চার বছরেও হয়নি রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির বিচার
প্রতিদিনের মতো ২৪ এপ্রিলও কাজ করছিলেন সাভারের রানা প্লাজার কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। হঠাৎ করেই বিকট শব্দ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই পাঁচটি পোশাক কারখানা ও কয়েক হাজার শ্রমিক নিয়ে মুহূর্তের মধ্যে ধসে পড়ে ভবনটি।
ধংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারান প্রায় এক হাজার ১৩৪ জন শ্রমিক। আর আহত হয় আরও আড়াই হাজার হতভাগা শ্রমিক।
দেশের মানুষ এর আগে এত বড় ভবন ধসের ঘটনা দেখেনি। ঐ ঘটনায় বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্বে তোলপাড় তৈরি হয়।
দুর্ঘটনার দিন সকাল ৮টায় রানা প্লাজায় একযোগে চালু করা হয় ডজনখানেক জেনারেটর। এতে কেঁপে ওঠে নয়তলা ভবনটি। এর কিছুক্ষণের মধ্যে বিশাল এ ভবনটি ধসে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে নিভে যায় হাজারো শ্রমিকের প্রাণপ্রদীপ।
সেসময় শ্রমিকদের অভিযোগ থেকে জানা যায়, আগে থেকেই ফাটল ছিল ওই ভবনে। কিন্তু দুর্ঘটনার দিন হরতাল থাকাতেও কাজে আনা হয়েছিল শ্রমিকদের। ঝুঁকিপূর্ণ ঐ ভবনে ছিল বিশাল আকৃতির জেনোরেটর। আর একসঙ্গে কাজ করতেন অন্তত সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক।
ভবন ধসের চার বছর পার হলেও এখনও অনেক নিহত শ্রমিকদের স্বজন ও আহত শ্রমিকরা পায়নি প্রয়োজনী সহায়তা ও আর্থিক ক্ষতিপূরণ। যার ফলে অনেক আহত শ্রমিক অর্থাভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা নিয়ে আজও ফিরতে পারেনি স্বাভাবিক জীবনে।
এ ঘটনায় বিপুল শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় হত্যা ও ইমারত নির্মাণ আইনের দুটি মামলায় এখনো শুরু হয়নি সাক্ষ্য গ্রহণ। এতে মামলাটির বিচারপ্রক্রিয়া ঝুলে গেছে।
মামলা দুটিতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। তবে কয়েকজন আসামি উচ্চ আদালতে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট আদালতগুলো শুরু করতে পারেননি বিচারকাজ।আদালতের নথি ঘেঁটে জানা যায়, রানা প্লাজা ধসের সময়ে দায়ের করা দুটি মামলা বিচারের জন্য প্রস্তুত হয় গত বছর। ওই বছরের ১৫ মার্চ ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শাহজাদী তাহমিদা মামলা দুটির বিচার ও নিষ্পত্তির জন্য ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এবং বিচারিক আদালতে বদলির আদেশ দেন।
গত বছরের ১৬ জুন ইমারত নির্মাণ আইনের মামলায় ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ১৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মুস্তাফিজুর রহমান।
ওই আদেশের বিরুদ্ধে বজলুস সামাদ আদনানসহ তিন আসামি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পৃথক তিনটি আবেদন করেন।
এ বিষয়ে আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) আনোয়ারুল কবির বাবুল বলেন, ‘এই আবেদন তিনটির মধ্যে গত ১০ এপ্রিল বজলুস সামাদ আদনানের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন একটি আদালত। অন্য দুটি আবেদন এখনো শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। ওই আবেদন দুটি নিষ্পত্তি হয়ে গেলে আমরা এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করতে পারব।’
আনোয়ারুল কবির বলেন, এ মামলায় আগামী ১৭ মে উচ্চ আদালতের আদেশ দাখিলের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
অন্যদিকে গত বছরের ১৮ জুলাই হত্যা মামলায় ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এসএম কুদ্দুস জামান।
ওই আদেশের বিরুদ্ধে সাত আসামি হাইকোর্ট বিভাগে আবেদন করে। বর্তমানে আবেদনগুলো শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি মিজানুর রহমান বলেন, এ মামলার প্রতিটি ধার্য তারিখে সাক্ষীরা আদালতে এসে উপস্থিত হয়েছেন। কিন্তু আসামিদের করা আবেদন উচ্চ আদালতে শুনানির অপেক্ষায় থাকায় সাক্ষীদের সাক্ষ্য নেওয়া যাচ্ছে না। তা ছাড়া ৪১ আসামির মধ্যে সিদ্দিকুর রহমান নামে এক আসামি ইতিমধ্যে মারা গেছে বলে তাঁর পক্ষের আইনজীবী একটি আবেদন দাখিল করেন। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই আসামির মৃত্যুর প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ কারণে মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ করা যাচ্ছে না।
পিপি আরো জানান, এই মামলায় আগামী ৭ মে হাইকোর্টের আদেশ দাখিলের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
প্রধান আসামি রানার হালচাল
রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দুই মামলা প্রধান আসামি সোহেল রানা। তাঁর আইনজীবী ফারুক আহমেদ বলেন, ‘এই মামলায় রানা গ্রেপ্তারের পর কেটে গেছে প্রায় চার বছর। এখন পর্যন্ত তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেননি আদালত। তিনি কারাগারেই আছেন। আগামী ধার্য তারিখে আমরা বিচারিক আদালতে পুনরায় তাঁর জামিনের আবেদন করব।’