টানা ৪৮ বছর না ঘুমিয়ে আছেন তিনি

প্রকাশঃ জুন ৩০, ২০২১ সময়ঃ ৯:৩৪ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:৩৪ অপরাহ্ণ

টানা কতদিন না ঘুমিয়ে থাকতে পারবেন? একথার উত্তরে অনেকেই হয়তো বলবে, সর্বোচ্চ তিন থেকে চার দিন ও রাত। এরপরও দেখা যাবে একারণে আপনার শরীর খুব দুর্বল হয়ে পড়েছে। অনবরত শুধু ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কয়েকদিন কেটে যাবে। এ নির্ঘুম রাতের কারণে আপনার শরীরে যে অস্বস্তি শুরু হয়েছে তার সমাধান হল একমাত্র ঘুম, ঘুম, এবং ঘুম। 

মানুষের মতো সব প্রাণীরাও ঘুমিয়ে থাকে। এমনকি মাছও ঘুমায়, তবে তারা অর্ধ মস্তিষ্ক জাগ্রত রেখে ঘুমিয়ে থাকে। এমনকি উটপাখিরাও বিশ্রাম গ্রহণের সময় সজাগ দৃষ্টি রাখতে পারে শিকারি ধরতে। ঘুমালে মস্তিষ্ক বিশ্রাম পায়। আর ঘুম না হলে মস্তিষ্ক সঠিকভাবে তার ক্রিয়াকলাপ সম্পাদন করতে পারে না। বুঝতেই পারছেন প্রাণীকূলের জন্য ঘুম কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিভিন্ন গবেষণা অনুসারে, ঘুম ব্যতীত কোনো মানুষই সুস্থভাবে দীর্ঘদিন বাঁচতে পারে না। তবে কতক্ষণ একজন ব্যক্তি ঘুম ছাড়া থাকতে পারেন? টনি রাইট নামক এক ব্যক্তি ১৯৬৪ সালে টানা ২৬৪ ঘণ্টা অর্থাৎ ১১ দিন না ঘুমিয়ে গিনেস রেকর্ডে নাম লেখান।

তবে জানেন কি, ভিয়েতনামের এক কৃষক টানা ৪৮ বছর ধরে না ঘুমিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। ৭৯ বছর বয়সী এই ব্যক্তি না ঘুমিয়েও দিব্যি সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বেঁচে আছেন। ১৯৪২ সালে ভিয়েনামে জন্ম নেন এনগোক থাই। পেশায় তিনি একজন কৃষক। এই অদ্ভূত কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি বিশ্বব্যাপী পরিচিত লাভ করেছেন।

দীর্ঘদিন না ঘুমিয়ে থাকার কারণ হিসেবে এই ব্যক্তি জানান, ১৯৭৩ সালের একদিনে হঠাৎ এনগোক থাইয়ের জ্বর আসে। তারপর থেকে তিনি চোখের পলক ফেলতেই যেন ভুলে গেছেন। তার বিরল এই রোগ সম্পর্কে জানা নেই কারও। চিকিৎসকরাও তার অনিন্দ্রার পেছনের কারণ উল্লেখ করতে পারেননি।

দীর্ঘদিন না ঘুমানোর ফলে মানবদেহে নানা সমস্যা দেখা দেয়। যেমন- বিরক্তিভাব, জ্ঞান কমে যাওয়া, বিভ্রান্তি, অতিরিক্ত রাগ, অবসন্নতা, মাথা ঘোরা, মাথাব্যথাসহ বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ পায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, অনিন্দ্রার কারণে মস্তিষ্ক ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে রোগী মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন।

তবে এনগোক থাইয়ের মতে, টানা ৪৮ বছর না ঘুমিয়ে থাকলেও তার তেমন কোনো শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়নি। শরীরেও তার অ্যানার্জির কমতি নেই। প্রতিদিন অন্তত ২ মাইল ঘাড়ে ১১০ বস্তা চাল বহন করেন এনগোক। পাশাপাশি কৃষিকাজ, মাছ চাষ ইত্যাদিতে পটূ তিনি। চোখ বন্ধ রাখার অনেক চেষ্টা করেছেন তিনি, তবুও কাজ হয়নি। ঘুমের ওষুধ, মদসহ নানা ধরনের ভেষজ উপাদানও তার চোখে ঘুম এনে দিতে পারেনি।

চিকিত্সকরা তাকে পরীক্ষা করেও দেখছেন, তবে শারীরিক কোনো জটিলতা তাদের চোখে পড়েনি। শুধু লিভারের কার্যকারিতা কিছুটা কমেছে। তাছাড়া সামগ্রিকভাবে সুস্থতার সঙ্গেই দিন কাটাচ্ছেন তিনি। এ বিষয়ে এনগোক বলেন, ‘অনিদ্রা আমার স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলেছে কি-না তা আমি জানি না। তবে আমি এখনও সুস্থ আছি এবং খামারের কাজগুলোও ঠিকমতো করতে পারি।’

৪৮ বছর ধরে কীভাবে নিদ্রাহীন আছেন তিনি? এ বিষয়টি সত্যিই অলৌকিক। বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু ইনসোমনিয়ার রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ঘুম এবং জাগ্রত হওয়ার ব্যবধান তারা বুঝতে পারেন না। এই ব্যবধান পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতাটি তারা হারিয়ে ফেলেন। তারা শুধু অনুভব করেন ‘বিশ্রাম নিচ্ছেন’। তারা হয়তো ‘মাইক্রো ন্যাপস’ (ছোট ঘুম) নিয়ে থাকেন। যা কয়েক মিনিটের জন্য হতে পারে। এনগোকও হয়তো এভাবেই দিন পার করছেন!

এনগোকের নিদ্রাহীনতার এই অলৌকিকতা মিডিয়ার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এখনও তাকে নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি। সবাই যখন ঘুমিয়ে সময় কাটায়; এনগোক তখন খামারে শ্রম দেন কিংবা রাত জেগে পুকুরের মাছ পাহারা দিয়ে থাকেন। ১৯৭৩ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ৪ লাখ ২০ হাজার ৪৮০ ঘণ্টা না ঘুমিয়ে আছেন এনগোক!

সূত্র: দ্য ইপোচ টাইমস

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

September 2024
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
20G