বানের জলেই ভাসব আমরা?
রনজু মিয়া:
উত্তরের জেলা কুড়িগ্রাম। সেখানকার নাগেশ্বরী উপজেলার নুনখাওয়া ইউনিয়নের পুরোটাই তলিয়ে গেছে বানের পানিতে।
মধ্যাঞ্চলের জেলা ফরিদপুর। সেখানে শহরররক্ষা বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বানের জলে ডুবে দুই শিশুসহ মারা গেছে তিনজন।
ভারতের সীমান্তবর্তী জেলা জামালপুর। বন্যার পানির কারণে সেখানকার আট শটি শিক্ষপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে।
উত্তর থেকে দক্ষিণ-পুরো দেশ এখন ডুবে আছে বন্যার পানিতে। শুধু আমরা যারা শহুরে, তারাই খণ্ড খণ্ড দ্বীপের মতো বিভিন্ন শহরে জেগে আছি। টেলিভিশনে, পত্র-পত্রিকায় বন্যাদুর্গত মানুষের আহাজারি দেখি, আবার সব ভুলে অফিস-আদালতে গিয়ে কাজ করি, আড্ডা মারি।
আমাদের মতো আটপৌরে চাকরিজীবী লোকের কথা না হয় বাদই দিলাম; কিন্তু আমাদের সরকারের হর্তাকর্তারা কী করছেন? ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়? তাদেরই বা কাজ কী?
তাদেরও কাজ আছে। আমরা টিভিতে দেখি, বন্যাদুর্গত এলাকায় নৌকায় করে ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছেন তারা। অসহায় লোকজন পড়িমড়ি করে ছুটে যাচ্ছেন ত্রাণের আশায়। অল্পকিছু লোক পাচ্ছেন, বেশির ভাগই ফিরছেন খালি হাতে। আর ত্রাণ বিতরণের সেসব ছবি টেলিভিশনে দেখিয়ে পত্র-পত্রিকায় ছাপিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন বিতরণকারীরা। এতেই কী সব দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়?
বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে, দুর্গত মানুষ বলছেন, আমরা বছর বছর ত্রাণ চাই না, আমরা বন্যা-সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই। রিলিফ চাই না, বাঁধ চাই। এ কথা কি কারও কানে ঢোকে?
ফি বছর বন্যায় একই চিত্র দেখতে পাই আমরা। বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে এলাকায়। ডুবে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। তলিয়ে যাচ্ছে আশ্রয়স্থল। পানির নিচে পড়ে পচে যাচ্ছে কৃষকের আবাদ-ফসল।
আচ্ছা, বন্যায় যে ত্রাণ দেওয়া হয় তা দিয়ে কদিন চলে এসব কৃষকের? বন্যার পানি নেমে গেলে তখন কী হবে তাদের? বাকি মাস, বছর চলে কী করে এসব লোকের? সে খবর আমরা রাখতে চাই না।
তাই বন্যাদুর্গত মানুষের প্রশ্ন প্রতি বছর বন্যা শুরু হওয়ার পর কেন এত তৎপরতা? এর আগে তারা নাকে তেল দিয়ে ঘুমান? বাঁধটা একটু শক্ত করে বাঁধলে অসুবিধাটি কী? বুঝলাম, তাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রকৌশলীদের ভাগে কিছু টাকা কম যাবে, কিন্তু লাখো মানুষের প্রতি বছরের সমস্যার সমাধানটা হবে তো।
আমাদের নদীগুলো আজ মৃত প্রায়। সেগুলো খনন হয় না বহুদিন। পরিকল্পনা গ্রহণ করে মৃতপ্রায় নদীগুলো খনন করা যায় না? নদীমাতৃক দেশে নদীর প্রতি এত অবহেলা কেন? সামান্য কদিনের টানা বর্ষণের পানিই কেন ধরে রাখতে পারে না আমাদের এককালের খরস্রোতা নদীগুলো? একটু পানি বেশি হলেই দুকূল প্লাবিত করে তারা।
বর্ষার ওপরও মানুষের হাত নেই, দুর্যোগ হলেও তাতে বাধা দেওয়ার উপায় নেই। তবে একটু পরিকল্পনা করলেই এসব দুর্গত মানুষের সমস্যার দীর্ঘমেয়াদী সমাধান করা যায়। সরকার কি সে চেষ্টা করবে? নাকি ফি বছর বানের জলেই ভাসব আমরা?
রনজু মিয়া : সাংবাদিক