বহু আনন্দ-অশ্রুর সাক্ষী এই ডিসেম্বর

প্রকাশঃ ডিসেম্বর ১, ২০১৬ সময়ঃ ২:২১ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১:১২ অপরাহ্ণ

শারমিন আকতার:

december

‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে,
বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা
আমরা তোমাদের ভুলবনা’

এ আমার বাংলাদেশ, যার প্রতি ইঞ্চি মাটিতে এখনও রক্তের দাগ লেগে আছে। যাদের আর্তনাদের  গোঁগানী এখনও ভেসে বেড়ায় আমাদের চারপাশে। সে আমার ভাই, সে আমার বোন। পাকিস্তানীদের রক্ত চক্ষুকে  তোয়াক্কা না করে ৫২’র  আন্দোলনে ভাষার জন্য যারা বুকের রক্ত  দিয়ে দিয়েছিল অকাতরে।

সেই ভাষা শহিদদের রক্ত দিয়ে গড়া আমার বাংলা ভাষার প্রতিটি অক্ষর। তাঁদের স্মৃতির স্মরণে আজও সাক্ষ্য দেয় ‘শহীদ মিনার’। সেই রক্তের রেশ কাটতে না কাটতেই ৫৬, ৬৯এর গণঅভ্যুত্থানে মুখরিত বাংলার জনতা।

এরপর ৭ই মার্চ ১৯৭১, শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে, জনতার মঞ্চে এসে দাঁড়ালেন বহু প্রতিক্ষীত একজন  ;

 ‘কে রোধে তাহার বজ্রকন্ঠ বাণী?

গণসূয্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর কবিতাখানি

“এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম

এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”।

 (কবি নির্মলেন্দু গুণের ‘স্বাধীনতা -এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো’)

সেই থেকে ‘স্বাধীনতা’ শব্দটি আমাদের হাহাকারময় হৃদয়ে চলমান অদৃশ্য লেলিহান শিখা হয়ে দাউদাউ করে জ্বলতে শুরু করলো; যতদিন পর্যন্ত পরাধীনতার বিস্বাদময় শৃঙ্খল ভাঙতে পারিনি।

বাঙালির নির্ভীক নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের  ভাষণের পর  জনতার স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণের ইচ্ছা টের পেয়ে যায়  অত্যাচারী পাকিস্তানী সরকার। তাই এই ভীড়ু-কাপুরুষরা ২৫ মার্চের গভীর রাতে  নিরপরাধ  ঘুমন্ত  মানুষের উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে অগণীত বাঙালিকে।

এত এত মানুষের রক্তে রঞ্জিত  বাংলার মাটিতে উদিয়মান লাল টকটকে সূর্যটিকে সেদিন বড় বেশি বেদনায় আচ্ছাদিত মনে হচ্ছিল। সেই রাতের বিভীষিকা যেন দিনের আলোকেও স্তব্ধ করে দিয়েছিল। হলদে তেজী সূর্যটাকে বড় বেশি ম্লান দেখাচ্ছিল। পরদিন ২৬ শে মার্চ এক নতুন তেজি সূর্যের দেখা মিলল। অত্যাচারী পাকিস্তানি সরকার আমাদের ন্যয্য স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত রাখলেও নিজেরাই সে দিন থেকে স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণের ইচ্ছা নিয়ে প্রাণপণে লড়বার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিল। 

শুরু হল এক শ্বাসরুদ্ধকর যুদ্ধ; যেখানে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষিত বাঙালিও এক হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল। মনে যাদের একটাই কথা; ‘যে করেই হোক আমার এই মাটিকে শোষকের শাসন থেকে মুক্ত করবোই’। এই শক্তিই তাদের সাহসী ও বেপোরোয়া হতে সাহায্য করেছিল আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। ‘জান যাক তবু মাতৃভূমির মান বজায় রাখতে হবে’।

সেই শক্তিই একসময় অসীম অপরাজিত শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে বাংলার মানুষকে জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছিল। তাইতো রাজাকার আর হানাদার এক হয়ে রক্তের হলিখেলায় মেতে উঠেও শেষ পর্যন্ত বাংলার বীর সাহসী সাধারণ মানুষগুলোর মনের অসীম জোরের কাছে পরাজিত হয়েছিল। 

এই সেই ডিসেম্বর মাস, যেখানে  আছে বুদ্ধিজীবিদের হত্যার কলঙ্কিত দিন। আবার ১৬ ডিসেম্বরের পূর্ণাঙ্গ বিজয়ের আনন্দও। এক আনন্দ-অশ্রুর মিশ্রণে কাটে বাঙালির বহু ইতিহাসের সাক্ষী ডিসেম্বর মাসটি। 

তাই সমস্বরে গাইতে চাই সেই নির্ভীক যোদ্ধাদের স্মরণ করে,

‘দু:সহ বেদনার কন্টক পথ বেয়ে
শোষণের নাগপাশ ছিঁড়লে যারা
আমরা তোমাদের ভুলব না’

===

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

September 2024
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
20G