নানান দেশের জাতীয় ফল (পর্ব ১)
প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ
ছোটবেলায় আমরা সবাই সাধারণ জ্ঞান পড়তে গিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল, জাতীয় ফল, জাতীয় পাখি – এই ধরণের প্রশ্নগুলো পড়তাম। আর এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা সত্যিই দরকারি। কারণ একটি দেশের জাতীয় বিষয়গুলো সে দেশের পরিচয় ও প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে আমাদের দারুণভাবে সাহায্য করে।
শুধু বাংলাদেশেরই নয়, পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশেরই জাতীয় বিষয় থাকে। আজকে আমরা পৃথিবীর ১০টি দেশের জাতীয় ফল চিনে নেওয়ার চেষ্টা করবো।
১। কাঁঠাল – কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল। থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম, জিঙ্ক এবং নায়াসিনসহ বিভিন্ন প্রকার পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ গ্রীষ্মকালীন সুমিষ্ট এই ফলটি। কাঁঠাল শুধু বাংলাদেশেরই না, শ্রীলংকারও জাতীয় ফল।
২। আম – আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের জাতীয় ফল আম। ভারতে আদি-অনাদিকাল থেকেই এই সুমিষ্ট ও রসালো ফলটির ফলন হয়। এইভাবে আম ভারতীয়তার সঙ্গে জড়িত। বিখ্যাত মুঘল সম্রাট আকবর দ্বারভাঙ্গার লক্ষী বাগে প্রায় ১০০,০০০ আম গাছের চারা রোপণ করেছিলেন। ভিটামিন এ, সি ও ডি পরিপূর্ণ আম বিভিন্ন জাত অনুযায়ী মে থেকে জুলাই মাস সময়কালে পেকে থাকে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, আম পাকিস্তানেরও জাতীয় ফল। তবে শুধু গ্রীষ্মকালীন জাতীয় ফল!
৩। পেয়ারা – পাকিস্তানের গ্রীষ্মকালীন জাতীয় ফল আম হলেও শীতকালীন জাতীয় ফল পেয়ারা। পেয়ারা গাছে বছরে দু-বার অর্থ্যাৎ বসন্ত ও বর্ষাকালে ফুল ধরে; বসন্তের ফুলের ফল বর্ষায় পাকে আর বর্ষার ফুলের ফল পাকে শীতে। শীতের ফলই গুণমানে উৎকৃষ্ট আর বাজারদর ভালো থাকায় চাষীদের কাছে তা বেশ লাভজনক। ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম প্রভৃতি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ পেয়ারার প্রায় ১০০টিরও বেশি প্রজাতি আছে। মেক্সিকো, মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া প্রভৃতি স্থানে পেয়ারা বেশী জন্মে।
৪। পেঁপে – মালয়েশিয়ার জাতীয় ফল হওয়ার সম্মান লাভ করেছে পেঁপে। এর আয়ুর্বেদিক নাম অমৃততুম্বী। পেঁপেঁকে জাতীয় ফলের মর্যাদা দেওয়া হলেও এটি আসলে এক প্রকার সবজি। খাদ্যশক্তি, ভিটামিন সি, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন সমৃদ্ধ পেঁপেঁ প্তায় সারা বছরই পাওয়া যায়।
৫। আপেল – আপেল ইংল্যান্ড ও ভুটানের জাতীয় ফল। আপেল সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে, “দিনে একটি আপেল খান, রোগ মুক্ত জীবন পান”। কারণ আপেলে মোটামুটি সব পুষ্টি উপাদানই একসাথে আছে, যা অন্য কোন ফলে নেই। আপেল হেমন্তকালে পাকে।
৬। লিচু – লিচুর আদি নিবাস চীনে। তবে চীন নয়, জাপানের জাতীয় ফলের নাম লিচু। লিচু গ্রীষ্মকালীন ফল। সুমিষ্ট স্বাসদের জন্য লিচু রয়েছে বিশেষ খ্যাতি। ক্যালরি, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স প্রভৃতি পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ লিচু।
৭। কলা – আমাদের অতি পরিচিত ফল কলা পোল্যান্ডের জাতীয় ফল। আমিষ, ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ কলা প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। কলা দুধের সাথে মিশে খাওয়া গেলে তা হতে প্রায় পুরোপুরি সুষম খাদ্য পাওয়া যায়। সাধারণত উষ্ণ জলবায়ু সম্পন্ন দেশসমূহে কলা ভাল জন্মালেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াই কলার উৎপত্তিস্থল হিসাবে বিবেচিত হয়। কলার বিভিন্ন বিখ্যাত জাতের মধ্যে রয়েছে সবরি, অমৃতসাগর, অগ্নিশ্বর, দুধসর, দুধসাগর, চাম্পা, চিনিচাম্পা, কবরী, চন্দন কবরী, জাবকাঠালী ইত্যাদি।
৮। অ্যাভোকাডো – মেক্সিকো ও মধ্য আমেরিকার স্থানীয় উদ্ভিদ অ্যাভোকাডো মেক্সিকোর জাতীয় ফল। অ্যাভোকাডো শরীরের জন্য উপকারী চর্বিতে পরিপূর্ণ। অ্যাভোকাডো গাছ সম্পূর্ণরূপে বৃদ্ধি পেতে ৮ থেকে ১০ বছর সময়ও লেগে যেতে পারে। উত্তর আমেরিকাতে অ্যাভোকাডো থেকে তৈরি গোয়াক্যামলি নামক এক প্রকার খাবার খুবই জনপ্রিয়। বাংলাদেশের কোন মেক্সিকান রেস্টুরেন্টে খোঁজ নিয়ে আপনিও এর স্বাদ নিতে পারেন!
৯। ডালিম – আজারবাইজানের জাতীয় ফলের নাম ডালিম। ডালিমের আরেক নাম বেদানা এবং একে হিন্দি, উর্দু, ফার্সি ও পশতু ভাষায় আনার বলা হয়। উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোতে এটি সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মৌসুমে জন্মে এবং দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলোতে মার্চ থেকে মে পর্যন্ত এটি জন্মে। ডালিম স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ উপকারী।
১০। আকি – জ্যামাইকার জাতীয় ফলের নাম আকি। ঐতহাসিক মতে, এই ফল জ্যামাইকা থেকে প্রথমে পশ্চিম আফ্রিকায় এসেছিলো। বিভিন্ন পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ আকির প্রায় প্রতি বছরই প্রচুর পরিমাণে ফলন হয়।
প্রতিক্ষণ/এডি/সাদিয়া