পেঁপে চাষের নিয়মাবলি
প্রতিক্ষণ ডেস্ক
পেঁপে একটি ছোট আকৃতির অশাখ বৃক্ষবিশেষ। লম্বা বোটাঁযুক্ত ছত্রাকার পাতা বেশ বড় হয় এবং সর্পিল আকারে কান্ডের উপরি অংশে সজ্জিত থাকে। প্রায় সারা বছরেই ফুল ও ফল হয়। কাচাঁ ফল সবুজ, পাকা ফল হলুদ বা পীত বর্ণের। এটি পথ্য হিসেবেও ব্যবহার হয়। পেঁপে কাঁচা পাকা দু ভাবেই খাওয়া যায়, তবে কাঁচা অবস্থায় সবজি এবং পাকলে ফল। কাঁচা ফল বাইরের দিক গাঢ় কালচে সবুজ এবং পাকলে খোসা সহ কমলা রং ধারন করে।
রক্ত কাসে, রক্তার্শে, মূত্রনালীর ক্ষতে, দাদ ও সোরিয়াসিস-এ, কোষ্ঠকাঠিণ্যে এবং কৃমিতে পেঁপে হিতকর। পাকা পেঁপে অর্শরোগ ও কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে হিতকর।
কখন চারা উৎপাদন করবেন ?
কার্তিকের মাঝামাঝি থেকে পৌষের মাঝামাঝি এবং মাঘের মাঝামাঝি থেকে চৈত্রের মাঝামাঝি বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।
কোথায় চারা উৎপাদন করবেন ?
পলিথিন ব্যাগে চারা উৎপাদন করবেন। এজন্য ১৫১০ সে.মি. আকারের পলিথিন ব্যাগে ২ ভাগ পচা গোবর + ২ ভাগ মাটি + ১ ভাগ বালি দ্বারা ভর্তি করে ব্যাগের তলায় ২-৩ টি ছিদ্র করতে হবে। বীজ বপনের আগে রিডোমিল স্প্রে করুন। বীজ বপনের আগে হালকা রোদে বীজগুলি ২ ঘন্টা রেখে দিন। অত:পর বপনের ২৪ ঘন্টা আগে পানিতে ভিজিয়ে, পানি ঝরিয়ে ভেজা কাপড়ে মুড়ে উষ্ণ স্থানে রাখুন। ২-৩ ঘন্টা পর প্রতিটি পলি ব্যাগে টাটকা সংগৃহীত বীজ হলে ১টি করে আর পুরাতন হলে ২-৩ টি বীজ (তবে খেয়াল রাখতে হবে বীজ যেনো সুস্থ’ সবল ও রোগমুক্ত হয়) বপন করে হালকা পানি দিয়ে ছায়াযুক্ত ও বাতাস চলাচল করে এমনস্থানে রাখুন। ব্যাগে একের বেশি চারা রাখা উচিত নয়। ২০-২৫ দিন বয়সের চারার ১-২% ইউরিয়া স্প্রে করলে চারার বৃদ্ধি ভালো হয়। নিয়মিত হালকা পানি সেচ দিতে হবে।
মাদায় চারা রোপণ:
পলিথিন ব্যাগে উৎপাদিত ৩০-৪০ দিন (৪-৬ ইঞ্চি উচ্চতা) বয়সের চারা জমিতে মাদা বা গর্ত করে রোপণ করতে হবে।
মাদা তৈরির সময় এক মাদা থেকে অপর মাদার দূরত্ব রাখতে হবে ২ মিটার এবং মাদার আকার হবে দৈর্ঘ, প্রস্থ ও গভীরতায় প্রায় ৬০ সে.মি. ।
মাদায় সার প্রয়োগের ২- ৩ সপ্তাহ পর প্রতি মাদায় ৩টি করে চারা ত্রিভুজাকারে রোপণ করতে হবে। দু’সারির মাঝামাঝি ৪৫ সে.মি. নালার ব্যবস্থা রাখলে সেচ বা বৃষ্টির অতিরিক্ত পানি নিকাশের সুবিধা হবে।
চারা লাগানোর ১ দিন পূর্বে হালকা পানি দিয়ে পরদিন জো অবস্থায় ভালভাবে কুপিয়ে রিডোমিল স্প্রে করুন। চারা যাতে হেরে না পড়ে সে ব্যবস্হা করতে হবে। হালকা পানি দিতে হবে।
মাদায় প্রয়োগকৃত সারের নাম ও পরিমাণঃ ভার্মি কম্পোষ্ট ২ কেজি, পচা গোবর সার ৬ কেজি, সরিষার খৈল ৫০ গ্রাম, টি.এস.পি ৪০০ গ্রাম, জিপসাম ২৫০ গ্রাম, বোরণ ৩০ গ্রাম, জিংক সালফেট/দস্তা সার ২০ গ্রাম।
উপরি সার প্রয়োগের সময় ও নিয়মাবলী-
গাছে নূতন পাতা আসলেঃ ১ম কিস্তি ২য় কিস্তি ৩য় কিস্তি, ইউরিয়া ৫০ গ্রাম ৫০ গ্রাম ৫০ গ্রাম, এম.ও.পি ৫০ গ্রাম ৫০ গ্রাম ৫০ গ্রাম।
গাছে ফুল আসলেঃ ১ম কিস্তি ২য় কিস্তি ৩য় কিস্তি, ইউরিয়া ১০০ গ্রাম ১০০ গ্রাম ১০০ গ্রাম, এম.ও.পি ১০০ গ্রাম ১০০ গ্রাম ১০০ গ্রাম।
অন্তর্বর্ত্তীকালীন পরিচর্যা
পেঁপে গাছ পুরুষ, স্ত্রী কিংবা উভয় লিঙ্গের মিশ্রণ হতে পারে। প্রতি মাদায় ৩টি করে পেঁপের চারা ত্রিভুজাকারে করে রোপণ করতে হয়। পরে গাছে ফুল আসলে প্রতি মাদায় একটি করে স্ত্রী অথবা উভয় লিঙ্গ গাছ রেখে বাকিগুলো কেটে ফেলতে হবে। পরাগায়নের জন্য প্রতি ১০-১৫টি স্ত্রী গাছের জন্য একটি পুরুষ গাছ রাখতে হবে।
বেশি করে পেঁপে ফলানোর জন্য অনেক সময় কৃত্রিম পরাগায়ন দরকার হয়। সকাল বেলায় সদ্য ফোটা পুরুষ ফুল সংগ্রহ করে এর পাঁপড়িগুলো ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে পুংকেশর স্ত্রী ফুলের গর্ভ কেশরের উপর ধীরে ধীরে, ২-৩ বার ছোঁয়ালে পরাগায়ন হবে। এভাবে একটি পুরুষ ফুল দিয়ে ৫-৬টি স্ত্রী ফুলের পরাগায়ন করা যেতে পারে।
পেঁপে গাছ ঝরে পড়ে যেতে পারে অথবা বেশি পরিমাণে ফল ধরলে কাত হয়ে যেতে পারে বা ভেঙ্গে যেতে পারে। তাই গাছকে রক্ষা করার জন্য বাঁশের খুঁটি পুঁতে কান্ডের সাথে বেঁধে দেয়া দরকার।
শীতকালে প্রতি ১০-১২ দিন এবং গ্রীষ্মকালে ৬-৮ দিন অন্তর পেঁপের জমিতে সেচ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে এবং সেচের অতিরিক্ত পানি যাতে নালা দিয়ে বের হয়ে যেতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
পেঁপে বাগান সব সময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
প্রতিক্ষণ/এডি/এআরকে