নমনীয়তা এক আদর্শের নাম
মাওলানা নেছার উদ্দীন আহমাদ
নমনীয়তা একটি আদর্শ ও গুণের নাম। যাদের মধ্যে এ গুণটি রয়েছে, তারা সম্মানিত ও শ্রদ্ধার পাত্র হন । মানুষের মধ্যে নমনীয়তা ব্যতীত অন্য গুণাবলি থাকলেও তা কোনো কাজে আসে না। নমনীয়তা এমন একটি গুণ, যা অন্য গুণাবলিকে সফলতার সঙ্গে প্রকাশ করে।
ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সব শ্রেণী-পেশার মানুষের জন্য নম্র, ভদ্র, মার্জিত, রুচিশীল, নমনীয় ব্যবহারের বিকল্প নেই। নমনীয় ব্যবহার না করার কারণে পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্ব, দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব, আন্তর্জাতিক পরিমলে দ্বন্দ্বের এভাবে বিশ্বব্যাপী আজ অশান্তি ছড়িয়ে পড়ছে।
একে অপরের প্রতি সৃষ্টি হয়। অসম্মান, কটূক্তি, কটুবাক্য, কটু ভাষণ, কড়া কথা, চড়া কথা, খোঁটা, পরচর্চা, বাজে কথা, গালি, অভিশাপ, অশ্লীল কথা, কটাক্ষ, ঠাট্টা, উপহাস, তিরস্কার, ধিক্কার, ধমক, ভর্ৎসনা, গর্জন, তর্জন, অশালীন কথা, অপবাদের মূল কারণ পারস্পরিক শ্রদ্ধা-ভক্তি না থাকা, অহঙ্কার করা ও নম্রতার অভাব।
সর্বদা মসজিদ, মাদরাসা, মন্দির, গির্জাসহ সব ধর্মীয় উপাসনালয় থেকেই বলা হচ্ছে সহিংসতা বন্ধ করুন, শান্তি ফিরিয়ে আনুন, মূলত পারস্পরিক সদ্ব্যবহারের অভাবে আজ দেশের বেহাল অবস্থা। অর্থনীতির নাজুক অবস্থা। অথচ সুন্দর ব্যবহার সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মানুষের সঙ্গে ভদ্রোচিত আলাপ করো। অন্য শ্রেণীর লোকের প্রতি অবজ্ঞাভরে বিদ্রূপ করো না।’ এছাড়া মুসনাদে আহমদে এক হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যে বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ছোটদের প্রতি স্নেহ করে না, সে আমার উম্মত নয়।’ নমনীয়তা ও উদারতার দৃষ্টান্ত নবী-রাসূলদের (আ.) জীবন থেকে শিক্ষা নেয়া দরকার। তায়েফের ময়দানে মহানবী (সা.) কে নির্যাতনের সময় আল্লাহর নির্দেশে পাহাড় নিয়ন্ত্রণকারী ফেরেশতা বলেছিলেন, হে নবী! আপনি যদি চান, তবে আমি তায়েফবাসীকে মক্কার দুই পাহাড় একত্রিত করে পিষে মারি। কিন্তু মহানবী (সা.) বলেছিলেন, না।
অনুরূপভাবে হজরত ইউসুফ (আ.) তার অত্যাচারী ভাইদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘আজ তোমাদের বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ ও অনুযোগ নেই।’ (সূরা ইউসুফ : ৯২)।
নমনীয়তা শেখার জন্য আমাদের খুশুখুুজু বজায় রেখে সালাত আদায় করতে হবে। আমরা অনেকেই সালাত আদায় করি অথচ সবার মধ্যে এ গুণটি নেই। আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হলে নমনীয়তার সঙ্গেই দাঁড়াতে হয়, সে কথা আমরা ভুলে যাই। যে কারণে নিয়মিত সালাত আদায়ের পরও চরিত্র পরিবর্তন হয় না। সালাতে আমরা নমনীয়তার শিক্ষা গ্রহণ করলে তার মাধ্যমে আমরা আমাদের পরিবার রাষ্ট্র ও সমাজের যাবতীয় সমস্যা সমাধান করতে পারব।
লেখক: মাওলানা নেছার উদ্দীন আহমাদ
খতিব, ছফেদিয়া জামে মসজিদ মির্জাগঞ্জ, পটুয়াখালী