পরকীয়ায় বাড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদ
মুনওয়ার আলম নির্ঝর
রায়হান (ছদ্ম নাম) একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে কাজ করে। সে তার স্ত্রী কণাকে (ছদ্ম নাম) নিয়ে উত্তরার একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। রায়হান সারাদিন অফিসে থাকে কণা বাসায় একা থাকে। সময় কাটানোর জন্য সে বেছে নেয় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক। ফেসবুকে সে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে একটি অপরিচিত ছেলের সাথে। কিছুদিন পর যখন রায়হান বিষয়টা জানতে পারে তখনই ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় তাদের। সুন্দর একটি সংসারের গল্প এখানেই শেষ হয়ে যায়।
এমন ঘটনা এই শহরের বুকে এখন অহরহ ঘটছে। শুধু শহরে নয় সারাদেশে এই ঘটনা আশঙ্কা জনক হারে বেড়েছে। অবশ্য বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের চেয়ে বেশি উদ্যোগ নিচ্ছেন। এক জরিপে দেখা গেছে ৭০ দশমিক ৮৫ ভাগ নারী এবং ২৯ দশমিক ১৫ ভাগ তালাক দিচ্ছেন পুরুষরা।
তালাক প্রাপ্ত নর-নারীরা পরকীয়াকে বিচ্ছেদের অন্যতম কারণ হিসেবে বলছেন। এ ছাড়া শতকরা ৮৭ জন নারী বলছেন, তারা স্বামীর পরকীয়া ঘটিত নির্যাতনের শিকার।
বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ খুঁজে বের করতে তালাকপ্রাপ্ত বেশ কয়েকজন নর-নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বামী বা স্বামী পক্ষের যৌতুক দাবি, স্বামী-স্ত্রী উভয়ের দ্বারা শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার, মাদকাসক্তি, পরকীয়া, দুজনের জীবনযাপনে অমিল, সন্দেহপ্রবণতা, স্বামীর কাছ থেকে ভরণ-পোষণ না পাওয়া, স্ত্রীর অবাধ্য হওয়া, সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম যেমন ফেসবুক ও টুইটারে একাধিক সম্পর্কে জড়ানো এবং স্ত্রীর ধর্মীয় অনুশাসন অনুযায়ী জীবনযাপন না করায় তালাকের ঘটনা ঘটছে।
তবে ইদানীং যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে সেটি হচ্ছে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়া। পরকীয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম, মোবাইল ফোনের সহজলভ্যতা এবং হিন্দী সিরিয়ালকে দায়ী করেছেন সমাজ বিজ্ঞানীরা।
সমাজবিজ্ঞানী ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সমাজ পরিবর্তনের কারণে নারী কিংবা পুরুষ কেউই এখন আর মুখ বুজে কিছু সহ্য করতে চায় না।তাই বিবাহ বিচ্ছেদকেই মুক্তির পথ হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। তবে হঠাৎ করে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটালে শুধু যে সেই নর-নারীর মধ্যকার সম্পর্ক শেষ হয়ে পড়ে, তা নয়। এর মাধ্যমে তাদের সন্তানদের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ কারণে বিশেষজ্ঞরা বিবাহ বিচ্ছেদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে স্বামী-স্ত্রীকে কাউন্সিলিংসহ স্থানীয় এনজিও ও অভিভাবকদের নিয়ে গ্রুপ মিটিং করার পরামর্শ দিয়েছেন।
প্রতিক্ষণ/এডি/নির্ঝর