পবিত্র মিরাজুন্নবী স. ও আল্লাহর দর্শন: একটি পর্যালোচনা

প্রকাশঃ এপ্রিল ২৪, ২০১৭ সময়ঃ ৪:৩৪ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৫:৪৩ অপরাহ্ণ

মাওলানা আহমাদ মুঈনুদ্দীন খন্দকার:

মহান আল্লাহ তায়ালা তার প্রেরিত প্রত্যেক নবী-রাসূলকেই কোনো না কোনো মু’জিযা প্রদান করেছেন। আর সেই ধারাবাহিকতায় আখেরি যামানার সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ সা. কে প্রদান করেছেন অসংখ্য, অগণিত, অতুলনীয় মু’জিযা। যা তার বিশেষ মর্যাদার ও বৈশিষ্টের প্রতিকই বহন করে। আর সেসমস্ত মুজিজা সমূহের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও বিস্ময়কর মু’জিযা হলো পবিত্র ইসরা ও মিরাজ। আর এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন,

سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَىٰ بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ

 পরম পবত্রি ও মহমিাময় সত্তা তিনি যিনি স্বীয়বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা র্পযন্ত- যার চার দিকে আমি র্পযাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি শ্রবণকারী ও র্দশনশীল। (সূরা ইসরা: আয়াত নং ১)

সূরার প্রথমেই যে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন  سُبْحَانَ  (সুবহানা) শব্দ ব্যবহার করেছেন তার কারণ হল এই যে, আল্লাহ তাআলা সকল প্রকার দোষ ও ত্রুটি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ও পবিত্র। আরো বড় এক কারণ হল সম্মুখ ভাগে যে ঘটণার অবতারণা করবেন তা এক বিস্ময় ও বিজ্ঞান বর্হিভূত যা দুনিয়ার কোন জ্ঞান দিয়ে, যুক্তি দিয়ে বিবেকলব্দ করা অসম্ভব । যা আমার প্রিয় বান্দাকে দিয়ে আমি সংঘটিত করেছি । যার অপরনাম মুজিজা। আর এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নবী মুহাম্মাদ সা. কে عَبْدِهِ (আব্দিহি) ‘তার বান্দা’ বলে, এক দিকে তাকে নিজের দিকে সম্মন্ধ করে সম্মানিত করেছেন অপরদিকে ইয়াহুদী ও নাসারা সম্প্রদায় যে তাদের নবীর ব্যাপারে (ইবনুল্লাহ) ‘আল্লাহর পুত্র’ বলে যে বাড়াবাড়ি করেছে তা থেকে সতর্ক করা হয়েছে যে, তিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল ব্যতিত অন্য কিছুই নয়।(ইমাম বদরুদ্দিন আইনী, উমদাতুল কারী শরহু সহীহিল বুখারী (দারু ইহইয়ায়িত্ তুরাসিল আরবী, বৈরুত, তা.বি., খ.১৭, পৃ.১৯।)

أَسْرَىٰ (আসরা) শব্দটি إسراء (ইসরা) ধাতু থেকে উদ্ভুত। এর আভিধানিক অর্থ রাত্রে নিয়ে যাওয়া। এরপর لَيْلًا (লাইলান) শব্দটি স্পষ্টতঃ এ অর্থ ফুটিয়ে তুলে ধরা হয়েছে যে রাত্রে ভ্রমণ করা। لَيْلًا (লাইলান) শব্দটি نكرة (নাকিরা) অনির্দিষ্ট ব্যবহার করে এদিকেও ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, সমগ্র ঘটণায় সম্পূর্ণ রাত্রি নয়, বরং রাত্রির একটা অংশ বিশেষ ব্যয়িত হয়েছে। (ইমাম ফখরুদ্দিন রাযী, মাফাতিহুল গায়ব, ৩য় সং (দারু ইহইয়ায়িত্ তুরাসিল আরবী, বৈরুত, ১৪২০হি.), খ.২০, পৃ.২৯২; উমদাতুল কারী, প্রাগুক্ত।)

আয়াতে উল্লেখিত মসজিদে হারাম (বায়তুল্লাহ) থেকে মসজিদে আকসা (বায়তুল মুকাদ্দাস) পর্যন্ত সফরকে ইসরা বলা হয় (ড. আহমাদ মুখতার, মু’জামুল্ লুগাতিল আরাবিয়্যাহ আল মুয়াসিরাহ, প্রথম প্রকাশ (আলামুল কুতুব, ১৪২৯হি./২০০৮খ্রি.), খ.২, পৃ.১০৬২)

এবং সেখান থেকে আসমান পর্যন্ত যে সফর হয়েছে, তার নাম মি’রাজ। (ড. মুহাম্মাদ রাওয়াস কানিবী, মু’জামুল্ লুগাতিল ফুকাহা, ২য় সং (দারুন নাফায়িস, ১৪০৮হি./ ১৯৮৮ খ্রি.), পৃ.৪৪০; মুফতী মুহাম্মাদ শফী, তাফসিরে মা‘রেফুল কুরআন, (অনুবাদ ও সম্পাদনা – মাওলানা মুহাম্মাদ মুহিউদ্দীন খান) বাদশা ফাহাদ কুরআন মুদ্রণ প্রকল্প, পৃ.৭৬৪।)

ইসরা অকাট্য আয়াত (সূরা ইসরা: আয়াত নং ১) দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। আর মিরাজ সুরা নাজমে ১নং আয়াত থেকে ১৮নং আয়াতে উল্লিখিত রয়েছে এবং অনেক মুতওয়াতির হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। সম্মান ও গৌরবের স্তরে عَبْدِهِ (আব্দিহি) ‘তার বান্দা’ শব্দটি একটি বিশেষ প্রেমময়তার প্রতি ইঙ্গিত বহন করে। কেননা আল্লাহ তাআলা স্বয়ং কাউকে ‘আমার বান্দা’ বললে এর চাইতে বড় সম্মান মানুষের জন্যে আর হতে পারে না। (তাফসিরে মা‘রেফুল কুরআন, প্রাগুক্ত, পৃ.৭৬৪।)

ইসরা ও মিরাজের সমগ্র সফর যে শুধু আত্মিক ছিল না, বরং দৈহিক (স্বশরীরে) ছিল, একথা কুরআন পাকের বক্তব্য ও অনেক মুতাওয়াতির হাদিস দ্বারা প্রমানিত। আলোচ্য আয়াতের প্রথম سُبْحَانَ (সুবহানা) শব্দের মধ্যে এদিকেই ইঙ্গিত রয়েছে। কেননা, এ শব্দটি আশ্চর্যজনক ও মহান বিষয়ের জন্যে ব্যবহৃত হয়। মিরাজ যদি শুধু আত্মিক অর্থাৎ স্বপ্নজগতে সংঘটিত হত, তবে তাতে আশ্চার্যের বিষয় কি আছে? স্বপ্নে তো প্রত্যেক মুসলমান, বরং প্রত্যেক মানুষ দেখতে পারে যে, সে আকাশে উড়ছে উঠছে, অবিশ্বাস্য বহু কাজ করেছে। عَبْدِهِ (আব্দিহি) আমার দাস শব্দ দ্বারা এদিকেই দ্বিতীয় ইঙ্গিত করা হয়েছে। কারণ, শুধু আত্মাকে (আবদ) দাস বলে না, বরং আত্মা ও দেহ উভয়ের সমষ্টিকেই দাস বলা হয়। এছাড়া রাসুল সা. যখন মিরাজের ঘটণা হযরত উম্মে হানি রা. এর কাছে বর্ণনা করলেন, তখন তিনি পরামর্শ দিলেন যে, আপনি কারো কাছে একথা প্রকাশ করবেন না, প্রকাশ করলে কাফেররা আপনার প্রতি আরো বেশি মিথ্যারোপ করবে। ব্যাপারটি যদি নিছক স্বপ্নই হতো, তবে মিথ্যারোপ করার কি কারণ ছিল? (তাফসিরে মা‘রেফুল কুরআন, প্রাগুক্ত, পৃ.৭৬৪।)

অতপর রাসুল সা. যখন ঘটনা প্রকাশ করলেন, তখন কাফেররা অস্বিকার করল ও মিথ্যারোপ করল এমনকি অবশেষ ঠাট্টা বিদ্রুপ করল। একপর্যায়ে কতক নও মুসলিম এ সংবাদ শুনে ধর্মত্যাগী (মুরতাদ) হয়ে গেল। ব্যাপারটি স্বপ্নের হলে এতসব তুলকালাম কাণ্ড ঘটার সম্ভাবনা ছিল কি? তবে, এ ঘটনার আগে এবং স্বপ্নের আকারে কোন আত্মিক মিরাজ হয়ে থাকলে তা এর পরিপন্থী নয়। মিরাজের ঘটনাটি দৈহিক হওয়া ছাড়া এর আগে কিংবা পরে আত্মিক অর্থাৎ স্বপ্নযোগেও আরও মিরাজ হওয়া অসম্ভব নয়। আর এ কারণেই হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এবং হযরত আয়েশা রা. থেকে স্বপ্নযোগে মিরাজ হওয়ার কথা বর্ণিত রয়েছে। তাও যথাস্থানে নির্ভুল। কিন্তু এতে শারীরিক মিরাজ না হওয়া প্রমানিত হয় না।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম র. ৭ জন সাহাবী থেকে তা বর্ণনা করেছেন। তাঁরা হলেন, ১) আবু যর রা. ২) মালিক ইবন্ সা‘সাআহ রা. ৩) আনাস ইবন্ মালিক রা. ৪) আব্দুল্লাহ ইবন্ আব্বাস রা. ৫) আবু হুরায়রা রা. ৬) জাবির ইবন্ আব্দুল্লাহ রা. এবং ৭) আব্দুল্লাহ ইবন্ মাসউদ রা.।

তাফসীরে কুরতুবীতে রয়েছে, ‘ইসরার’ হাদীসসমূহ সব মুতাওয়াতির। আবু বকর নাক্কাশ এ সম্পর্কে ২০ জন সাহাবীর বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন এবং কাযী আয়ায ‘শেফা’ গ্রন্থে আরও বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন।

কেউ বলেন, বর্ণনাকারী ৩০ জন সাহাবী ও সাহাবীয়াত্। মাওলানা সাইয়দি সুলাইমান নদভী বলেন, হাদীস ও রাসূলের স. জীবনী শাস্ত্রের গ্রন্থাবলীতে মিরাজ বর্ণনাকারী ৪৫ জন সাহাবীর নাম আল্লামা যুরকানী লিখেছেন।

ইমাম ইবন্ কাছীর র. স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে এসব বর্ণনা পূর্ণরূপে যাচাই-বাছাই করেছেন। ২৫ জন সাহাবীর নাম উল্লেখ করেছেন, যাদের কাছ থেকে এসব রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে। তাঁদের নামগুলো:

১) উমার ইবন্ খাত্তাব রা., ২) আলি রা., ৩) ইবন্ মাসউদ রা., ৪) আবু যর রা., ৫) মালিক ইবন্ সা‘সাআহ রা., ৬) আবু হুরায়রা রা., ৭) আবু সায়ীদ রা., ৮) ইবন্ আব্বাস রা., ৯) শাদ্দাদ ইবন্ আউস রা., ১০) উবাই ইবন্ কাব রা., ১১) আব্দুর রহমান ইবন্ কুর্য রা., ১২) আবু হাইয়া রা., ১৩) আবু লাইলা রা., ১৪) আব্দুল্লাহ ইবন্ উমার রা., ১৫) জাবির ইবন্ আব্দুল্লাহ রা., ১৬) হুযায়ফা ইবন্ ইয়ামান রা., ১৭) বুরায়দাহ রা., ১৮) আবু আইউব আনসারী রা., ১৯) আবু উমামা রা., ২০) সামুরা ইবন্ জুনদুব রা., ২১) আবুল হামরা রা., ২২) সোহায়েব রুমী রা., ২৩) উম্মে হানী রা., ২৪) আয়েশা রা. এবং ২৫) আসমা বিনত্ আবি বকর (রা.)। এরপর ইবন্ কাছীর (র.) বলেন, ইসরার হাদীস সম্পর্কে সব মুসলমানের ঐকমত্য রয়েছে। শুধু ধর্মদ্রোহী যিন্দীকরা একে মানেনি। (ইমাম ইবনু কাসীর, তাফসীরে ইবনু কাসীর, ২য় সং (দারু তায়্যিবাহ, ১৪২০হি./১৯৯৯খ্রি,), খ.৫, পৃ.৪৫; তাফসিরে মা‘রেফুল কুরআন, প্রাগুক্ত, পৃ.৭৬৪।)

ইসরা ও মিরাজের সময়:

বুখারী শরীফের অন্যতম ভাষ্যকার আল্লামা আইনী রহ. বলেছেন, এ ব্যাপারে উলামায়ে কিরামের মাঝে মতানৈক্য দেখা যায়। কারো মতে হিজরতের এক বছর পূর্বে, কারো কারো মতে হিজরতের ষোল মাস পূর্বে, কারো মতে সতের মাস পূর্বে, কারো মতে নবুয়াতের পঞ্চম বছর মিরাজ সংঘটিত হয়েছে। (উমদাতুল কারী, পৃ.২০।) কিন্তু অধিকাংশ আলেমের মতে, নবুয়তের দ্বাদশ সালে ২৭শে রজব স্বশরীরে জাগ্রত অবস্থায় রাতের একাংশে মেরাজ সংঘটিত হয়। বিশ্বের মুসলিম সমাজের সর্বত্র এমতই সমধিক সুপ্রসিদ্ধ ও সুপরিচিত (মুফতী মুস্তফা হামীদী র., বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে মিরাজ, ছারছীনা দারুস্সুন্নাত লাইব্রেরী, পিরোজপুর)।

প্রায় ত্রিশ জন সাহাবি হতে মিরাজের বর্ণনা সাব্যস্ত। তাঁদের সকলের সম্মিলিত সিদ্ধান্তনুযায়ী রাসুল সা. এর মিরাজ বা ইসরা তার নবুয়্যতের পূর্বে মক্কায় সংঘটিত হয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই। শায়খ আব্দুল ওহাব শে’রানী বলেন, ইসরা বা মিরাজ মোট চৌত্রিশ বার সংঘঠিত হয়েছে। তন্মধ্যে জাগ্রত অবস্থায় দৈহিক মেরাজ সংঘঠিত হয়েছে একবার, বাকী সবগুলো হয়েছে রূহানী তথা স্বাপ্নিক ভাবে।

মেরাজের সংক্ষিপ্ত ঘটনা :

ইমাম ইবনে কাসির রহ. স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে আলোচ্য আয়াতের তাফসীর এবং সংশ্লিষ্ট হাদীসসমূহ বিস্তারিত বর্ণনা করার পর বলেন, সত্য কথা এই যে, নবী করিম স. এর ইসরা (মিরাজ) সফর জাগ্রত অবস্থায় হয়েছে, স্বপ্নে নয়। বায়তুল্লাহ থেকে বাইতুল মোকাদ্দাস পর্যন্ত এ সফর বোরাক নামক বাহনে করেন। সেখানে সকল নবীদের নিয়ে নামাজ আদায় করেন। অতঃপর সিঁড়ি আনা হয় যাতে উপরে যাওয়ার জন্য ধাপ বানানো ছিল। এর মাধ্যমে প্রথমে প্রথম আসমান পরে অবশিষ্ট আসমানসমূহে গমন করেন। প্রত্যেক আকাশের ফিরিশতারা তাঁকে অভ্যর্থনা জানায় এবং প্রত্যেক আকাশে সেই সকল নবীদের সাথে দেখা হয়েছে, যাদের অবস্থান নির্দিষ্ট আকাশে রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ প্রথম আকাশে আদম, দ্বিতীয় আকাশে ঈসা আ. এবং ইয়াহইয়া আ., তৃতীয় আকাশে ইউসুফ আ., চতুর্থ আকাশে ইদ্রিস আ., পঞ্চম আকাশে হারুন আ., ষষ্ঠ আকাশে মুসা আ., সপ্তম আকাশে ইবরাহিম আ. এর সাথে সাক্ষাত হয়। অতপর এক ময়দানে পৌছলেন যেখানে ভাগ্যলিপি লেখার শব্দ শোনা যাচ্ছিল। তিনি সিদরাতুল মুনতাহা দেখেন। অতঃপর বাইতুল মামুর দেখেন। যা ফিরিশতাদের ইবাদতের স্থান। অতঃপর স্বচক্ষে জান্নাত ও জাহান্নাম দেখেন এবং তাঁর প্রভুর দিদার লাভ করেন। এ সময় তার উম্মতের জন্য পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়। যা পরবর্তীতে পাঁচ ওয়াক্ত করে দেয়া হয়। অতঃপর তিনি বাইতুল মোকাদ্দাস হয়ে আবার নিজ স্থানে ফিরে আসেন।  (তাফসিরে মা‘রেফুল কুরআন, প্রাগুক্ত, পৃ.৭৬৫)

মিরাজ রজনীতে মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তায়লাকে দেখেছেন কি-না?

এ কথা প্রমাণিত যে, এই দুনিয়ায় কেউ আল্লাহ তায়ালাকে জাগ্রত অবস্থায় দেখতে পাবে না। তবে মিরাজ রজনীতে উর্দ্ধাকাশে মহানবি সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তায়ালাকে দেখেছেন কি-না, দেখে থাকলে তা অন্তর চোখে, না চর্মচোখে- সে ব্যাপারে আলেমদের মাঝে চারটি মতামত পাওয়া যায়। যথা-

১. মেরাজ রজনীতে তিনি আল্লাহ তায়ালাকে দেখেননি।

২. চর্মচোখে দেখেছেন।

৩. অন্তরচোখে দেখেছেন।

৪. কোন মন্তব্য নেই।

নিম্নে এ সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো-

১. তিনি আল্লাহ তায়ালাকে দেখেননি:

এক দল আলেম বলেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেরাজ রাতে আল্লাহ তায়ালাকে দেখেননি। এ মতের পক্ষে মা আয়েশা রা., হজরত আবু জার গিফারি এবং ইবনে মাসউদ রা. প্রমুখ সাহাবি রয়েছেন। হাদীস শরিফে আছে-

عن مسروق عن عائشة رضي الله عنها قالت من حدثك أن محمدا صلى الله عليه وسلم رأى ربه فقد كذب

হযরত মাসরুক রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি মা আয়েশা রা. থেকে বর্ণনা করেন, মা আয়েশা রা. বলেন, যে ব্যক্তি তোমার কাছে বলবে যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর প্রভুকে দেখেছেন সে মিথ্যা বলেছে। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৭৩৮০)

২. চর্মচোখে দেখেছেন:

অপর একদল উলামায়ে কেরামের মতে, মেরাজ রজনীতে মহানবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তায়ালাকে চর্মচোখে দর্শন করেছেন। ইবনু খুজাইমা, ইমাম নববি রহ.সহ শাফেয়ি মাজহাবের অনেকে এই মত পোষণ করে থাকেন।

ইমাম নববি বলেন,

الْحَاصِلُ أَنَّ الرَّاجِحَ عِنْدَ أَكْثَرِ الْعُلَمَاءِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – رَأَى رَبَّهُ بِعَيْنَيْ رَأْسِهِ لَيْلَةَ الْإِسْرَاءِ

মোটকথা হলো, অধিকাংশ আলেমদের গ্রহণযোগ্য মতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেরাজ রাতে তাঁর প্রভুকে চর্মচোখে দর্শন করেছেন। (মেরকাত, ৩৬০৭/৯)

হজরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, رأى محمد ربه অর্থ্যাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর প্রভুকে দেখেছেন। (জামে তিরমিজি, হাদিস নং ৩২৭৯)

৩. অন্তরচোখে দেখেছেন:

হানাফি মাজহাবের উলামায়ে কেরামের মতে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেরাজ রাতে তাঁর প্রভুকে অন্তর চোখে দেখেছেন, চর্ম চোখে নয়। তবে অন্তর চোখের দর্শন দ্বারা শুধু জ্ঞানার্জন উদ্দেশ্য নয়, বরং অতিরিক্ত ইলম উদ্দেশ্য। আল্লামা তাফতাজানি, মোল্লা আলি কারিসহ হানাফি উলামায়ে কেরামের মত এটি। যেমন,

ক) শরহে আকায়েদে নাসাফিতে সা’দুদ্দীন তাফতাজানি বলেন,

إنما رآى ربه بفؤاده لا بعينه

নিশ্চয় তিনি তাঁর প্রভুকে অন্তর দ্বারা দেখেছেন, চর্মচোখ দ্বারা নয়। (শরহে আকায়েদ, পৃ-১৪৪)

খ) সহিহ মুসলিমে হজরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে হাদিস বর্ণিত আছে,

رَآهُ بِفُؤَادِهِ مَرَّتَيْنِ.

তিনি তাঁকে (আল্লাহকে) অন্তর দ্বারা দেখেছেন, দু’বার। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৪৫৫)

গ) মুসনাদে আহমাদে আছে,

عن بن عباس : في قوله عز و جل { ما كذب الفؤاد ما رأي } قال رأي محمد ربه عز و جل بقلبه مرتين

হজরত ইবনে আব্বাস রা. আল্লাহর বাণী { ما كذب الفؤاد ما رأي}  সম্পর্কে বলেছেন, (এর উদ্দেশ্য হলো) মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর রবকে কলব দ্বারা দু’বার দেখেছেন। (মুসনাদে আহমদ,হাদিস নং ১৯৫৬)

ঘ) হযরত আবু জার গিফারি রা. বলেন,  رآه بقلبه ولم يره ببصره  তিনি তাঁকে (আল্লাহকে) অন্তর দ্বারা দেখেছেন, চর্মচোখ দ্বারা দেখেননি। (তবারানি, আওসাত, হাদিস নং ১১৪১)

৪. মন্তব্য নেই:

একদল উলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে নিরব থাকাকে শ্রেয় বলেছেন। ইমাম কুরতুবি রহ. এই মতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, বিষয়টি আকিদাগত। আর আকিদার ক্ষেত্রে ধারণামূলক দলিল গ্রহণযোগ্য নয়, বরং প্রয়োজন অকাট্য দলিল, যা এখানে অনুপস্থিত। (ফতহুল বারি, পৃ ৪৩৪/১৩)

সমাধানমূলক কথা:

এ ক্ষেত্রে সমাধানমূলক কথা বলেছেন ইবনু হাজার আসকালানি রহ.। তিনি বলেন, মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর প্রভুকে দেখেছেন কি-না এ ব্যাপারে সালাফ উলামায়ে কেরামের মাঝে মতভেদ রয়েছে। মা আয়েশা রা. এবং ইবনু মাসউদ রা. দেখার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। হজরত আবু জার রা. থেকে দু’ধরণের কথা বর্ণিত আছে। আরেকদল আলেম দেখার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পক্ষে মতামত দিয়েছেন। আব্দুর রাজ্জাক মা’মার এর সূত্রে হাসান বসরি থেকে বর্ণনা করেন যে, হাসান বসরি রহ. কসম করে বলেছেন, নিশ্চয় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর প্রভুকে দেখেছেন। ইবনে খুজাইমা উরওয়া ইবনে জুবাইর থেকে দেখার পক্ষে মত বর্ণনা করেছেন। ইবনে খুজাইমার কাছে মা আয়েশা রা. এর অস্বীকৃতির কথা বর্ণনা করলে তিনি রাগান্বিত হতেন।

ইবনে আব্বাস রা. এর ছাত্রগণও এভাবে বর্ণনা করেছেন। কা’বে আহবার, ইমাম জুহরি এবং মা’মারসহ অনেকে এমত পোষণ করেন। ইমাম আশআরি ও তার অধিকাংশ সাথীদের মতও এটিই। তবে দেখার পক্ষের আলেমগণ আবার মতভেদ করেছেন যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় প্রভুকে চর্মচোখে দেখেছেন নাকি অন্তর চোখে? (ইবনু হাজার আসকালানি রহ. বলেন) ইমাম আহমদ রহ. থেকে দু’ধরনের কথাই বর্ণিত আছে।

আর ইবনে আব্বাস রা. থেকে দু’ধরণের বর্ণনা রয়েছে। এক. সাধারণভাবে (মুতলাক বা শর্তহীন) শুধু দেখার কথা সম্বলিত হাদিস। দুই. অন্তর চোখে দেখার (মুকাইয়াদ বা শর্তযুক্ত) হাদিস। তাই শর্তহীন বর্ণনাগুলোকে শর্তযুক্ত বর্ণনার উপর প্রয়োগ করা কর্তব্য। অর্থাৎ অন্তরচোখে দেখেছেন। ইমাম নাসায়ি এবং হাকেম রহ. সহিহ সূত্রে ইকরামা থেকে বর্ণনা করেন, ইবনে আব্বাস রা. বলেন, তোমরা কি আশ্চর্য হবে যদি ইবরাহিমকে খিল্লাত বা বন্ধুত্ব, মুসাকে কালাম বা কথা এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রুইয়াত বা দিদার তথা দর্শন দেওয়া হয়? ইবনে খুজাইমাও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। আর ইবনু ইসহাক আব্দুল্লাহ ইবনে সালামার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, ইবনে উমার রা. এ মর্মে জিজ্ঞেস করে ইবনে আব্বাস রা. এর নিকট লোক পাঠালেন যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি তাঁর প্রভুকে দেখেছেন? তখন ইবনে আব্বাস বলে পাঠালেন যে, হ্যাঁ। (ইবনে আব্বাসের এ সকল বর্ণনা মুতলাক বা সাধারণ দেখার ব্যাপারে, চর্মচোখে বা অন্তর চোখে কোনটির কথা এখানে বলা হয়নি।) পক্ষান্তরে, ইমাম মুসলিম রহ. আবুল আলিয়ার সূত্রে বর্ণনা করেন, ইবনে আব্বাস রা. বলেন, তিনি তাঁর প্রভুকে অন্তর চোখ দ্বারা দেখেছেন দু’বার।

সহিহ মুসলিমে আতা রা. এর সুত্রে আরো বর্ণিত আছে, ইবনে আব্বাস রা. বলেন, তিনি তাকে কলব (অন্তর) দ্বারা দেখেছেন। এর চেয়ে স্পষ্ট বর্ণনা করেছেন ইবনু মারদুইয়া, তিনি আতা রা. এর সূত্রে বর্ণনা করেন, ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তাআলাকে চোখ দ্বারা দেখেননি, দেখেছেন অন্তর দ্বারা। (যেমন, তবারানির মুজামুল কাবিরে আছে-

11421 عن عمر بن حبيب قال سمعت عطاء يقول : إن عبد الله بن عباس قال : لم ير رسول الله صلى الله عليه و سلم ربه بعينيه إنما رآه بقلبه  (المعجم الكبير للطبراني :

ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রসুল সা. তাঁর প্রভুকে চর্মচোখে দেখেননি, দেখেছেন অন্তরচোখে। (তবারানি, হাদিস নং ১১৪২১)

এর উপর ভিত্তি করে ইবনে আব্বাস রা. এর মত তথা মহানবি সা. এর আল্লাহ তাআলাকে দেখা এবং মা আয়েশা রা. এর মত তথা আল্লাহ তাআলাকে না দেখার মাঝে সমন্বয় সাধন করা সম্ভব হবে এভাবে যে, মা আয়েশা রা. অস্বীকার করেছেন চর্ম চোখের দেখাকে, আর ইবনে আব্বাস রা. সাবেত করেছেন অন্তর দ্বারা দেখাকে। (ফতহুল বারি, পৃ- ৬০৮/৮)

আখেরাতে আল্লাহ তাআলাকে দেখা যাবে কি?

কিয়ামতের দিন জান্নাতিরা জান্নাতে আল্লাহ তাআলার দিদার পাবেন। তবে তারা আল্লাহ তাআলাকে মাখলুকের সাথে সাদৃশ্যমুক্ত অবস্থায় দেখবে। কারণ, তাঁর অনুরূপ কিছুই নেই। তাই মুমিনরা কোন নির্দিষ্ট সুরতে আল্লাহ তাআলাকে দেখবে না। আসল কথা হলো, দেখার বিষয়টি প্রমাণিত, তাই আমাদের এ বিশ্বাস রাখা কর্তব্য যে, কিয়ামতে মুমিনরা আল্লাহ তাআলাকে দেখবে। কিন্তু কিভাবে দেখবে- সে কথা কুরআন ও সুন্নাহতে বিস্তারিত বলা হয়নি। তাই এ ব্যাপারে চুপ থাকাই শ্রেয়। তবে যেহেতু মাখলুকের সাথে তাঁর কোন সাদৃশ্য নেই এ কথাও প্রমাণিত, তাই এমনটা বলা যায় যে, তাকে মাখলুকের সাথে সাদৃশ্যমুক্ত অবস্থায় দেখা যাবে। প্রকৃত বিষয় আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন।

আখেরাতে মুমিনরা যে আল্লাহ তাআলাকে দেখবেন এ ব্যাপারে কুরআন মাজিদে আছে-

{وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ نَاضِرَةٌ . إِلَى رَبِّهَا نَاظِرَةٌ } [القيامة: 22 ، 23]

সে দিন কিছু চেহারা থাকবে উজ্জ্বল, (তারা) তাদের প্রভুর দিকে তাকিয়ে থাকবে। (সুরা কিয়ামাহ, আয়াত নং ২২,২৩)

কাফেরদের ব্যাপারে বলা হয়েছে-

كَلَّا إِنَّهُمْ عَنْ رَبِّهِمْ يَوْمَئِذٍ لَمَحْجُوبُونَ

কখনো নয়, নিশ্চয় তারা সেদিন তাদের প্রতিপালক থেকে পর্দার আড়ালে থাকবে। (সুরা মুতাফফিফিন, আয়াত নং ১৫)

অর্থাৎ কাফেররা সেদিন আল্লাহ তাআলাকে দেখতে পারবে না। এর দ্বারা বুঝা যায়, মুমিনরা দেখতে পাবে।

হাদিস শরিফে আছে, মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ رَبَّكُمْ كَمَا تَرَوْنَ هَذَا الْقَمَرَ لاَ تُضَامُّونَ فِى رُؤْيَتِهِ

নিশ্চয় অচিরেই তোমরা তোমাদের রবকে দেখতে পাবে, যেমন তোমরা এই চাঁদকে দেখো এবং তা দেখতে তোমরা যেমন কোন ভীড় করো না। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫৫৪)

অর্থাৎ, চাঁদ যেমন তোমরা নিশ্চিতভাবে দেখে থাকো এবং দেখার পর কোন সন্দেহ থাকে না, তদ্রুপ আল্লাহ তাআলাকে দেখার পরও কোন সন্দেহ থাকবে না যে, কী দেখলাম? হাদিসে আল্লাহকে চাঁদের সাথে তুলনা করা উদ্দেশ্য নয়, বরং হাদিসে চাঁদ দেখার সাথে আল্লাহকে দেখার বিষয়টি তুলনা করা হয়েছে।

আল্লামা ইবনু বাত্তাল রহ. বলেন,

ذهب أهل السنة وجمهور الأمة إلى جواز رؤية الله في الآخرة ومنع الخوارج والمعتزلة

আহলে সুন্নাহ এবং উম্মতের অধিকাংশ আলেম আখেরাতে আল্লাহ তাআলাকে দেখার বিষয়কে জায়েজ বলেছেন। তবে খারেজি ও মুতাজিলা সম্প্রদায় তা স্বীকার করে না। (ফতহুল বারি, ৪২৬/১৩)

আল্লাহ তাআলাকে দেখা সংক্রান্ত মাসআলার মূল কথা হলো, আখেরাতে মুমিনরা জান্নাতে আল্লাহ তাআলাকে দেখতে পাবেন। তবে মাখলুকের সাথে সাদৃশ্যমুক্ত অবস্থায়। আর দুনিয়াতে কেউ আল্লাহ তাআলাকে দেখবে না। তবে আল্লাহ তাআলাকে স্বপ্নে দেখা যেতে পারে। কিন্তু উক্ত স্বপ্নটি ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। তবে এ ক্ষেত্রে স্মরণ রাখা কর্তব্য যে, স্বপ্নে যা দেখা হয় তা আল্লাহ তাআলার প্রকৃত সত্ত্বা নয়। বরং তা শুধু মেছাল মাত্র।

কিন্তু মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তাআলাকে যে স্বপ্নে দেখেছেন বলে হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে তা সত্য। কারণ, এ সম্পর্কিত হাদিস মাশহুর পর্যায়ে পৌঁছেছে। তাছাড়া ঘুমের ঘরেও মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কলব জাগ্রত থাকত। আর মেরাজ রজনীতে মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তাআলাকে দেখেছেন এ ব্যাপারে আহলে সুন্নাহ এর উলামায়ে কেরাম একমত। তবে অন্তর চোখে না চর্মচোখে তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। অবশ্য হানাফি মাজহাবের রায় হলো- তিনি আল্লাহ তাআলাকে অন্তরচোখে দেখেছেন, চর্মচোখে নয়। আর হাদিসের শুদ্ধতার বিচারে হানাফিদের মতটি অগ্রগণ্য। তবে মহান মিরাজের স্বার্থকতা ও তাৎপর্যের পূর্ণতা বহন করবে তখনই যখন বিশ্বাস করা হবে আল্লাহর দিদারের জন্যই এই আর্শ্চাযমূলক ঘটনার অবতারণা করেন এবং এটা বিশ্বাসিদের জন্য বড় পরীক্ষাই। যেমন আল্লাহ বলেন,

َمَا جَعَلْنَا الرُّؤْيَا الَّتِي أَرَيْنَاكَ إِلَّا فِتْنَةً لِلنَّاسِ

হে হাবিব ! আমি আপনাকে যে দৃশ্য দেখিয়েছি উহা কেবল মানুষের পরীক্ষার জন্যই । (সূরা বনি ঈসরাইল ৬০)

তাই বলব মিরাজের রজনীতে মহান আল্লাহকে রাসুল সা. অন্তর ও চর্ম দৃষ্টিতেই দেখেছেন।

লেখক : প্রভাষক, দারুন্নাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসা, ডেমরা  এবং খতিব, হাজী ইয়াসিন সোহাগী জামে মসজিদ, নতুন বাজার , গুলশান,  ঢাকা।

প্রতিক্ষণ/এডি/সাই

 

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G