প্রবীর গ্রেফতারে ‘ফেসবুকে’ ঝড়
মাসফেক ইব্রাহীম
“আজ এই দেশে কেউ মুক্ত নয়, ৫৭ ধারা নামের অদৃশ্য কারাগারে ঢুকিয়ে গোটা বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের কথা বলার অধিকার হরণ করে ফেলা হয়েছে। এদেশে চাপাতির ভাষায় মৌলবাদ কথা বলে, অর্থের জোরে কথা বলে একাত্তরের পরাজিত শক্তি, কালো আইনের ভাষায় কথা বলে সুবিধাবাদ।” সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের আটকের ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে এই ভাবে তার ফেসবুকের স্ট্যাটাসে মন্তব্য করেছেন গনজাগরণ মঞ্চের মূখপাত্র ইমরান এইচ সরকার। তার সাথে অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী প্রবীর আটকের তীব্র নিন্দা জানান।
যখনই সাধারণ মানুষ সত্যের ভাষায় কথা বলতে আসে, তাকে থামিয়ে দেয়া হয় ভাড়াটে সন্ত্রাসীর হামলায়, তাকে থামিয়ে দেয়া হয় মৌলবাদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে, তাকে থামিয়ে দেয়া হয় জনগণের টাকায় অর্জিত রাষ্ট্রীয় শক্তির অপব্যবহার করে।
তিনি আরো বলেন, তবু বাংলাদেশ চুপ করে থাকবে না, শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে মুক্তিকামী মানুষ কথা বলবে, কলম ধরবে মুক্তির পক্ষে, মৌলবাদের বিনাশের পক্ষে। মানুষের কথা বলার অধিকার আদায়ে বাংলার মানুষ রাজপথে নেমে আসবে। কেননা আমাদের স্মৃতিতে আছে জাতির জনকের সূর্যমুখী ভাষণ, আমরা যখন মরতে শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবা না।
ফেসবুক ব্যবহারকারী ওয়াহিদুজ্জামান তার স্ট্যাটাস লিখেন, একটা খারাপ জিনিস দিয়ে কোন ভাল কাজ করা সম্ভব না। বিশেষ করে যদি সেটা হয় কালো আইন। মানুষের বিষ্ঠা তবু একটা সময় পর পঁচে গিয়ে উদ্ভিদের জন্য সার হিসেবে কাজে লাগতে পারে কিন্তু কালো আইন দিয়ে কোন ভাল কিছুই করা সম্ভব না। কোন ভাল কাজ না।
২০১৩ সালে যখন ৫৭ ধারা সংশোধন করা হয় তখন একটি টক-শোতে আমি পিনাক দা এবং তুসার ভাই এই আইনটির কড়া সমালোচনা করে এটি দিয়ে সকল প্রতিবাদী মুখ বন্ধ করা হবে বলে আশংকা প্রকাশ করেছিলাম। বলাবাহুল্য আমরা তিনজন তিন রাজনৈতিক চিন্তার মানুষ। তারপরও একটি কালো আইনকে সর্বসম্মতভাবে ‘কালো’ বলতে পেরেছিলাম।
তিনি আরো বলেন, এই কালো আইনের প্রয়োগ শুরু হয়েছিল, আমার দেশের সম্পাদক মাহামুদুর রহমানকে দিয়ে। কিছুদিন আগে সিপি গ্যাং এর এক ছেলেকে পুলিশ এই কালো ৫৭ ধারায় গ্রেফতার করেছে। সেই সিপি গ্যাং, যারা আমাকে জেলে পাঠিয়ে উল্লাস করেছিল, তারপরও আমি সেই ছেলের গ্রেফতারের প্রতিবাদ করেছি। ২০১১ সালে যখন আসিফ মহিউদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয় আমি তখনও প্রতিবাদ করেছি, তার ওপর যখন হামলা হয় তখনও প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু আপনারা কেউ খেয়াল করে দেখেছেন কী, আমাদের গ্রেফতারের পর উনারা কেউ কিন্তু কোন প্রতিবাদ করেননি। সিপি গ্যাং বা উগ্র চেনতাধারীরা যে উল্লাস করেছিল, সেটা তো আগেই বললাম। সুতরাং প্রবীর’দা গ্রেফতার হবার কারণে কিছু মানুষ যে খুশি হবেন বা নীরব থেকে মৌন সমর্থন জানাবেন এটাও স্বাভাবিক। আমাদের মধ্যে এই বিভেদটা শাসক গোষ্টী তৈরী করে দিতে পেরেছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।
এই বিভেদটা ঘোচানোর দায়িত্ব আপনার-আমার সবার। বিশেষ করে যারা চেতনায় বুঁদ হয়ে আছেন তাদের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। আমি আশা করবো প্রতিটি সচেতন মানুষই কালো আইন ৫৭ ধারায় গ্রেফতার হওয়ার প্রতিবাদ করবেন। দলমত নির্বিশেষে সকলের গ্রেফতারের প্রতিবাদ করবেন। তা না হলে এক পক্ষের খুশি হবার সুযোগ নিয়ে এই কালো আইনের অপপ্রয়োগ চলতেই থাকবে।
সাংবাদিক এবং উপস্থাপক অঞ্জন রয় তার ফেসবুকে জানান, একদিকে ৫৭ ধারা অন্যদিকে চাপাতি।
মগজে কারফিউ নিষেধ বেরনো ভাবনা নিয়ে একা রাস্তা পেরনো। ভাবতে বেরোলে রাস্তা পেরলে পেয়াদা ধরবে বেঘোরে মরবে। অন্য পোশাকে কলার খোসাকে দেখলে সাবধান রেখো হে ব্যাবধান। ফারাক রেখে দিও কথায় কর্মে-এটাই লেখা আছে যুগের ধর্মে। ফারাক রেখে দিও সকালে সন্ধ্যায়-সময় কেটে যাবে সফল ধান্দায়।
অমি রহমান পিয়াল নামে একজন ফেসবুকে জানান, মুক্তিযুদ্ধে এতগুলো স্বজন হারিয়েছেন, স্বাধীন দেশে চলাচলের পা হারিয়েছেন। নীতি এবং বিবেক হারাননি প্রবীর শিকদার। হারাননি সাদাকে সাদা কালোকে কালো বলার অদম্য মনোবল। হারাননি লড়ে যাওয়ার স্পৃহা। এমন যোদ্ধাকে হারাতে হলে মিত্রের বেশেই তো পিঠে ছুরি মারতে হবে।
অভিজিত বিশ্বাস জয় নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী জানান, ৫৭ ধারা। সাবাস!!!! কত নাটকের লিস্ট আছে আপনাদের হাতে? নেক্সট কোনটা??
সাংবাদিক প্রবাস আমিন তার ফেসবুকে জানান, শহীদ পরিবারের সন্তান। নিজেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অক্লান্ত যোদ্ধা। আমাদের মত ভার্চুয়াল যোদ্ধা নয়, তার যুদ্ধ মাঠে-ময়দানে। যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে লিখে হামলার শিকার হয়েছেন, পা হারিয়েছেন। কিন্তু লড়াই থামাননি। আবারও হুমকি এসেছে। নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করতে গিয়েছিলেন, পুলিশ জিডি নেয়নি। বাধ্য হয়ে দ্বারস্থ হয়েছেন ফেসবুকের। নিজের জীবন সংশয়ের কথা, সন্দেহভাজনদের নামসহ লিখেছেন। এই অপরাধে (?) উল্টো তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গেছে। হায়, এই দেশে কি আজ নিরাপত্তা চাওয়াও অপরাধ? যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে লেখাও অপরাধ?
তবে প্রবীরদা নিরাপদেই আছেন। কারাগারই এখন সবচেয়ে নিরাপদ। তাই প্রবীরদার মুক্তি চাই না।
প্রতিক্ষণ/এডি/এমএস