নতুন মাছের সন্ধান
ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডটকম:
মাছ শীতল রক্ত বিশিষ্ট জলজ মেরুদণ্ডী প্রাণীগোষ্ঠী যারা জোড়-বিজোড় পাখনার সাহয্যে সাঁতার কাটে এবং ফুলকার সাহায্য শ্বাস-প্রশ্বাস চালায়। সাধারণত দেহের বহির্ভাগ আঁশ দ্বারা আচ্ছাদিত তবে আঁশ নেই এমন মাছের সংখ্যা একেবারে কম নয়। এরা সমুদ্রের লোনা পানি এবং স্বাদু পানির খাল, বিল, হাওর, বাওর, নদী, হ্রদ, পুকুর, ডোবায় বাস করে। পাহাড়ী ঝর্ণা থেকে শুরু করে মহাসাগরের গহীন অতল স্থানে অর্থাৎ যেখানেই পানি রয়েছে সেখানেই মাছের অস্তিত্ব দেখতে পাওয়া যায়।
তবে সেটা যদি হয় মাইনাস ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর ২,৪৩০ ফুট নিচে! তাহলে কি রীতিমত অবাক হবার মত নয়? তেমনি একটি বিষয়ের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানিরা। অ্যান্টার্কটিক মহাদেশে বিশাল এক বরফের খন্ড। কত বড় হতে পারে এ বরফ খন্ডের আয়তন? ফ্রান্সের সমান ! যেমন বিশাল এর আয়তন তেমন পুরু এ বরফ খন্ডটি। ২,৪৩০ ফুট পুরু। বরফ খন্ডটির নাম ‘রস আইস শেলফ’। বরফের নিচে চির অন্ধকার। তাপমাত্রা মাইনাস ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
২,৪৩০ ফিট পুরু এই বরফের নিচে চির অন্ধকার এক স্থানে পাওয়া গেছে এক প্রজাতির মাছের বসবাসের সন্ধান। মাছের বসবাস এবং বিচরনের এ আবিষ্কারে বিজ্ঞানীরা যারপর হতবাক। কারণ বিশাল বড় এবং পুরু চির অন্ধকার এ বরফের নিচে প্রাণ ধারনের দৃশ্যমান তেমন কোন ব্যবস্থার সন্ধান এখনো বিজ্ঞানীদের নজরে আসেনি। তবে রস আইস শেলফে ড্রিল করে বিজ্ঞানীরা এ মাছের সন্ধান পেয়েছেন।
নেব্রাস্কা লিঙ্কন বিশ্ববিদ্যালয়ের খননকারী দল গর্ত করে নিচে ক্যামেরা পাঠাল। ক্যামেরায় প্রাণীর অস্তিত্ব ধরা পড়ল এবং সেটা মাছ বলেই মনে হল তাদের কাছে। প্রথমে তারা এটা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। কিন্তু কয়েক ঘন্টা পরেই প্রায় ৩০ টি মাছের একটি ঝাক ধরা পড়ল ক্যামেরায়। মাছগুলোর গায়ের রং হালকা গোলাপী। মাছটির গঠন অনেকটা আমাদের দেশে পুকুর খাল বিলে পাওয়া চেলা মাছের মত। তবে মাছটি এত স্বচ্ছ যে, শরীরের ভেতরের কাটাকুটি দেখা যায়। আর লম্বায় ১৫ সেন্টিমিটার।
এত বিশাল আয়তন এবং পুরু বরফ স্তরের নিচে মাইনাস ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় চির অন্ধকার স্থানে মাছের সন্ধান পাওয়ায় জীবন ধারন ক্ষমতা সম্পর্কে প্রচলিত জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বিজ্ঞানীদের মধ্যে।
নর্দান ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্তিক প্রফেসর পাওয়েলর মতে তারা সমাজবদ্ধ হয়েই সেখানে বসবাস করছে। ঘটনাক্রমে যে সেখানে ঢুকে পড়েছে তা নয়। সেখানে কালো, কমলা এবং লাল রংয়ের আরো ছোট ছোট কয়েক প্রজাতির মাছ দেখা গেছে। সূর্যের আলো যেখানে পৌছেনা সেখানে এসব মাছের জীবন ধারনের উৎস কি তা নিয়ে গবেষনা করছেন গবেষকরা।
তবে তারা এখনো পর্যন্ত তাদের খাদ্যের নির্দিষ্ট কোন উৎস খুঁজে পাননি। কারো কারো মতে রস সাগরে এক ধরনের ভাসমান উদ্ভিদ জন্মে যা ছয় থেকে সাত বছরের ব্যবধানে বিশেষ প্রক্রিয়া সেখানে গিয়ে পৌছে থাকতে পারে। সূর্যের আলো ছাড়াও অভ্যন্তরীন রাসায়নিক শক্তির কারনে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে যা হতে পারে তাদের খাদ্যের উৎস।
এর আগে সমুদ্রের উপরিভাগ থেকে ২ মাইল নিচে এক ধরনের জীবানু পাওয়া গেছে যারা তাদের নি:শ্বাসের সাথে সালফেট ত্যাগ করে। সালফেট হল সালফার এবং অক্সিজেনের সমন্বয় যা সমুদ্রের পানিতে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়।
প্রতিক্ষণ/এডি/সুমন