নিষিদ্ধ নগরীর গল্প…

প্রকাশঃ এপ্রিল ৮, ২০১৫ সময়ঃ ২:৪০ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৫:০৪ অপরাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডট কম.

images শত শত বছর ধরে হিমালয়ের উত্তর অংশে দাঁড়িয়ে আছে  রহস্যময় এই রাজ্যটি। সেখানে যে কী আছে সে ব্যাপারে সবার মনে রয়েছে অসংখ্য প্রশ্ন। রাজ্যটি চতুর্দিকে বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য পাহাড় ও গুহা। সেই পাহাড়ি গুহাগুলো নিয়েও রহস্য আর জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই।  দীর্ঘদিন মানুষের প্রবেশাধিকার না থাকা, দুর্গম পরিবেশ, লামাদের কঠোরতা ও পর্যটক নিষিদ্ধের কারণে বাইরের পৃথিবীর সবার কাছে এই রাজ্য  এক অচেনা জগত।

হ্যা আমি তিব্বতের রাজধানী লাসা নগরীর কথা বলছি যার প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট সগেন পো । তিনি ৬৪১ সালে তিনি একটি বিরাট জলাশয় ভরাট করে এখানে প্রাসাদ ও মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। তিব্বতের বিভিন্ন মন্দিরের ভেতরে সোনার তৈরি বড় বড় প্রদীপ মাখন দিয়ে জ্বালানো থাকে। চার হাজার ভরি ওজনের একটি প্রদীপও সেখানে আছে।

তিব্বতিদের জীবনে ধর্ম একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। তাদের প্রধান ধর্মগুরুর নাম দালাইলামা। বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা তিব্বতে ‘লামা’ নামে পরিচিত। ‘লামা’ শব্দের অর্থ ‘প্রধান’। আর ‘দালাইলামা’ শব্দের অর্থ ‘জ্ঞান সমুদ্রের সর্বপ্রধান’। সোনার চূড়া দেওয়া ‘পোতালা’ প্রাসাদে দালাইলামা বাস করেন। ১৩৯১ সালে প্রথম দালাইলামার আবির্ভাব ঘটে। ১৯১২ সালে ত্রয়োদশ দালাইলামা কর্তৃক গণচীনের একটি স্বশাসিত দেশ হিসেবে তিব্বত প্রতিষ্ঠা পায়। এই অঞ্চলটি চীনের অধীন হলেও তিব্বতিরা তা মানে না। ১৯৫৯ সালে গণচীনের বিরুদ্ধে তিব্বতিরা স্বাধিকার আন্দোলন করলেও তা ব্যর্থ হয়।

তিব্বতিদের জীবনব্যবস্থা ও সামাজিক রীতিনীতি তিব্বতকে আরো রহস্যময়ী করে তুলেছে। তারা দালাইলামা নির্বাচন করে এক অদ্ভুত রীতিতে। কোনো দালাইলামা মারা গেলে লামারা ধ্যানে বসে। তাদের মধ্যে প্রধান লামা তাঁর অলৌকিক অভিজ্ঞতায় একটি ছবি আঁকেন। তার পর কয়েকজন লামা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে সেই ছবির অনুরূপ একজন শিশু অবতার খুঁজে বের করেন।

তিব্বতিদের সবচেয়ে ব্যতিক্রমী আচার হলো মৃতদেহের সৎকার। এদের মৃতদেহ সৎকার পদ্ধতি খুবই অদ্ভুত। কোনো তিব্বতি যদি মারা যায়, তবে ওই মৃতদেহ কাউকে ছুঁতে দেওয়া হয় না। ঘরের এক কোণে মৃতদেহটি বসিয়ে চাদর অথবা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। মৃতদেহের ঠিক পাশেই জ্বালিয়ে রাখা হয় পাঁচটি প্রদীপ। তারপর পুরোহিত পোবো লামাকে ডাকা হয়। পোবো লামা একাই ঘরে ঢোকে এবং ঘরের দরজা-জানালা সব বন্ধ করে দেয়। এরপর পোবো মন্ত্র পড়ে শরীর থেকে আত্মাকে বের করার চেষ্টা করে।

201570055626shপ্রথমে মৃতদেহের মাথা থেকে তিন-চার গোছা চুল টেনে ওপরে আনে। তারপর পাথরের ছুরি দিয়ে মৃতদেহের কপালের খানিকটা কেটে প্রেতাত্মা বের করার রাস্তা করে দেওয়া হয়। শবদেহকে নিয়ে রাখে একটা বড় পাথরের টুকরোর ওপর। ঘাতক একটি মন্ত্র পড়তে পড়তে মৃতদেহের শরীরে বেশ কয়েকটি দাগ কাটে। দাগ কাটার পর একটি ধারালো অস্ত্র দিয়ে সেই দাগ ধরে ধরে মৃতদেহকে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলা হয়। তারপর পশুপাখি দিয়ে খাওয়ানো হয়।

মজার ব্যাপার হলো তিব্বতিরা সহজে গোসল করে না। তারা শুকনা থাকতে পছন্দ করে। খাবার- দাবারের ও রয়েছে যথেষ্ট ভিন্নতা । শুনলে অবাক হবেন উকুন তিব্বতিদের অতি প্রিয় খাবার। ঐতিহ্যগত তিব্বতি সমাজের এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হচ্ছে যাযাবর বা রাখাল জীবনযাপন। ভেড়া, ছাগল ও ঘোড়া পালন তাদের প্রধান জীবিকা।

শুধু চীনের তিব্বত স্বশাসিত অঞ্চলের মোট জনসংখ্যার ২৪ শতাংশ এই যাযাবর রাখাল সম্প্রদায়। এরা কখনও চাষাবাদের কাজ করে না। মোট ভূমির ৬৯ শতাংশ এলাকা চারণ বা তৃণভূমি। চীনা ঐতিহ্যের সঙ্গে মিল রেখে তিব্বতিরাও ভীষণ চা প্রিয়। তাদের বিশেষ চায়ে মেশানো হয় মাখন এবং লবণ। তবে তিব্বতিদের প্রধান খাবার হলো চমবা। গম এবং যবকে ভেজে পিষে চমবা তৈরি করা হয়। তারা খাবার পাত্র হিসেবে ব্যবহার করে কাঠের পেয়ালাকে। সমগ্র বিশ্ব দিন দিন আধুনিক হলেও আজও তিব্বত বিশ্বের সবার কাছে একটি রহস্যময় একটি অঞ্চল।

প্রতিক্ষণ/এডি/পাভেল

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

December 2025
SSMTWTF
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031 
20G