প্রসঙ্গ: অনলাইন সাংবাদিকতা ( পর্ব-১)

প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৭ সময়ঃ ২:৩১ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ২:৩১ অপরাহ্ণ

২০১৪ সালের ১ লা নভেম্বর সারা বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ছিলো না ৮ ঘন্টা। বিদ্যুৎ না থাকায় সেদিন অনলাইন পাঠক সংখ্যা সর্বোচ্চ রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। কারণ ঐ দিন টেলিভিশন দেখতে না পেয়ে মোবাইলে অনলাইন পত্রিকায় ডুকে বিদুৎ বিপর্যয়ের বিষয়ে জানতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে পাঠকরা। বাংলাদেশে অনলাইন পত্রিকার প্রতি নির্ভরতার একটি উল্লেখ্যযোগ্য দিন ছিলো সেটি।

সংবাদপত্রকে যদি বলা হয় তাড়াতাড়ির সাহিত্য; তাহলে অনলাইন সাংবাদিকতাকে বলতে হবে অতি তাড়াতাড়ির সাহিত্য বা চলমান সাহিত্য।কারণ এখানে প্রতিটি মিনিট, প্রতিটি সেকেন্ড অনেক গুরুত্বপূর্ণ।সময়ের উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। প্রতি মুহূর্তের আপডেট নিউজের সাথে ঐ নিউজ পোর্টাল এর পাঠক সংখ্যা, নিউজের শেয়ার সংখ্যা, লাইক সংখ্যা এবং পত্রিকাটির অ্যালেক্সা র‌্যাংকিং অনেক কিছুই ওঠানামা করে। দৈনিক সংবাদপত্রে আজকের সংবাদ আগামীকাল প্রকাশিত হয়, কিন্তু অনলাইন নিউজ পোর্টালের ক্ষেত্রে আজকের সংবাদ আজকেই এবং মুহূর্তের সংবাদ মুহূর্তেই প্রকাশ করতে হয়। ২০/২৫ মিনিটও এখানে অনেক দীর্ঘ সময়। আর মূল প্রতিযোগিতাটাও এই জায়গাতেই।

দেশে বর্তমানে কয়েক ধরনের নিউজ পোর্টাল রয়েছে। ১. বিশেষায়িত নিউজ পোর্টাল ( শুধু খেলা, শুধু বিনোদন, শুধু প্রযুক্তি। যেমন- প্রিয় ডট কম, ই-টেক) ২. ডেইলি ইভেন্ট নিউজ পোর্টাল ( দৈনন্দিন রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলাধুলা, শেয়ারবাজার, অপরাধ। মোট কথা প্রায় সব বিষয়ের সর্বশেষ।যেমন- বাংলা নিউজ, বিডি নিউজ ) ৩. বিশেষ সংবাদ ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল (অনেকটা অফ-ট্যাকের নিউজ।যেখানে বিশেষ প্রতিবেদন গুরুত্বপূর্ণ, ডেইলি ইভেন্ট নয়। যেমন-বিবিসি) ৪. মিশ্র নিউজ পোর্টাল (গুরুত্বপূর্ণ ডেইলি ইভেন্ট+ বিশেষ সংবাদ এবং ফিচার। যেমন-প্রতিক্ষণ)

অনলাইন সাংবাদিকতায় সময় যেহেতু মুল বিবেচ্য বিষয়; সেহেতু অনলাইন সাংবাদিদের খুব চাপের মধ্যেই কাজ করতে হয়।যেকোন সংবাদ খুব দ্রুততার সাথে তাদের পাঠাতে হয়।যেকারণে তার নিউজ সেন্স, টাইপিং স্পিড এবং প্রযুক্তি জ্ঞান ভালো থাকা দরকার। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া যাবে। যেমন- বিদ্যুৎতের দাম বাড়ানো নিয়ে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের একটা সংবাদ সম্মেলন।যেখানে অনেকক্ষণ ধরে তারা ব্রিফ করছেন।তাৎক্ষণিকভাবে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে যদি আলোচনা হয়।অথবা প্রশ্নোত্তর পর্বেও যদি রেগুলেটরি কমিশন বলেন, ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের দাম ২ টাকা করে বাড়ানো হচ্ছে।তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে একজন অনলাইন সাংবাদিককে ফোন দিয়ে তা অফিসে জানিয়ে দিতে হয়।

আর খবরটি পাওয়ার সাথে সাথেই ঐ পত্রিকার সাব এডিটর ঐ নিউজটিকে লীড করে দিয়ে তিন /চারলাইনে দিয়ে দিলেন।যেমন- বিদ্যুতের দাম আবারোও বাড়ানো হচ্ছে। এনাজিং রেগুলেটরি কমিশনের সংবাদ সম্মেলনে এই মাত্র সিদ্ধান্তটি জানানো হয়্। মাত্র কয়েকটি লাইনে নিউজটি আপলোড করে বলে দেয়া হয় বিস্তারিত আসছে…। এরপর ব্রিফিং চলাকালীন সময়ে পুরো নিউজ স্টোরিটি লিখে ফেলেন একজন অনলাইন সাংবাদিক। ব্রিফিং শেষ হতে না হতেই তিনি স্পটে বসেই নিউজটি মেইলে পাঠিয়ে দেন। এরপর অফিসে একজন সাব এডিটর ঐ মেইলটি চেক করে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে আগের অংশের সাথে সংযুক্ত করে নিউজটির বিস্তারিত আপলোড করে দেন সাইটে। যে পত্রিকা এই কাজটি যতটা দক্ষতা, দ্রুততা ও বস্তুনিষ্ঠতার সাথে করতে পারছে তার সফলতাও তত বেশি।

মজার বিষয় হচ্ছে অনলাইনে সফলতা এবং ব্যর্থতার বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে কন্ট্রোল প্যানেল থেকে জানা যায়।যেমন- কোন নিউজ আপলোড করার পর গুগল অ্যানালাইটিকস থেকে অনলাইন পোর্টাল কর্তৃপক্ষ সহজে জানতে পারে- এ পর্যন্ত ঐ নিউজটি কতজন দেখেছে? কোন কোন স্থান থেকে, কোন কোন দেশ থেকে কতজন দেখেছে, এমনকি মোবাইল থেকে কয়জন দেখছে, ডেস্কটপ থেকে কয়জন, ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমের লিংক থেকে কয়জন দেখছে- এসব বিষয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়।যা অন্য গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে একটু জটিল ও সময় সাপেক্ষ। এক্ষেত্রে অনলাইন পত্রিকাগুলোর এডভান্টেজকে কল্পনাতীত বলা চলে। কারণ কোন ধরনের নিউজ মানুষ বেশি দেখছে, তার পছন্দ কী এটা সহজেই জানতে পারছে অনলাইন পত্রিকা। আর চাহিদা অনুযায়ী নিউজ দেয়ার বিষয়ে ডিসিশান নিতে পারছে।

এছাড়া যেকোন নিউজের ক্ষেত্রে এই মুহুর্তে ঐ নিউজে লাইক কত, শেয়ার সংখ্যা কত, কমেন্ট কেমন আসছে? সর্বোপরি এর ভিজিটর সংখ্যা কত তা জানা যাচ্ছে। আর সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে কিছু নগদ অর্থ খরচ করে সাইটে ভিজিটর বাড়ানোর কৌশলও অনলাইন পত্রিকা কর্তৃপক্ষের হাতে রয়েছে। মোট কথা ফিডব্যাক খুব দ্রুত পাওয়া যাচ্ছে এবং পাওয়ার কৌশলও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সেকারণে দ্রুত পাঠকের কাছে পৌঁছে যাওয়া যাচ্ছে।

বর্তমানে বেশিরভাগ পাঠক নিউজ পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে তারা সেখান থেকে যেকোন নিউজ পছন্দ হয়ে গেলে তার লিংকে ক্লিক করে বিস্তারিত জানতে চায়। ইদানীং বাসে, রাস্তাঘাটে, চায়ের দোকানে অনেককে দেখা যায় ফেসবুকে ডুকে অনলাইন পত্রিকা পড়ে নিজেকে আপডেট রাখছে আর পছন্দ হলে নিউজটি শেয়ার দিচ্ছে।অর্থাৎ চলতে-ফিরতেও মানুষ পত্রিকা পড়ছে। অ্যানড্রয়েড মোবাইলের সহজলভ্যতার কারণে দিনে দিনে অনলাইন পত্রিকার পাঠক সংখ্যা বাড়ছে। জাতীয় দৈনিকগুলোও সেকারণে তাদের অনলাইন ভার্সনকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।

আগামী দিনে এমন একটা সময় আসবে যখন প্রিন্ট মিডিয়ার চেয়ে অনলাইন মিডিয়ার প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়বে পাঠক। আর সেকারণে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য দিয়ে অনলাইন সাংবাদিকদের পেশাদারিত্বের বিষয়ে আরো সর্তক থাকা উচিত । এছাড়া অনলাইন পত্রিকার রেজিষ্ট্রেশন যেন আলু-পটল ব্যবসায়ীদের কপালে না জোটে সে বিষয়ে সরকারের নজর রাখা উচিত।

রাকিব হাসান

লেখক: সাংবাদিক

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G