দেশের সব মানুষ ই-সেবা পাবে
ডেস্ক রিপোর্ট
তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের সব মানুষের কাছে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সেবাগুলো ২০২১ সালের মধ্যে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা উল্লেখ করা হয়েছে সম্প্রতি প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা ‘জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতি ২০১৫’তে।
সুনির্দিষ্ট একটি রূপকল্প, ১০টি উদ্দেশ্য, ৫৪টি কৌশলগত বিষয় এবং ২৩৫টি করণীয় বিষয়ের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে নতুন এ নীতি। এর রূপকল্প হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির সম্প্রসারণ ও বহুমুখী ব্যবহারের মাধ্যমে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক সরকার প্রতিষ্ঠা, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, সুলভে জনসেবা নিশ্চিত করা এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন।
জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) নীতিতে উল্লেখ করা ১০টি উদ্দেশ্যের মধ্যে রয়েছে সামাজিক দায়বদ্ধতা, নীতির প্রতি আস্থা ও দায়বদ্ধতা, সর্বজনীন প্রবেশাধিকার, শিক্ষা ও গবেষণা, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, রফতানি উন্নয়ন, আইসিটি সহায়ক বিষয়গুলো, স্বাস্থ্যসেবা, পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং উৎপাদনশীলতা। আর এসব উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ৫৪টি কৌশলগত বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার জন্য ২৩৫টি করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো তদারকির দায়িত্ব পালন করবে আইসিটি বিভাগ।
এসব করণীয় বাস্তবায়নে নির্ধারণ করা হয়েছে তিন ধরনের সময়স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি। স্বল্পমেয়াদি করণীয় ২০১৬ সাল, মধ্যমেয়াদি করণীয় ২০১৮ এবং দীর্ঘমেয়াদি করণীয় ২০২১ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে।উল্লেখ্য, এর আগে ২০০৯ সালে জাতীয় আইসিটি পলিসি করা হয়। এতে একটি রূপকল্পের আওতায় ১০টি উদ্দেশ্য, ৫৬টি কৌশলগত বিষয় এবং ৩০৬টি করণীয় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে আইসিটি সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন পূরণের জন্য প্রযুক্তির প্রয়োগ ও প্রসারে পালনীয় নির্দেশিকা হিসেবে ২০০৯ সালে প্রথম নীতিমালাটি করা হয়। গত ছয় বছরে দেশে আর্থসামাজিক অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন, আইসিটির অভাবনীয় সম্প্রসারণ ও নতুন উদ্ভাবনের কারণে নীতিমালাটি হালনাগাদ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, নতুন নীতিমালার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী ৭০ শতাংশ মানুষ সমাজের পিছিয়ে পড়া, বিশেষ করে প্রতিবন্ধী নারী ও শিশুর উন্নয়নকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
নতুন আইসিটি নীতিতে করণীয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৮ সালের মধ্যে ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার প্রণয়ন, একই সময়ের মধ্যে টেলিঘনত্ব ১০০ শতাংশ, আগামি বছর উপজেলা পর্যায়ে ১ এমবিপিএস ও ২০২১ সাল নাগাদ সারাদেশে ১০ এমবিপিএস গতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিতকরণ, প্রতিবন্ধীদের জন্য সব সরকারি ওয়েবসাইটে প্রবেশগম্যতা নিশ্চিতকরণ, সারাদেশে সমব্যয়ে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেয়া, গ্রাহক সেবার মান বৃদ্ধিতে ২০১৮ সালের মধ্যে এমএনপি ও টোল ফ্রি নম্বর চালু এবং ২০২১ সালের মধ্যে সারাদেশে তারবিহীন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালু।
এছাড়া কৃষিপণ্যের মূল্য সেলফোন ও অনলাইনে সরবরাহের ব্যবস্থাকরণ, সরকারি সব প্রতিষ্ঠানে আইসিটি সেল স্থাপন করা, সব সরকারি-বেসরকারি চাকরির জব ব্যাংক তৈরি করা হবে। নতুন আইসিটি নীতিতে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের মধ্যে ওয়ার্ড ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন এবং ২০২১ সালের মধ্যে দেশের সব লাইব্রেরিতে ই-সেবা ও ই-বুক তৈরির কার্যক্রম সম্পন্ন হবে, আইসিটি শিল্প উন্নয়ন তহবিল গঠন, আইসিটি খাতের প্রতিষ্ঠানের মান নিয়ন্ত্রণে আলাদা কর্তৃপক্ষ গঠন, ২০১৮ সাল নাগাদ আইসিটি প্রতিষ্ঠানে নারী জনবল ৫০ শতাংশে উন্নীতকরণ, ২০১৮ সাল পর্যন্ত আইসিটি খাতের উদ্যোক্তাদের আয়কর মওকুফ, সাইবার অপরাধ দমনে আইসিটি বিভাগের তত্ত্বাবধানে সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি গঠন, সাইবার অপরাধ ও মেধাস্বত্ব লঙ্ঘনের বিচারে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে।
প্রতিক্ষণ/এডি /এস. আর. এস.