ঘুরে আসুন সাগরকন্যার দেশে

প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৫ সময়ঃ ২:০০ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:০৫ পূর্বাহ্ণ

ফারজানা ওয়াহিদ

2222

সাগরকন্যা তুমি মিশেছ দিগন্তে কিন্তু কখনো মেশোনি আকাশের সাথে। তোমার তোলপাড় করা রুপ মুগ্ধ করেছে বারবার। অগভীর থেকে গভীরে তোমার গতি। অতলস্পর্শী তোমার মন। তোমার নীল জলে কত স্মৃতি ভেসে যায়। যখন নীল আকাশের ছায়া পড়ে তোমার উপর সব গ্লানি ধুয়ে মুছে যায়। মনে হয়, রূপকথার রাজকন্যার নীলাম্বরীর আঁচল স্বপ্ন ছড়িয়ে যায় স্ব-মহিমায়। চারিপাশ জুড়ে তোমার সীমাহীনতা যেন মিশে যেতে চায় তোমাতে। এক করে দিতে চায় জল, মাটি, আকাশ।

বিখ্যাত একটি প্রবাদ আছে, ধান-নদী-খাল, এই তিনে বরিশাল। সেই বরিশালের একটি জেলা হচ্ছে পটুয়াখালী। ‘সাগরকন্যা’ নামে আরো একটি সুন্দর নাম আছে জেলাটির।  পটুয়াখালী শহরের দক্ষিণে এক গভীর অরণ্য ছিল। এর পাশ দিয়ে বহমান ছিল ছোট একটি নদী। যাকে বলা হতো পাত্তুয়ার খাল। অনেকেই মনে করেন, এই পাত্তুয়ার খাল থেকে পটুয়াখালী নাম এসেছে।

বাংলাদেশের দক্ষিণ প্রান্তে সাগরকন্যা খ্যাত অপরূপ এক জায়গা কুয়াকাটা। পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপালী ইউনিয়নে অবস্থিত এ জায়গায় আছে বাংলাদেশের সর্বাপেক্ষা আকর্ষণীয় সমুদ্র সৈকত।

একই সৈকত থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখার মতো জায়গা দ্বিতীয়টি আর এদেশে নেই। অনিন্দ্য সুন্দর সমুদ্র সৈকত ছাড়াও কুয়াকাটায় আছে বেড়ানোর মতো আরও নানান আকর্ষণ।

4444

কুয়াকাটার বেলাভূমি বেশ পরিচ্ছন্ন। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে এ সৈকত থেকেই কেবল সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করা যায়। সৈকতের পূর্ব প্রান্তে গঙ্গামতির বাঁক থেকে সূর্যোদয় সবচেয়ে ভালোভাবে দেখা যায়। আর সূর্যাস্ত দেখার উত্তম জায়গা হল কুয়াকাটার পশ্চিম সৈকত।

কুয়াকাটার সৈকত প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ। সৈকত লাগোয়া পুরো জায়গাতেই আছে দীর্ঘ নারিকেল গাছের সারি। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে এ বনেও। বিভিন্ন সময়ে সমুদ্রের জোয়ারের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় ভাঙনের কবলে পড়েছে সুন্দর এই নারিকেল বাগান। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে সারা বছরই দেখা মিলবে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য।

পটুয়াখালী জেলা শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে আরও তিনটি নদী লোহালিয়া, লাউকাঠি ও পায়রা নদী। জেলার পশ্চিমে রয়েছে পায়রা, উত্তরে লাউকাঠি ও পূর্বে লোহালিয়া নদী অবস্থিত। পটুয়াখালী লোহালিয়া নদীর তীরে অবস্থিত।

মূলত এই তিনটি নদীকে কেন্দ্র করেই এখানকার মানুষের জীবিকা গড়ে উঠেছে। মাছ আহরণ থেকে শুরু করে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে নদীগুলোর ভূমিকা অপরিসীম। শহরের বিখ্যাত ‘পুরান বাজার’ অবস্থিত এই লোহালিয়া নদীর তীরে। এ ছাড়া লাউকাঠি নদীর তীরে গড়ে উঠেছে নতুন বাজার এলাকা। প্রতিদিন শত শত মানুষ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে তাদের পণ্য নিয়ে আসে এই বাজারগুলোতে।

3333

পায়রার ইলিশের খ্যাতি দেশজোড়া। এ ছাড়া কোড়াল, পাঙ্গাশ, কাঁচকি, ভাটা, চিংড়ি ইত্যাদি মাছসহ আরো বিপুল জলজ প্রাণীর আধার এই নদীগুলোতে। একসময়ে মিঠাপানির কুমির পায়রা নদীতে দেখা গেলেও তা আজ বিলুপ্ত।

প্রকৃতির একেক ঋতুতে একেক রূপ ধারণ করে নদীগুলো। বর্ষায় রুদ্রমূর্তি ধারণ করে পায়রা নদী। জেলার সবচেয়ে বড় ও খরস্রোতা নদী এটি। প্রবল ঢেউ আর স্রোতে মাঝেমধ্যে বন্ধ থাকে খেয়া পারাপার। তবে নামের মতই ঋতুর সঙ্গে সঙ্গে বদল হয় নদীর রূপ। আমার দেখামতে বিকেলে সবচেয়ে সুন্দর রূপ ধারণ করে নদীটি।

নদীর পাড়ে এসে আপনার ভ্রমণপিয়াসী মন তৃপ্ত না হলে ট্রলারে চড়ে ঘুরতে পারেন নদীবক্ষে। তবে বর্ষা কিংবা জোয়ারের সময় খেয়াল রাখবেন। সাঁতার না জানলে এ সময় নদীতে না নামাই শ্রেয়। কারণ এই সময়ে রুদ্রমূর্তি ধারণ করে পায়রা। স্বাভাবিক ছুটির দিনগুলোতে ট্রলার ভাড়া থাকে ২০০ টাকার মতো, তবে সেটা দরদাম করে ঠিক করতে হবে। আর ঈদে কমপক্ষে ৩৫০ টাকা ঘণ্টা। স্বল্প খরচে দ্রুত সময়ে ভ্রমণের জন্য দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে স্থানটি।

আকারে লোহালিয়া পায়রার থেকে ছোট, স্রোতও তুলনামূলক কম। শহরের ভেতরে অবস্থিত হওয়ায় প্রতিদিন বিকেলে শত শত মানুষের বিনোদনের স্থান হয়ে উঠেছে নদীটি। শহর রক্ষা বাঁধের ওপর দিয়ে আপনি চাইলে অনেক দূর পর্যন্ত হাঁটতে পারেন প্রিয় মানুষের সঙ্গে। শহর থেকে চাইলে শান্ত-নিবিড় গ্রামীণ পরিবেশে হারিয়ে যেতে পারেন এই বাঁধের পথটি ধরে। এর নদীবক্ষে ভ্রমণ পায়রার থেকে অনেক নিরাপদ।   শেষ বিকেলের গোধূলি আলোয় অনাবিল রূপ ধারণ করে লোহালিয়া নদী।

666

লাউকাঠি নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ব্যবসায়ী স্থাপনা। তাই ভ্রমণের ক্ষেত্রে আপনি নৌকাকেই বেছে নিতে পারেন। ঢাকা-পটুয়াখালী রুটের লঞ্চঘাট এই নদীর তীরে অবস্থিত। ঢাকা থেকে এলে আপনাকে এখানে এসেই নামতে হবে। প্রতিদিন তিনটি বিলাসবহুল নৌযান ঢাকা থেকে আসে এই ঘাটে।

বর্তমানে ঢাকা থেকে এমভি সুন্দরবন ৯, ১১; কুয়াকাটা ১, সাত্তার খান ১, জামাল ৫, কাজল ৭, সৈকত ১৪, দীপরাজ ২ নামক বিলাসবহুল লঞ্চ সার্ভিস চালু আছে। ঢাকা থেকে সন্ধ্যা ৭টায় ছেড়ে আসে লঞ্চগুলো।

 ডেক ভাড়া :

জনপ্রতি ২০০ টাকা, কেবিন সিঙ্গেল ১০০০, ডাবল ১৮০০। ফ্যামিলি ২০০০। পরিবারের ৭-৮ জন সদস্য হলে আসতে পারেন ভিআইপি কেবিনে, ভাড়া ৩০০০-৩৫০০ টাকা। সুন্দরবন-১১ লঞ্চটিতে সোফা সার্ভিস আছে, ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৫০০ টাকা। সন্ধ্যায় লঞ্চ ছাড়লে ভোর ৩টা থেকে ৫টার মধ্যে আপনি পৌঁছে যাবেন পটুয়াখালী। কেবিনে এলে আগে থেকে বুকিং দেওয়া ভালো।

প্রতিক্ষণ/এডি/এফজে


সবাই যা পড়েছে

নারীদের আতঙ্ক “ইঞ্জেকশন সাইকো”

একসাথে মা হলেন তিন বোন

এক গুলিতেই ৫০ পাখি শিকার !

পানির ওপর দিয়ে ১২৫ মিটার দৌড়! (ভিডিও সহ)

“শিংওয়ালা মানুষ”

ক্যানসারের কাছে পরাজিত ইমতিয়াজ

পানির নিচে কারাগার! (ভিডিওসহ)

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

September 2024
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
20G