জোনাকির আলো রহস্য…
ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডট কম:
রাতের আকাশের তারার মত পৃথিবীর বুকে মিটমিট করে জ্বলতে থাকা ছোট্ট পোকাটির নাম জোনাকি। শহরের আলোয় এই সুন্দর পোকাটি নজরে না পড়লেও গ্রামে রাতের বেলা অসংখ্য জোনাকি পোকা দেখা যায়। মনে হয় রাতের আকাশের তারা মাঠের ওপর নেমে এসেছে।
আমাদের বাঙলা সাহিত্যে অদ্ভুত সুন্দর এই পোকাটিকে রচিত হয়েছে অসংখ্য গল্প, কবিতা, উপন্যাস।কিন্তু আমরা কি কখনও ভেবে দেখেছি জোনাকি পোকা ঠিক কী কারণে জ্বলে এবং কিভাবে মিটিমিটি আলো ছড়িয়ে আপন ঢঙে প্রকৃতির রঙ বদলায়?
খুব কাছ থেকে না দেখলে জোনাকির আলো সবার কাছে রয়ে যায় একটি রহস্য হিসেবেই। জোনাকি পোকার ইংরেজি নাম ‘ফায়ার ফ্লাই। এদের জীবনকাল শুধুমাত্র ১ থেকে ৩ সপ্তাহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অর্থাৎ একটি জোনাকি পোকা খুব বেশি হলে মাত্র ৩ সপ্তাহ আলো জ্বেলে দিতে পারে পৃথিবীর বুকে।
প্রধানত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকায় বাস করে জোনাকি পোকা। এরা শুধুমাত্র আমাদের বিনোদন যোগাতে আলো জ্বালিয়ে ঘুরে বেড়ায় না। এর পেছনে একটি বিশেষ কারণ রয়েছে। আমাদের দেশে শুধুমাত্র সবুজ আলোর জোনাকি পোকা দেখা যায়। কিন্তু অন্যান্য অনেক দেশে লাল আলো বিচ্ছুরণকারী জোনাকি পোকারও দেখা মেলে।
জোনাকির আলো জ্বালানো নেভানোর বিষয়টি যদি লক্ষ্য করলে দেখা যায়, প্রত্যেক জোনাকির আলো জ্বলা-নেভার ভিন্ন ভিন্ন সময় রয়েছে। আর এ জ্বলা-নেভার ভিন্নতা সৃষ্টি হয় তাদের প্রজাতিগত ভিন্নতা থেকে।
জোনাকির উদরে দুই ধরনের রাসায়নিক পদার্থের বিক্রিয়ার ফলে সৃষ্টি হয় এ আলোকদ্যুতির। এই আলো বিচ্ছুরণের মূল মাধ্যম হলো লুসিফারিন (luciferin) নামক একটি রাসায়নিক পদার্থ। জোনাকি পোকার দেহে এই কেমিক্যালটি উৎপাদন হয়, যা বাতাসের অক্সিজেনের সাথে মিশে আলো তৈরি করে। এর থেকেই আমাদের মনে হয় জোনাকি পোকা আলো বিচ্ছুরণ করে।
পুরুষ জোনাকিরা স্ত্রী জোনাকিকে আকর্ষণ করার জন্য অন্ধকারে ঝোপ-জঙ্গলে তাদের আলো জ্বলা-নেভা করে। এ সময় কোনো স্ত্রী জোনাকি সেই আলো দেখে আকর্ষিত হয় এবং পাল্টা আলো জ্বলা-নেভা করে তার উত্তর দেয়। এভাবে স্বাভাবিক কার্যক্রম চললেও মাঝে মাঝে এ আলো তাদের জন্য ফাঁদ হয়ে ধরা দেয়। কারণ অনেক জোনাকি আবার এ আলো দেখে আকর্ষিত হয়ে গিয়ে দেখে, ডেটিংয়ের বদলে সেখানে অপেক্ষা করছে মৃত্যু। অনেক জোনাকি তাদের উদরপূর্তির জন্যও এ কৌশল কাজে লাগায়।
প্রতিক্ষণ/এডি/পাভেল