ে জাহাজটির ক্যাপ্টেন ছিলেন হ্যানরিক ভ্যানডার ড্যাকেন। অনেক ঝড়ের মধ্যেও তিনি উত্তমাশা অন্তরীপ ঘোরার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু জাহাজ চালক অন্যদের কথা চিন্তা করে সেদিকে যেতে নারাজ হলে তিনি তাকে মেরে পানিতে ভাসিয়ে দেন। এখনো নাকি জাহাজটি সমুদ্রের ওপর ভাসতে দেখা যায়। অনেক খ্যাতিমান এবং অভিজ্ঞ নাবিকও সমুদ্রের ওপর ফ্লায়িং ডাচম্যানকে ভাসতে দেখেছেন বলে শোনা যায়। ফ্লায়িং ডাচম্যানকে নিয়ে লেখা হয়েছে অনেক বই, নাটক ও চলচ্চিত্রের গল্প।
সবাই যা পড়েছে
যে ৫টি দেশে কখনও সূর্য অস্ত যায় না!
প্রতিক্ষণ/এডি/এনজে