জব্বারের রায় আজ
আদালত প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম:
মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য পলাতক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বারের অনুপস্থিতিতে মামলার রায় আজ (মঙ্গলবার) ঘোষণা করা হবে।
মঙ্গলবার বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় ঘোষণা করবেন। গত বছরের ৩ ডিসেম্বর থেকে মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ায় রায় ঘোষণা অপেক্ষমান রাখেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বারের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ৫টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ৩৬ জনকে হত্যা-গণহত্যা, ২শ’ জনকে ধর্মান্তরিতকরণ এবং লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে ৫শ’ ৮৭টি বাড়ি-ঘর ধ্বংস করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
তিনি পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়ার ফুলঝুড়ি, নলী ও আঙ্গুলকাটা গ্রামে এসব অপরাধ সংঘটিত করেন বলে উল্লেখ রয়েছে ।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর জাহিদ ইমাম যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন। জব্বারের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আবুল হাসান।
রাষ্ট্রপক্ষে শেষ ও ২৪তম সাক্ষী মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) হেলাল উদ্দিনকে আসামিপক্ষের জেরা শেষ করার মধ্য দিয়ে গত বছরের ১৭ নভেম্বর এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।
জব্বারের বিরুদ্ধে গত ১৪ আগস্ট অভিযোগ গঠন করা হয়। ৭ সেপ্টেম্বর সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন শেষে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
এর আগে গত বছরের ৮ জুলাই ট্রাইব্যুনালের এক আদেশে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জব্বারকে গ্রেফতার করতে পারেনি। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও হাজির হননি জব্বার। এজন্য তাকে পলাতক ঘোষণা করা হলো।
এরপর আইনজীবী আবুল হাসানকে জব্বারের পক্ষে আইনি লড়াইয়ের জন্য রাষ্ট্রনিযুক্ত (স্ট্যাট ডিফেন্স) আইনজীবী নিয়োগ করা হয়।
গত ১২ মে তার জব্বারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনিত পাঁচটি অভিযোগ আমলে নিয়ে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।
রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) থাকা যুদ্ধাপরাধের সর্বশেষ মামলা এটি। আর এ মামলার রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে ট্রাইব্যুনালে জমে থাকা অপেক্ষমান মামলার সংখ্যা শূন্যতে নেমে আসবে।
১৯৮৮ ও ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার জব্বার। ৮০ বছর বয়সী জব্বার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় ছেলে-মেয়ের কাছে পালিয়ে আছেন বলে প্রসিকিউশন ধারণা করছেন।
পলাতক আসামিদের মধ্যে জব্বার পঞ্চম স্থানে অবস্থান করছেন। দুই ট্রাইব্যুনাল মিলিয়ে এর আগে আরও তিন মামলায় চার পলাতক আসামিদের অনুপস্থিতিতেই বিচার কাজ শেষ হয়েছে। পলাতক জামায়াতের সাবেক রোকন (সদস্য) আবুল কালাম আজাদ বাচ্চু রাজাকার, জামায়াত নেতা বুদ্ধিজীবী হত্যার দুই ঘাতক আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মাঈনুদ্দিন এবং ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র ও পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি জাহিদ হোসেন খোকন রাজাকার পলাতক থাকা অবস্থায়ই তাদের প্রত্যেকের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে দুই ট্রাইব্যুনাল ঘোষণা করেছেন মোট ১৬টি মামলার রায়, যেগুলোতে ১৭ যুদ্ধাপরাধীর সাজা ঘোষিত হয়েছে। পলাতক চারজন বাদে বাকি ১৩ মামলায় ১৩ জনের রায় ঘোষিত হয়েছে গ্রেফতার থাকা অবস্থায় তাদের উপস্থিতিতেই। অন্য একজন অভিযুক্ত বিচারিক প্রক্রিয়া চলাকালে মারা যাওয়ার কারণে তার মামলার নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
বর্তমানে দুই ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে আরও ৭ জনের, বিচার শুরু হতে যাচ্ছে ৪ জনের এবং তদন্ত চলছে আরও অর্ধশতাধিক আসামির বিরুদ্ধে।
প্রতিক্ষণ /এডি/বাবর