চাঁদ-তারা প্রতীকের ইতিহাস

প্রকাশঃ ডিসেম্বর ২০, ২০১৫ সময়ঃ ৮:২২ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৮:৫২ পূর্বাহ্ণ

BattleOfHomsতীতকে সঙ্গী করেই এগিয়ে চলছে বর্তমান। এখন যা ঘটছে একটু পর সেটাই ঠাঁই পাবে ইতিহাসের পাতায়। তবে সবকিছুই ইতিহাসের পাতায় সমানভাবে গুরুত্ব পায় না।

আবার কিছু অতীত ইতিহাস একাল বেয়ে আরেক কালের নৌকায় পৌঁছে যায়। যেমন চাঁদ-তারা। 

চাঁদ-তারার ব্যবহার অনেক কিছুতেই হয়।কখনও মসজিদ-মাদ্রাসার গম্বুজের শীর্ষস্থানে, কখনও বিভিন্ন দেশের পতাকায় আবার কিছু সংগঠনের প্রতীক হিসেবেও এর ব্যবহার লক্ষ্যণীয়।

ন্তর্জাতিক রেড ক্রিসেন্টের(আইসিআরসি)কথা কে না জানে? যা মানুষের জীবন এবং স্বাস্থ্য রক্ষা,মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা নিশ্চিত করা, এবং মানুষের দুর্ভোগ প্রতিরোধ ও দূর করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।বাংলাদেশও এর সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। যা বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট(বিসিআরসি)নামে পরিচিত। আর এই ক্রিসেন্ট হলো একফালি চাঁদের অংশের সাথে একটা তারা বা শুধু একফালি চাঁদ এ জাতীয় একটা চিহ্ন।

বার মুসলিম সমাজেও একটি ইসলামী প্রতীক হিসেবে এই চাঁদ-তারা প্রচলিত। তবে প্রচলিত চাঁদ-তারা আর বাস্তবের চাঁদের মধ্যে কিছু আকারগত পার্থক্য রয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো এই প্রতীক ব্যবহারের শুরু কোথা থেকে এবং কীভাবে হয়েছিল?
তাহলে চলুন চাঁদ-তারার অবস্থান সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক:Hadian_denarius_coin_

রাসূল (সঃ) এর নবুওয়তের আগ পর্যন্ত, চাঁদ-তারকা প্রতীকটির বহুল ব্যবহার দেখা যেতো পারস্যের (ইরানের)সাসানিদদের মধ্যে। পারস্যে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠিত হবার পরে এ প্রতীকটি প্রথমে আরব জাতির এবং পরবর্তীতে গোটা ইসলামী সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।

তুরস্কেও এটা বহু বছর আগে থেকে ব্যবহৃত হতো, বিশেষ করে ‘গক-তুর্ক (বা কক-তুর্ক)’ জাতির মুদ্রায় এটার ব্যবহার পাওয়া যায়। কালের পরিক্রমায় একটা সময়ে তা অটোম্যান(তুর্কি বীরযোদ্ধা ওসমানের অনুসারী) সাম্রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যায়। খ্রিষ্টীয় ১২ শতক থেকে অটোম্যান, মুঘল ছাড়া আরও অনেক মুসলিম শক্তি এই চাঁদ-তারাকে তাদের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করে।

সবচেয়ে পুরোনো নিদর্শন:
পতাকায় চাঁদ-তারা প্রতীক ব্যবহারের সবচেয়ে পুরোনো নিদর্শন পাওয়া যায় ১৪ শতকের একটি নেভিগেশন (পথ প্রর্দশন তালিকা) চার্ট-এ। যদিও আকৃতি, রঙ এসব দিক দিয়ে বর্তমানের সাথে সে প্রতীকের বেশ কিছু পার্থক্য আছে। তবে মধ্যপ্রাচ্য থেকে উত্তর আফ্রিকা পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় বিভিন্ন জাতির চাঁদ-তারার প্রতীকের ব্যবহার দেখেই বোঝা যায়, এর ব্যাপ্তি ছিল সুবিস্তৃত। এদের মধ্যে বিশেCumhuriyet_Dönemiষভাবে উল্লেখ করা যায়, দামেস্কের সম্রাটের পতাকা, কায়রো ও তিউনিসিয়ার পতাকা ইত্যাদি।

১৬ শতক থেকে ১৮ শতক পর্যন্ত অটোম্যান সাম্রাজ্যের পতাকায় চাঁদ-তারা ছিল তিনটি। ১৭৯৩ সালে তুরস্কের কাছে যখন এ সাম্রাজ্যের পতন ঘটে, তখন চাঁদ-তারার সংখ্যা তিনটি থেকে কমিয়ে একটি করা হয় এবং অষ্টকোণা বিশিষ্ট একটি তারকা যোগ করা হয়। সেই সময়ের মুসলিম শক্তিগুলোর মধ্যে তুরস্কই একমাত্র পতাকায় এ জাতীয় চিহ্ন ব্যবহার করতো। পশ্চিম আফ্রিকা থেকে দূর-প্রাচ্য, সকলের কাছেই এ পতাকা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল ইসলামের প্রতীক হিসেবে।

মুহম্মদ আলী, যিনি পরবর্তীতে মিশরে ‘পাশা’ হিসেবে আখ্যায়িত হন, তিনি ১৮০৫ সালে মিসরের পতাকায় চাঁদ-তারা সংযোজন করেন। যেখানে ছিল সাদা আর লাল এ মেশানো তিনটি চাঁদ-তারা। আর এটাই পরবর্তীতে স্বাধীন মিশরের পতাকায় বজায় থাকে। তিনটি তারা দিয়ে বোঝানো হয়েছিল মিশরে মুসলিম, খ্রিস্টান আর ইহুদী এই তিন জাতির শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকে। এভাবেই ধীরে ধীরে বিগত দুই শতাব্দীতে চাঁদ-তারা প্রতীকটি আরও বিভিন্ন মুসলিম দেশের পতাকাতেও স্থান পায়।

যদিও পূর্বে চাঁদ-তারা মুসলিম শাসকদের কাছে একটি সেক্যুলার প্রতীক হিসেবেই গণ্য হতো, কিন্তু কালক্রমে এখন তা পরিগণিত হচ্ছেMezunin_-i_mülkiye_amblemi ইসলামী বিশ্বাসের প্রতীক হিসেবে।তবে আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কিংবা প্রথম দিকের ইসলামী শাসকগণের কেউই এটাকে রাষ্ট্রীয় প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেননি। বরং কোনো ধরণের ‘ধর্মীয় প্রতীক’ জাতীয় করার ধারণা থেকেই তাঁরা দূরে ছিলেন।

আকারের পার্থক্য:
খানে একটি বিষয় লক্ষ্যনীয়; বাস্তবের চাঁদ, যা আমরা সচরাচর আকাশে দেখে থাকি, তাতে বাইরের অংশের বক্রতার চাপ হয়ে থাকে ১৮০ ডিগ্রি, কিন্তু বর্তমানে ব্যবহৃত বেশ কিছু প্রতীকে বা পতাকায় সেটা হয়ে থাকে ১৮০ ডিগ্রি থেকে আরও বেশি।

বর্তমান ব্যবহার:
র্তমানে বেশকিছু দেশ ও সংস্থা তাদের পতাকা ও প্রতীক হিসেবে চাঁদ-তারার ব্যবহার করছে, যেমন তুরস্ক,পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের পতাকায় ও আন্তর্জাতিক রেডক্রিসেন্ট সংস্থা প্রভৃতিতে।

 

প্রতিক্ষণ/এডি/জেডএমলি

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G