ঘুরে আসুন চায়ের দেশে
রবিউল ইসলাম, প্রতিক্ষণ ডট কম.
যেথা রঙধনু ওঠে হেসে, যেথা ফুল ফোটে ভালোবেসে,
সেথা তুমি যাবে মোর সাথে, এই পথ গেছে সেই দেশে!!
শ্রীমঙ্গল শহরটা ছোট্ট, তবে বেশ গোছানো। এই শহরের বাড়ি, গির্জা, মন্দির নিয়ে সব স্থাপনার মাঝেই নান্দনিকতার ছাপ।
শহরের বেশির ভাগটা জুড়েই রয়েছে চা-বাগান। দেশে দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে কক্সবাজার, সেন্টর্মাটিন, সুন্দরবন, বান্দরবানে ঘুরেছেন।
কিন্তু ভ্রমন করেননি দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক লিলাভূমি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল।
এখানে আপনি যে দিকে-ই তাকাবেন দুচোখ জুড়ে দেখবেন চায়ের বাগান। যা দেখলে চোখ জুড়ে খেলে যাবে এক অপরূপ সুন্দর ও সবুজের সমারোহ। তাই হয়তোবা ভাবছেন কিভাবে যাবেন শ্রীমঙ্গলে!
বাংলাদেশে চা-বাগান মানেই শ্রীমঙ্গলে। সাধারণত মে মাস থেকে চাপাতা সংগ্রহের মৌসুম শুরু হয়। চলে অক্টোবর পর্যন্ত। এ সময়ে বাগানও থাকে সবুজ-সতেজ আর কর্মচঞ্চল। আর এ সময়টাকেই আপনি বেছে নিতে পারেন ভ্রমণের জন্য।
‘চা-কন্যা’ ভাস্কর্য দেখে শ্রীমঙ্গলের চা-বাগান ভ্রমন শুরু করতে পারেন। বাগানে চা পাতা তুলছে এক তরুণী শ্রমিক। এই আদলে তৈরি সাদা ভাস্কর্যটি শ্রীমঙ্গলের প্রবেশপথেই দৃষ্টি কেড়ে নেবে। মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন দৃষ্টিনন্দন এ ভাস্কর্যটি তৈরি করেছে সাতগাঁও চা-বাগানের সহায়তায়। ‘চা-কন্যা’র সামনেই বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সাতগাঁও চা-বাগান।
‘চা-কন্যা’ থেকে শ্রীমঙ্গল শহরের দূরত্ব বেশি নয়। ছোট্ট শহরকে পিছু ফেলে ভানুগাছ সড়কে উঠলেই চোখে পড়বে ফিনলের চা-বাগান।
চা গবেষণা ইন্সটিটিউটের (বিটিআরআই) ভেতর থেকে দক্ষিণমুখী সড়কটি ধরে এগিয়ে গেলে ফিনলের চা-বাগান, এ ছাড়া আছে বিটিআরআইর নিজস্ব বাগান। ভানুগাছ সড়কের টি-রিসোর্ট ফেলে সামনে দুটি বাঁক ঘুরে হাতের ডানের সড়ক ধরে কয়েক কিলোমিটার গেলেই জেরিন টি-এস্টেট।
লাউয়াছড়ার আগে হাতের ডানে জঙ্গলঘেরা পথটি চলে গেছে নূরজাহান টি-এস্টেটের দিকে। এ পথে দেখা মিলবে আরো বেশ কিছু বাগান। শ্রীমঙ্গল থেকে কমলগঞ্জের দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার। পথের মধ্যেই লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। কমলগঞ্জ থেকে আরো পাঁচ কিলোমিটার গেলে পাহাড়ঘেরা চা-বাগানের মধ্যে বিশাল মাধবপুর লেক।
তবে চা-বাগান দেখতে দেখতেও মাধবপুর যাওয়া যায়। এর জন্য ধরতে হবে নূরজাহান টি-এস্টেটের পথ। বাহন হিসেবে অবশ্যই নিতে হবে জিপ।
এখান থেকেও চা-বাগান দেখতে দেখতে ভিন্নপথে ফিরতে পারেন। ধলাই সীমান্ত থেকে ফিরতি পথে সামান্য এগিয়ে হাতের বামে বেশ পুরনো চা-বাগানের বাংলোর পাশ ঘেঁষা রাস্তা ধরে চললে, চা-বাগানের বাঁকে বাঁকে ফেরা যাবে শ্রীমঙ্গল শহরে।
হারি হারি চায়ে কি বাগানে/মোরে ধ্বনি…কেনে যাব ছাড়িয়ে আসাম
চায়ের রাজ্যের ভেতর দিয়ে অসমতল রাস্তা পাড়ি দিয়ে হরিণছড়ায়। হরিণছড়া জায়গাটা নয়নাভিরাম, টিলার ওপর চা-বাগানে ঘেরা এই এলাকায় কিছু আদিবাসীর বাস।
পাহাড় কেটে তৈরি এই রাস্তাগুলো কোথাও অসম্ভব খাড়া, কোথাও আবার অনেক ঢালু। সে এক ভয়মিশ্রিত দারুণ অভিজ্ঞতা।
নিরালাপুঞ্জি খাসিয়াপল্লিতে এ যেন পটে আঁকা গ্রাম। পাহাড় কেটে তৈরি এই গ্রামের ঘর-বাড়ি, গাছপালা, গির্জা, স্কুল সবখানেই রঙের ছোঁয়াময় রঙিন পরিবেশ নজর কেড়ে নেয়।
এখানকার খাসিয়ারা অনেক পরিচ্ছন্ন আর পরিপাটি। এখানকার বেশির ভাগ মানুষই পান চাষ ও পানের ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করে। এখানকার মানুষদের সবচেয়ে কষ্ট হয় পানি সংগ্রহের কাজে।
পাহাড়ি আদিবাসী নারীরা বহুদূর থেকে পানি বয়ে নিয়ে আসে। পাহাড়ের ওপর এমন গোছানো সুন্দর সুন্দর গ্রাম ছেড়ে আসতে কারোরই মন চাইবে না। ভ্রমণশেষে পান করতে পারেন নীলকণ্ঠ কেবিনের সাতরঙা চা।
প্রতিক্ষণ/এডি/রাজু