ধানের দাম পাচ্ছেন না কৃষক

প্রকাশঃ নভেম্বর ২৪, ২০১৫ সময়ঃ ১২:৩১ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১২:৩১ অপরাহ্ণ

জেলা প্রতিবেদক

farmerখাদ্যশস্যে উদ্বৃত্ত জেলা হিসেবে পরিচিত নওগাঁয় ধান-চাল ব্যবসায় ধস নেমেছে। কৃষকরা একদিকে উৎপাদিত ধানের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না, অন্যদিকে ঋণের বোঝায় বন্ধ হতে চলেছে চালকলগুলো। এজন্য ভারত থেকে এলসির মাধ্যমে অবাধে চাল আমদানি করাকে দায়ী করেছেন ভুক্তভোগীরা। ঘোষিত ধান-চাল সংগ্রহের কর্মসূচি সরকারের বাস্তবায়ন করা উচিত মনে করেন তারা।

নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সভাপতি সরোয়ার আলম কাজল বলেন, ‘আমরা বারবার এলসির মাধ্যমে ভারত থেকে চাল আমদানি না করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। সর্বশেষ আমরা এলসির চালের ওপর ৩০ শতাংশ হারে ভ্যাট-ট্যাক্স আরোপ করার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত সরকার কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।’

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, জেলার ১১ উপজেলায় প্রায় এক হাজার দেড়শ হাসকিং ও ৫৫টি অটোমেটিক চালকল রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে ৮০ শতাংশ চালকল বন্ধ। আর যে ২০ শতাংশ চালু রয়েছে, তাও চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। নওগাঁর রানীনগর উপজেলার আবাদপুকুর হাট ধানের জন্য প্রসিদ্ধ। গত রোববার এ হাট ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। উৎপাদিত ধান বাজারে বিক্রি করে লাভ দূরের কথা, উৎপাদন খরচই উঠছে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা।

হাটে আসা কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, ধানের গড় উৎপাদন খরচ পড়েছে মণপ্রতি ৭০০ টাকা। সেখানে ধান বিক্রি করতে হলো ৬০০ টাকা দরে। কৃষক মিঠু বিশ্বাস বলেন, বিনা-৭, জিরাশাইল, মামুন স্বর্ণা ধানের দাম গত বছরের চেয়ে মণপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে কৃষকের লোকসান হচ্ছে। একই কথা বললেন হাটে ধান বিক্রি করতে আসা কৃষক জাহাঙ্গীর আলম ও কৃষক বজলুর রহমান বুলু।

ব্যাংক ঋণের সুদ ‘এক ডিজিটে’ নামিয়ে আনার উল্লেখ করে সরোয়ার আলম কাজল বলেন, উচ্চ সুদের কারণে ব্যবসায়ীরা ঋণ সমন্বয় করতে পারছেন না। ফলে শত শত কোটি টাকা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে এরই মধ্যে জেলায় বন্ধ হয়ে গেছে ৮০ শতাংশ মিল।

জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, ব্যাংকের উচ্চ সুদের বোঝা মাথায় নিয়ে এরই মধ্যে নওগাঁর দিশা অটোমেটিক রাইস মিল, নাসিম অ্যান্ড ব্রাদার্স অটোমেটিক রাইস মিল, তরফদার অটোমেটিক রাইস মিল, খান অটোমেটিক রাইস মিল, মাস্টার চালকল, সকিনা চালকল, কল্পনা চালকল, নাজমা চালকল, সাপাহারা চালকল, তানজিলা চালকল, মোহাম্মদ আলী চালকল, ভাইবোন চালকল, আকন্দ চালকল, মামার দোয়া চালকলসহ নওগাঁর বেশ কয়েকটি চালকল দুই-তিন বছর ধরে উৎপাদনে যেতে না পারায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের জন্য বেশ কয়েকজন চাল ব্যবসায়ী মিল বিক্রির উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। দুই-তিন বছর ধরে বন্ধ থাকা এসব মিলের ব্যাংক ঋণের পরিমাণ কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকা বলে জানান ফরহাদ হোসেন চকদার।

নওগাঁ ধান-চাল আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিরোদ বরণ সাহা চন্দন বলেন, ধান উৎপাদনের ভরা মৌসুমে বিদেশ থেকে চাল আমদানি ব্যবসায়ী এবং কৃষকদের বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিয়েছে। জেলার এক হাজার ২০০ চালকলের মধ্যে এখন কোনোরকমে চার শতাধিক চালকল চালু আছে। বাজারে চালের চাহিদা না থাকায় এই মিলগুলোতে যে পরিমাণ চাল উৎপাদন হচ্ছে, তার ৭০ শতাংশ মজুদ করে রাখতে হচ্ছে। চাল মজুদ রাখার কারণে ব্যবসায়ীদের মূলধন আটকে থাকছে। বাড়ছে ব্যাংক ঋণের সুদ। তিনি বলেন, এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামী দুই মাসের মধ্যে এই মিলগুলোও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে নিরোদ বরণ সাহা চন্দন বলেন, সরকার সম্প্রতি মাত্র দুই লাখ টন চাল সরকারিভাবে কেনার ঘোষণা দিয়েছে। এ মৌসুমে কমপক্ষে ছয়-সাত লাখ টন চাল সরকারের কেনা উচিত। সবচেয়ে বেশি জরুরি বিদেশ থেকে চাল আমদানি বন্ধ করে দেশের বাজার থেকে সরকারিভাবে চাল কেনা। এর ফলে চালের বাজার কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও তার ফলে ব্যবসায়ীরা তাঁদের মজুদকৃত চাল বিক্রি করতে পারবেন।

প্রতিক্ষণ/এডি/এফটি

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G