জামের যত গুণাগুণ

প্রকাশঃ জুন ২৮, ২০১৬ সময়ঃ ৩:৫৪ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৩:৫৪ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ

10843

মধুমাস গ্রীষ্মের একটি অসাধারণ ফল জাম। আকারে ছোট হলে কী হবে, গুণের দিক থেকে এই ফল কিন্তু বিশাল বড়! জাম আপনার স্বাস্থ্যকে বিভিন্ন দিক থেকে ভালো রাখবে। জামে শর্করার পরিমাণ থাকে প্রায় ১৫ দশমিক ৫৬ গ্রাম, পটাশিয়াম ৭৯ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ১৭ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম ১৫ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৯ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ১৪ গ্রাম। জাম আরও কিছু প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানে পূর্ণ।

চলুন দেখে নিই জামের পুষ্টিগুণ ও আমাদের দেহমনে তার উপকার-মনে।

১। জাম শারীরিকভাবে সতেজ রাখে – জামে রয়েছে গ্লুকোজ, ডেক্সট্রোজ ও ফ্রুকটোজ যা মানুষকে কাজ করার শক্তি জোগায়। এতে বিদ্যমান পানি, লবণ ও পটাশিয়ামের মতো উপাদান গরমে শরীর ঠাণ্ডা এবং শারীরিক দুর্বলতাকে দূর করতে সক্ষম। এমনকি যারা অতিরিক্ত ঘামেন, তাদের জন্যও উপকারি জাম।

২। জাম খেলে স্মৃতিশক্তি ভালো থাকে – বয়সের সাথে সাথে মানুষের স্মৃতিশক্তি দুর্বল হতে থাকে। নিয়মিত জাম খেলে তা স্মৃতিশক্তি প্রখর রাখতে সাহায্য করে।

৩। ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে – ডায়বেটিস রোগীদের জন্য জাম ভীষণ উপকারী। এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত জাম খাওয়ার ফলে ৬.৫ শতাংশ মানুষের ডায়াবেটিস কমে গেছে। জাম রক্তে চিনির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং ডায়বেটিস রোগীদের রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে শরীর সুস্থ রাখে।

৪। ভিটামিন সি জনিত রোগ দূর করে – জাম ভিটামিন সি পরিপূর্ণ একটি ফল। ফলে জাম খেলে দেহে ভিটামিন সির ঘাটতি পূরণ হয় এবং একই সঙ্গে এটি ভিটামিন সির অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধ করে। এ ছাড়া মুখের দুর্গন্ধ রোধ, দাঁত মজবুত, মাড়ি শক্ত করা এবং মাড়ির ক্ষয়রোধেও জাম দারুণ কাজে দেয়।

৫। ওজন নিয়ন্ত্রণ করে – জামে খুব কম ক্যালোরি থাকে। তাই যারা ওজন নিয়ে চিন্তায় আছেন এবং নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন, তাদের খাদ্য তালিকায় আসতে পারে জাম।

৬। রক্তস্বল্পতা দূর করে – জামে থাকে প্রচুর পরিমাণ আয়রন, যা রক্তস্বল্পতা দূর করে।

৭। হার্ট ভালো রাখে – জাম রক্তের কোলস্টোরেলের মাত্রা কমিয়ে হৃদপিন্ড ভালো রাখে। জামে এলাজিক এসিড বা এলাজিটেনিন্স, এন্থোসায়ানিন এবং এন্থোসায়ানিডিন্স থাকে যা প্রদাহরোধী হিসেবে কাজ করে। এই উপাদানগুলো শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে বলে কোলেস্টেরলের জারণ রোধ করে এবং হৃদরোগ সৃষ্টিকারী প্লাক গঠনে বাঁধা দেয়।

৮। উচ্চ রক্তচাপ – ক্লিনিকালি জামকে উচ্চ রক্তচাপের জন্য প্রেসক্রিপশনে প্রদান করা হয়। কারণ এতে প্রচুর পটাসিয়াম থাকে। ১০০ গ্রাম জামে ৫৫ গ্রাম পটাসিয়াম থাকে।

৯। ক্যান্সার এর সঙ্গে যুদ্ধ করে – জাম ক্যান্সারের সঙ্গেও যুদ্ধ করে থাকে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মানব শরীরের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। এই ইলাজিক এসিড ক্ষতিকর ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। ক্যান্সারের জীবাণু ধ্বংস করার জন্য এতে রয়েছে চমকপ্রদ শক্তি। জাম লড়াই করে জরায়ু, ডিম্বাশয়, মলদ্বার ও মুখের ক্যানসারের বিরুদ্ধে।
এছাড়া জামের বাইরের আবরণে থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডায়াটরি ফাইবার যা একজাতীয় আঁশ। আঁশজাতীয় খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। দীর্ঘ দিন কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে মলদ্বারে টিউমার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। জাম মলদ্বার বা কোলনের ক্যানসার প্রতিরোধ করে।

১০। মূত্রনালীর সংক্রমণ রোধ করে – নিয়মিত জাম খেলে তা মূত্রনালীর সংক্রমণ প্রতিরোধেও সহায়তা করে।

১১। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় – জামে ফাইটো কেমিক্যালস আর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বিদ্যমান। যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, সঙ্গে মৌসুমি সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি দেয়। প্রতিরোধ করে ইনফেকশনের মতো সমস্যারও। ভিটামিন ‘সি’ ঠাণ্ডা, কাশি ও টনসিল প্রতিরোধ করে।

১২। চোখ ভালো রাখতে সাহায্য করে – জামের ভিটামিন ‘এ’ চোখ ভালো রাখতে সাহায্য করে। সঙ্গে স্নায়ুগুলোকে কর্মক্ষম রেখে দৃষ্টিশক্তির প্রখরতা বাড়ায়।

১৩। অন্যান্য – জাম চুল পাকা বন্ধ করে এবং ত্বক ও দাঁত ভালো রাখে। ভিটামিন ‘এ’ চোখের দৃষ্টিশক্তি প্রখর করে তোলে। এছাড়া আয়ুর্বেদিক ঔষধে জাম পাতা ব্যবহার করা হয় ডায়রিয়া ও আলসার নিরাময়ে।

জাম খাওয়ায় কোন বাঁধা নিষেধ নেই। তবে আমাদের দেশের বাস্তবতার কথা বিবেচনা করে জাম কেনার পর তা বেশ কিছুক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখা উচিত যাতে তা কিছুটা হলেও ফরমালিনমুক্ত হতে পারে। আর খালি পেটে জাম খেলে কারো কারো এসিডিটির সমস্যা হতে পারে।

 

 

প্রতিক্ষণ/এডি/সাদিয়া

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G