প্রধানমন্ত্রীকে দুষলেন রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডট কম
যে কোনো উপায়ে হরতাল-অবরোধের বিরুদ্ধে নাশকতা দূর করতে হবে পুলিশ বাহিনীকে উদ্দেশ্য করে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপির দফতরের দায়িত্বে থাকা যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। বৃহস্পতিবার (২৯ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে এ শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। রিজভী বলেন, দেশের পরিণতি কী তাহলে লাশ খালে-বিলে-নদীতে ভেসে উঠবে ? যৌথবাহিনী কর্তৃক চলবে গ্রামের পর গ্রামে খান্ডব দাহন, বিরোধী দলের আরো অসংখ্য নেতা-কর্মীদের হত্যার পর বলা হবে বন্দুকযুদ্ধের কাহিনী ?
রিজভী আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য বর্তমান সংকটকে আরো গভীর ও উপসংহারহীন করে তুলবে।নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্রুত আগাম নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের লাগাতার অবরোধের ২৩তম দিন বুধবার নিজ কার্যালয়ে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মত বিনিময়ে প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশ দেন।
রিজভী বলেন, বিরোধী দলের অস্তিত্ব রেখে কখনোই নাৎসী শাসন বজায় রাখা যায়না। তাই বাংলাদেশি নাজীরা বিরোধী দল, বিরোধী মত, সরকারকে সমালোচনা করার অধিকার যা সংবিধান ও বহুদলীয় গণতন্ত্রে স্বীকৃত-সেটিকে উচ্ছেদ করার চূড়ান্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উঠেপড়ে লেগেছে। আর এজন্য জনমনকে বিভ্রান্ত করার জন্য তাদেরকে হাইপার প্রপাগান্ডার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এই প্রপাগান্ডা একতরফা বিরোধী দলের বিরুদ্ধে। বিরোধী দলের পাল্টা বক্তব্যের সুযোগ থাকেনা, কারণ তাদের পক্ষে কোনো গণমাধ্যমে সংবাদ পরিবেশিত হলে সেই সংবাদ মাধ্যমটির মৃত্যু ঘটবে অথবা কোনো রকমে টিকে থাকলেও সেখানে সরকারি বুলি আওড়াতে বাধ্য করা হয়।
রিজভী আহমেদ বলেন, পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে নিরীহ মানুষকে অগ্নিদগ্ধ করা শুধু অমানবিকই নয়, যারা এগুলোর সঙ্গে যুক্ত তারা পাশবিক বিবেকের অমানুষ। কিন্তু এই জঘন্য অপকর্মের দায় চাপানো হচ্ছে বিরোধী দলের ওপর। কারণ সরকারি শক্তির নিয়ন্ত্রণে গণমাধ্যম। তাদের হুকুমেই গণমাধ্যমে ঢালাও প্রচার চালানো হচ্ছে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে। যেখানে বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোট নেতা দেশনেত্রী খালেদা জিয়া নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ, দলের মহাসচিবসহ হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাগারে, প্রায় লক্ষাধিক নেতাকর্মী মিথ্যা মামলা কাঁধে নিয়ে বাড়িছাড়া, প্রায় প্রতিদিন সারাদেশে অসংখ্য নেতাকর্মীদের বাসায় গিয়ে চলছে যৌথবাহিনীর তান্ডব, চলছে ক্রসফায়ারের নামে বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের হত্যা, সেই রকম ভয়-আতঙ্ক ও উৎকন্ঠার মধ্যে নেতা-কর্মীরা জীবন বাঁচাবে না গাড়িতে আগুন অথবা পেট্রোল বোমা ছুঁড়বে ?
রিজভী আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কিন্তু গোয়েন্দা বাহিনীর বন্দুক যুদ্ধের আষাঢ়ে গল্প বানানো হলেও খিলগাঁয়ে ছাত্রদল নেতা নুরুজ্জামান জনি, নড়াইল পৌরসভার কাউন্সিলর ইমরুল কায়েস, কানসাটের ছাত্রদল নেতা মতিয়ার রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছাত্র শিবির নেতা আসাদুজ্জামান তুহিনসহ জোটের আরো বেশ কিছু নিষ্ঠাবান কর্মীকে এরই মধ্যে পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করে হত্যা করা হয়েছে। রিজভী আহমেদ প্রশ্ন রাখেন-এরা কি নাশকতা করতে গিয়ে হাতে নাতে ধরা পড়েছে ? এদের প্রায় সবাইকে নিজ বাড়ি কিম্বা আত্মীয় স্বজনের বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
রিজভী আহমেদ দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলেন, গণবিচ্ছিন্ন কোনো রাজনৈতিক দল বা সরকার জনমতকে উপেক্ষা করে জোর করে ক্ষমতা দখলে রাখলে তখন তারা গণদুশমন-এ পরিণত হয়। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আওয়ামী মহাজোট সরকার জনআতঙ্কে ভুগছে। জনগণের ভীড় দেখলেই তারা প্রমাদ গুনছে। এইজন্য বিএনপি ও তাদের জোট কোনো সমাবেশের ডাক দিলেই তারা যেন বিপদের আওয়াজ শুনতে পায়। তারা জনগণকেই বিপদ মনে করে। আর এজন্য তখনই তারা সরকারি বাহিনীগুলো দিয়ে সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু করে বিরোধী দলের কর্মসূচির ওপর।
সরকারি প্রচণ্ড আক্রমণ সত্বেও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা জোরালো কন্ঠের আওয়াজে মিছিল করে শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচি পালন করে যাবে।
প্রতিক্ষণ/এডি/রুমানা