ছিটমহল এখন অতীত

প্রকাশঃ আগস্ট ৩, ২০১৫ সময়ঃ ৭:৩৩ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১১:৪৬ পূর্বাহ্ণ

ইমতিয়াজ হোসেন অমি

chit mohol“ছিটের নাগরিক” হিসাবে পরিচিত বাংলাদেশ এবং ভারতের ১৬২ টি ছিটমহলের অধিবাসীদের ৬৮ বছরের দুঃখ আর দুর্দশার অবসান হয়েছে। যার ফলে অর্ধলক্ষ এই ছিটের মানুষের কান্নার পরিসমাপ্তি ঘটেছে এক শান্তিপূর্ণ সমাধানের ভেতর দিয়ে। এই কান্নার শব্দ প্রতিধ্বনিত হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। যারা কোন দেশের নাগরিক ছিল না, কোন মানচিত্রে ছিল না তাদের অবস্থান। চোখের জলে ভাসতো তাদের নাগরিকত্ব লাভের স্বপ্ন। ৩১ জুলাই, মধ্যরাতে সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন হয়েছে।

১৯৪৭ সাল ছিল দেশ ভাগের সাল। সৃষ্টি হয় ভারত এবং পাকিস্তান নামের দুইটি রাষ্ট্রের। এই সময় তৎকালীন উপমহাদেশের সর্বশেষ বড়লাট লর্ড মাউন্টব্যাটেন বাংলা ও পাঞ্জাবের ভেতর দিয়ে একটি সীমারেখা দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। আর দ্রুততার সাথে  র‍্যাডক্লীফ কে প্রধান করে সীমানা নির্ধারণ কমিশন গঠন করেন। মাত্র ছয় সপ্তাহের ভেতর কমিশন তার পূর্ণ বিবৃতি প্রদান করে। এই সীমানা হওয়ার পর থেকেই শুরু হয় ছিটের মহলের যাত্রা। পরবর্তীতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ফিরোজ খান নুন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু একটি চুক্তি করেন। এই চুক্তিটি নুন- নেহেরু চুক্তি নামে পরিচিত। এখানে ছিটমহল গুলো বিনিময়ের ক্ষেত্রে বিবৃতি প্রদান করা হয়েছিল। কিন্তু এর কিছু সময় পরে বিষয়টি চলে যায় হাইকোর্টে। ফলে বিনিময়ের বিষয়টা নিক্ষিপ্ত হয় গহীন অন্ধকারে। সেই থেকে বাংলাদেশ আর ভারত বহন করে আসছে পীড়াদায়ক এই সমস্যা।
ছিটের নাগরিকদের হাজারো সমস্যা গুলোর ভেতর ছিল ভোট দানের অক্ষমতা, রাষ্ট্র সুবিধা বঞ্চিত, শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ, আর সকল প্রকার মৌলিক সুবিধা বহির্ভূত। এই সকল নাগরিকদের সকল দুঃখ আর দুর্দশা আজ আনন্দে পরিণত হয়েছে। তাদের ত্যাগ, তিতীক্ষা আর প্রতীক্ষার রুপান্তর ঘটেছে নতুন দিনের স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর নতুন প্রত্যয় উদয়ের মাধ্যমে।

অবশেষে সমাধান ঘটে ১৯৭৪ এর মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির সঠিক বাস্তবায়নের ভেতর দিয়ে। ফলে বাংলাদেশের ভেতরকার ছিটমহলগুলো বাংলাদেশেই থেকে যায় অপরদিকে ভারতের অভ্যন্তরের ছিটমহল গুলো ভারতের অন্তর্ভুক্তি হয়।

রাষ্ট্রীয়ভাবে নাগরিকত্বের পছন্দের অনুমোদন ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে জমির মালিকানার বদল হওয়ার ভেতর দিয়ে ৬৮ বছরের জটিলতার অবসান হলেও ভবিষ্যৎ কণ্টকমুক্ত হলো না, এমন আশঙ্কা করছে কেউ কেউ। এই আশঙ্কার মূল কারণ হচ্ছে ভূমি। ছিটমহলবাসীর ভূমির পরিণতি কী হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েই গেছে। জমির মালিকানার প্রকৃতি কী হবে, মালিকানা প্রামাণিক দলিল বা সাক্ষ্য কিভাবে চিহ্নিত হবে, তা নিয়ে কোনো স্পষ্ট ধারণা নেই। ভূমির মালিকানা নিয়ে অস্পষ্টতা নতুন এই নাগরিকদের মনেও রেখাপাত করবে, এটাই স্বাভাবিক। তাতে নতুন এই নাগরিকদের মধ্যে দেখা দিতে পারে হীনম্মন্যতা।chit

মানুষ স্বপ্ন দেখে। দীর্ঘ ৬৮ বছরের পরিচয়হীনতার গ্লানি ঘুচিয়ে যারা নতুন পরিচয়ে পরিচিত হয়েছে, তাদের মনেও স্বপ্ন আছে। রক্তপাতহীনভাবে দুটি দেশের মানচিত্রে পরিবর্তন হয়েছে। এই শান্তি যাতে কোনোভাবেই বিঘ্নিত না হয় সেদিকে রাষ্ট্রকে দৃষ্টি দিতে হবে। এত দিন বঞ্চনা সয়ে আসা মানুষগুলোকে নতুন জীবনে স্বাগত জানিয়ে তাদের জন্য নিশ্চিত করতে হবে সব মৌলিক অধিকার। তাদের ভূখণ্ডের মালিকানার পাশাপাশি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা অতিদ্রুত নিশ্চিত করতে হবে। তারা যেন কোনো মানসিক দৈন্যের মুখে না পড়ে সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। নতুন ঠিকানা পাওয়া ছিটমহলের মানুষের জীবন শঙ্কামুক্ত ও সচ্ছল হোক।

প্রতিক্ষণ/এডি/নির্ঝর

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

September 2024
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
20G