ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যবসা!
জহির উদ্দিন মিশু
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য যত্রতত্র কালেকশন ও চাঁদা উঠানোটা বর্তমানে এক শ্রেণীর মানুষের জন্য লাভজনক পেশায় পরিণত হয়েছে। বাজার, বাসস্ট্যান্ডের পাশাপাশি জনবহুল স্থানগুলোতে এদের অবাধ বিচরণ। বিশেষ করে শহরের লোকাল বাসে হাতে রিসিট নিয়ে প্রত্যেক যাত্রীর সামনে চাঁদা চাওয়া যাত্রীর জন্য চরম বিব্রতকর। অনেক স্থানে দেখা যায় ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে মাইকে কালেকশন চলছে।
এ যেনো বিনা পুঁজির ব্যবসা। কিন্তু, তাই বলে মসজিদের নামে! মসজিদ-মাদ্রাসার জন্য দান সংগ্রহের নামে, ধর্মপ্রাণ মানুষকে বোকা বানাচ্ছে প্রতারক চক্র। রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তার পাশে ধর্মীয় বয়ান করে দৈনিক বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, এভাবে মসজিদ-মাদ্রাসার জন্য রাস্তায়-রাস্তায় ভিক্ষাবৃত্তির মতো অর্থ সংগ্রহ, ইসলামসম্মত নয়।
রাজধানীর কাকলীর প্রধান সড়কে সকাল দশটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত জনে-জনে হাত পাতছে ৫ জনের একটি গ্রুপ। কিন্তু কোথায় মসজিদ, কোথায়ইবা মাদ্রাসা, শুধু সওয়াবের আশায় দান করছেন ধর্মপ্রাণ মানুষ।
খোঁজ নিলে দেখা যায়, এ কালেকশন বা চাঁদার মাধ্যমে আদায়কৃত অর্থের কোন অংশই মসজিদ কোষাগারে জমা হয় না। এটা সচেতন দানশীল মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলতে বাধ্য। অনেকে পুরো বিষয়টাকে মিথ্যা মনে করে একসময় দানের হাতও গুটিয়ে নেন।
এছাড়া, রাজধানীর হাতিরঝিল, এফডিসি মোড়, মহাখালী, কাকলী ও বনানী পর্যন্ত একই সড়কে এমন অন্তত ৭টি পয়েন্টে ভিক্ষাবৃত্তির আদলে মসজিদের নামে দান সংগ্রহ করা হয়।
ইসলামী চিন্তাবিদের মতে, যেহেতু মসজিদ হলো অত্যন্ত সম্মানীত প্রতিষ্ঠান, তাই এর জন্য দান করতে হবে সম্মানিত পদ্ধতিতেই। এক্ষেত্রে দানের টাকা-পয়সা মসজিদের সীমানার মধ্যে থাকা দান বাক্সে কিংবা সঠিক দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির হাতে দেয়া যেতে পারে।
মসজিদের জন্য কালেকশন প্রয়োজন আছে নিশ্চয়। এভাবে চাঁদা সংগ্রহে কুরআন ও হাদিসের কোথাও কি বলা হয়েছে? সংগৃহীত চাঁদার কতটুকু ব্যয় হচ্ছে মসজিদ উন্নয়নে? দানকারীর বাবা-মাকে নূরের টুপি পরিয়ে দেয়া হবে এমনটি কি আছে কোনো হাদিসে? ইসলাম সমর্থন না করলেও কিছু লোক একে নিজেদের পেশা বানিয়ে নিয়েছে। মসজিদের চাঁদা সংগ্রহের চেয়ে যেখানে নিজেদের উপার্জনটাই বড়। সংগৃহীত টাকার কোনো হিসাব নেয়া সম্ভব হয় না। আদায়কারী যা বলেন তাই মেনে নিতে হয় কর্তৃপক্ষকে। তাই তো কমিটির আগ্রহ না থাকলেও আদায়কারীর আগ্রহই থাকে বেশি। এভাবে হাতপাতার কারণে যেমন ইসলামের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে, তেমনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে দানকারীর পরিমাণও কমছে।
মসজিদ আল্লাহর ঘর, আল্লাহর ঘরের ব্যবস্থাপনাও ওই মানের হওয়া উচিত। যে কোনো ধরনের ভিক্ষাবৃত্তি, কালেকশন ও ঘুরে ঘুরে চাঁদা উত্তোলন আল্লাহর ঘরের অবমাননার শামিল। যারা আল্লাহর ঘরকে ভালোবাসেন তারা নিজে থেকেই ব্যয়ভার বহনে এগিয়ে আসবেন।
এ সম্পর্কে বিস্তারিত রয়েছে নিম্নোক্ত ভিডিও ফুটেজে:-
https://www.youtube.com/watch?v=LsWZJPhhXKo
এ বিষয়ে ইতোপূর্বে প্রথম আঁলো, চ্যানেল ২৪, আমার দেশ অনলাইন, দৈনিক বর্তমান, আলোকিত বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।