পানির অভাবে মরে যাচ্ছে বগুড়ার ৪০ একর ধান

প্রকাশঃ মার্চ ১০, ২০১৭ সময়ঃ ১:০৬ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১:০৮ অপরাহ্ণ

বোরো ধান চাষে সারা দেশের কৃষক যখন ব্যস্ত সময় পার করছেন, তখন বিনা নোটিশে সেচ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে শতাধিক কৃষক পরিবারকে পথে বসার উপক্রম করেছে বগুড়া পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১। ফলে সেচের অভাবে মরে যেতে শুরু করেছে ঐ এলাকার প্রায় ৪০ একর জমির বোরো ধানসহ সবজি জাতীয় ফসল। এতে সংশ্লিষ্ট কৃষক পরিবার গুলোতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

ঘটনাটি ঘটেছে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মাঝিহট্টা ইউনিয়নের মাশিমপুর চালুঞ্জা গ্রামের মন্ডল পাড়ায়।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বোরোধানসহ সবজি জাতীয় ফসলের জমিতে পানি সেচ দিতে চলতি বছর বগুড়া পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ থেকে অগভীর নলকূপের সেচ সংযোগ নেন মাশিমপুর চালুঞ্জা মন্ডল পাড়ার আজিমদ্দিনের পুত্র জহুরুল ইসলাম। কিন্তু পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে যাওয়ায় পল্লীবিদ্যুতের নির্ধারিত দূরত্বে প্রায় ১৫ ফুট গভীর গর্ত করেও শ্যলোতে পানি উঠছিল না। নিরুপায় স্কীম মালিক জহুরুল ইসলাম প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষীদের সমস্যার কথা বিবেচনা করে পাশের আরেকটি জমিতে নলকূপ স্থাপন করে পানি সেচের ব্যবস্থা করেন। তার স্কীমের আওতায় প্রায় ৪০ একর জমির অধিকাংশ বোরো ধান রোপন করা হয়েছে। এছাড়া কেউ কেউ বেগুন, মরিচ, মিষ্টি কুমড়া, পিয়াজ, করল্লা, পটল সহ বিভিন্ন রকমের সবজি চাষ করেছেন।

লুৎফর রহমান, মমতাজ উদ্দিন, সানোয়ার হোসেনসহ জহুরুল ইসলামের স্কীমের আওতাভুক্ত বেশ কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করেছেন বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের কারণে বিগত ৮ দিন যাবত পানি সেচ বন্ধ আছে। এতে বোরো ধান গাছগুলো মরে যেতে শুরু করেছে। দিশেহারা কৃষকদের কেউ কেউ পাশের একটি পুকুর থেকে বালতিতে করে পানি এনে জমিতে দিয়ে ধান গাছ বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ২-৩ দিনের মধ্যেই উঠতি বোরো ধানসহ সবজি জাতীয় ফসল পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে। এতে সারা বছরের খাদ্য সংকটে পড়ে যাবে সংশ্লিষ্ট কৃষক পরিবারগুলো। এমতাবস্থায় ক্ষতির মুখোমুখী ঐ পরিবারগুলোতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

স্কীম মালিক জহুরুল ইসলাম প্রতিক্ষণকে জানিয়েছেন, এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকায় তিনি দীর্ঘ ৩০ বছর যাবত ডিজেল চালিত শ্যালো দিয়ে পানি সেচ দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু এলাকায় বিদ্যুতের লাইন নির্মিত হওয়ায় তিনি বিদ্যুৎ চালিত শ্যালোর মাধ্যমে ফসল ফলিয়ে নিজেসহ প্রান্তিক চাষীদের বাড়তি লাভের স্বপ্ন দেখেন। সে মোতাবেক সেই স্কীমের পরিকল্পনা তৈরি করে বিগত ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে উপজেলা সেচ কমিটির অনুমোদন গ্রহন করেন। এরপর দীর্ঘ ১ বছর প্রতীক্ষার পর পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ মিললেও নির্ধারিত দূরত্বে ১০-১৫ ফুট গভীর গর্ত করেও পানির স্তর মিলেনি। এ অবস্থায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদের একমাত্র অবলম্বন ফসল ফলানোর কথা চিন্তা করে পাশের জমিতে শ্যালো বসিয়ে সেচ দিতে থাকেন জহুরুল ইসলাম।

এতে বাঁধ সাধে প্রায় ২ হাজার ফুট দূরে থাকা গভীর নলকূপের মালিক রফিকুল ইসলাম। তার প্ররোচনায় গত ২ মার্চ দুপুরে বিনা নোটিশে হঠাৎ করেই জহুরুল ইসলামের সেচ সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেয় বগুড়া পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ এর কর্মীরা। ফলে বিগত ৮ দিন যাবত সেচ কার্যক্রম বন্ধ আছে। উঠতি ফসলগুলো মরে যেতে শুরু করেছে। অসহায় কৃষকদের দুর্ভোগ-দুর্দশনার কথা বিবেচনা করে পুন:সংযোগ দিয়ে মরে যাওয়ার হাত থেকে বোরো ধানগুলো রক্ষায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নিকট আকুল আবেদন জানিয়েছেন স্কীমের আওতাভূক্ত কৃষকগণ।

উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে আব্দুল মতিন ওরফে ফেরদৌস নামের এক ব্যক্তি রফিকুল ইসলামের গভীর নলকূপ থেকে মাত্র ৩শ ফুট দূরত্বে আরও একটি গভীর নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নিলে সেটি প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হন রফিকুল ইসলাম। এখন আবার জহুরুলের অগভীর নলকূপটি বন্ধ করে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন রফিকুল ইসলাম।

এ বিষয়ে বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী আব্দুল মতিন প্রতিক্ষণকে জানিয়েছেন, নির্ধারিত দূরত্বের বাইরে সংযোগ দেওয়ার কোনো সুযোগ নাই। কোনো অনিয়ম করা হলে সে সুযোগ অন্যরাও চাইবে।

প্রতিক্ষণ /এডি/অনু

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G