জুমার দিনে খতিবের আলোচনা যেমন হওয়া উচিৎ
মুহাম্মদ আবদুল কাহহার :
শুক্রবার সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনে ছোট-বড় সবাই জুমার সালাতে উপস্থিত হতে চেষ্টা করে। যে ব্যক্তি প্রত্যহ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করেনা বা মাঝে মাঝে সালাত আদায় করে সেও জুমার সালাত আদায় করতে মসজিদে যায়।
বিশেষ করে প্রথম আজানের পরপরই মুসুল্লিরা খতিবের আলোচনা শোনার জন্যই উপস্থিত হয়। তবে কেউ কেউ ব্যতিক্রমও আছে, ইমাম বা খতিব কি আলোচনা করলো সেটা নিয়ে তাদের আগ্রহ তেমন দেখা যায়না।
তবে অধিকাংশ লোকের অভ্যাস হলো যে মসজিদে আলোচনা ভালো হয়, সে মসজিদে সালাত আদায় করে থাকে। সেটা যত দূরেই হউক সেটা তার কাছে মূখ্য নয়। তাদের কাছে শুক্রবারের আলোচনাটাই মৌলিক বিষয়ের একটি। বাংলাদেশের মানুষ সাধারণতই ধর্মীয় আলোচনা শুনতে ভালোবাসে। বর্তমান সময়ে কুরআন-হাদীসের মাহফিল তেমন একটা লক্ষ্য করা যায়না। যার ফলে শুক্রবারের আলোচনা তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
কিন্তু কিছু কিছু মসজিদের মুতাওয়াল্লি ও কমিটির স্বেচ্ছাচারীতার কারণে যোগ্য ইমাম ও খতিব নিয়োগ দেয়া হয়না। ইমাম ও খতিব নিয়োগের ক্ষেত্রেও চলে আত্মীয়করণ, দলীয়করণ। যার ফলে যোগ্যতা সম্পন্ন ইমাম ও খতিবরা তাদের কাছে অযোগ্যই থেকে যায়।
আবার এমনটিও ঘটে যে, সঠিকভাবে কুরআন-হাদীসের আলোচনা তুলে ধরলে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের স্বার্থে আঘাত লাগে। কখনো রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বিপক্ষে চলে যায়। তাই বার-বার ইমাম ও খতিবদের অন্যায়ভাবে চাকুরিচ্যুত করা হয়। কখনো কখনো নির্যাতন করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে মিথ্যা মামলা ঠুকে দেয়া হয়। এটি একধরণের জুলুম। আর যারা জুলুম করে তাদেরকে জালিম বা অত্যাচারী বলা হয়। সূরা আরাফের ৪৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘সাবধান! অত্যাচারীদের উপর আল্লাহর লানত বা অভিশাপ।’ বুখারী শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে মহানবী সা. বলেছেন, ‘একজন মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই, সে তার উপর জুলুম করতে পারেনা এবং জালিমের হাতে সোপর্দ করতে পারেনা।’
বুখারী শরীফের অন্য একটি হাদীসে এসেছে,‘অত্যাচারিতের বদ দোয়াকে ভয় কর, কেননা তার বদ দোয়া ও আল্লাহর মাঝে কোন পর্দা নেই।’‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি কিংবা অন্য কোন বিষয়ে জুলুমের জন্য দায়ী, সে যেন আজই তার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয় সেই দিন আসার আগে, যেদিন তার কোন অর্থ-সম্পদ থাকবেনা। সেদিন তার কোন নেক আমল থাকলে তা থেকে জুলুমের দায় পরিমাণ কেটে নেয়া হবে। আর যদি নেক আমল না থাকে তাহলে যার উপর জুলুম করেছে, তার বদ আমল থেকে নিয়ে তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে।’(বুখারী)।
আবার কতিপয় মাসজিদ কমিটির সদস্যরা এমন বাড়াবাড়ি করে যে, ইমাম ও খতিবরা জুমআর খুতবায় কি আলোচনা করবেন সেটা আলোচনার আগেই মসজিদের সভাপতি থেকে অনুমোদন নিতে হয়। সেটা লিখিত ও মৌখিক উভয় রীতি চালু আছে। এ ধরনের নিদের্শনা দেয়া অনুচিত, যা অনাধিকার চর্চার শামিল।
আবার কিছু কিছু মসজিদের ইমাম ও খতিবদের এমনভাবে শাসানো হয়, যাতে তারা প্রভাবশালীদের মনরক্ষা করে আলোচনা করেন। তাদের মধ্যে যে ধরণের অপরাধ বিদ্যমান সেসব বিষয়ের আলোচনা কখোনোই করা হয়না।
আবার কেউ কেউ তাকওয়া ভুলে গিয়ে কুরআন-সুন্নাহর হুকুমকে গোপন করে বা পাশ কাটিয়ে কমিটির মন রক্ষা করে আলোচনা করেন। যা সর্বদাই দূর্বল ঈমানের পরিচয় বহন করে। অনেকে আবার এ ধরনের ঈমানী দূর্বলতাকে হিকমত বা কৌশল বলে ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেন।
ইমাম ও খতিবদের উচিত কোরআন-হাদীসের আলোকে বিজ্ঞানভিত্তিক তাত্তি¡কপূর্ণ বিশ্লেষণধর্মী ও বর্তমান প্রেক্ষাপটে একজন মুসলিমের করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়ের আলোকে জুমার খুতবা পেশ করা।
গতানুগতিক ভাবে দেখে দেখে খুতবাহ তেলাওয়াত না করে তথ্যভিত্তিক ভাষণের মতো করে উপস্থাপন করা জুুরুরী। তাহলে মুসুল্লিদের জ্ঞানের খোরাক অর্জিত হবে। মসজিদে নামাজীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
তাই কুরআন-হাদীসে পারদর্শী এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে তথ্যভিত্তিক আলোচনা করেন এমন আমলদার ইমাম ও খতিবদের মসজিদে নিয়োগ দিলে আশা করা যায় সাধারণ মানুষরা কিছুটা হলেও উপকৃত হবে। আল্লাহ সবাইকে প্রকৃত মুসলিম হিসেবে কবুল করুন। আমীন।।
প্রতিক্ষণ/এডি/সাইমুম