বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার প্রস্তাব ইইউ’র
নিজস্ব প্রতিবেদক,প্রতিক্ষণ ডট কম
বিএনপির প্রতি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ছাড়ার প্রস্তাব অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্ট (ইইউ) প্রতিনিধি দল। বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাক্ষাৎকালে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহ্রিয়ার আলমকে তারা এ কথা বলেছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তিনি।
এ ছাড়া মানবাধিকার বিষয়ে ইইউ পার্লামেন্ট প্রতিনিধি দলের বিন্দুমাত্র উদ্বেগ নেই বলেও জানান তিনি।এর আগে গত বছরের (২০১৪) জানুয়ারি মাসে বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার প্রস্তাব দেয় ইউরোপীয় পার্লামেন্ট (ইপি)। একই সঙ্গে তারা জামায়াতকে নিষিদ্ধ করারও প্রস্তাব তোলে।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিএনপির সঙ্গে প্রতিনিধি দলের কী আলোচনা হয়েছে, সেটি আমাদের এখতিয়াভুক্ত নয়। আমরা বৈঠকে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট প্রতিনিধি দলকে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের একটি ভিডিওচিত্র দেখিয়েছি।
সেটা দেখার পর তারা নিজেরাই বলেছে, পার্লামেন্টের প্রস্তাবনার বিষয়টি তারা অব্যাহতভাবে বিএনপিকে বলে যাবে। এই ভিডিওচিত্র ইউরোপীয় পার্লামেন্টে দেখানো হবে বলেও তারা পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন।
প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ইইউ পার্লামেন্ট প্রতিনিধিদল মানবাধিকার বিষয়ে বিন্দুমাত্র উদ্বেগ জানাননি। তারা জানতে চেয়েছেন, এই বর্তমান সহিংসতা কবে শেষ হবে, কীভাবে শেষ হবে? আমরা পরিস্কারভাবে বলেছি, সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন তৃণমূল পর্যায়ে যে নিরাপত্তা বিধান করেছে, সেখানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও সজাগ আছে এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সরব উপস্থিতিতে মহাসড়কগুলো চালু করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে। সহিংসতাকারীরা বুঝতে পেরেছেন, বাংলাদেশের জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কথা বলে যেটা বুঝেছি, তাদের আলোচনার মূল মনোযোগ ছিল রানা প্লাজা ধস পরবর্তী তৈরি-পোশাক শিল্পে আমাদের যেসব অঙ্গীকার ছিল, সেগুলো আমরা কতটুকু বাস্তবায়ন করেছি।
তারা গতকাল (মঙ্গলবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি) একটি তৈরি-পোশাক কারখানা ঘুরে দেখেছেন। সেখানকার উন্নতি দেখে তারা খুশি হয়েছেন। আমরা অঙ্গীকার পূরণ করতে পেরেছি বলে তারা আশ্বস্ত হয়েছেন।
শাহ্রিয়ার আলম বলেন, বিষয়টি হলো, শ্রমআইন সম্পর্কিত কিছু প্রতিশ্রুতি ছিল, বিশেষ করে ইপিজেড এলাকায় ট্রেড ইউনিয়ন চালুর বিষয়ে কতটা অগ্রগতি হয়েছে, তা তারা জানতে চেয়েছেন।তিনি জানান, সরকার তাদের আশ্বস্ত করেছে শ্রমআইন বাস্তবায়নে একটি বিধিমালা তৈরি করা হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, মায়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে প্রতিনিধি দল জানতে চেয়েছেন। এই প্রতিনিধি দলের প্রধান কয়েকদিন আগে মায়ানমার সফর করেছেন। সে দেশের রাজনৈতি নেতৃবৃন্দকেও এই বিষয়টি বলেছেন। আমরা এ বিষয়ে গৃহীত জাতীয় কৌশলপত্র সম্পর্কে তাদের হালনাগাদ তথ্য জানিয়েছি।
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, এর বাইরে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার তহবিল সংগ্রহের বিষয়ে কোথা থেকে তারা টাকা পান, কোথায় খরচ করেন এ নিয়ে কথা হয়েছে। আপনারা জানেন, জঙ্গি অর্থায়ন একটি বিষয়, যেটা নিয়ে সরকার কাজ করছে এবং গত পাঁচ বছরে অনেক সফলতা পেয়েছে।
এ ছাড়া এনজিও আইনের সংশোধন কেন করেছি, তা তারা জানতে চেয়েছেন। আমরা তাদের বলেছি, যে চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে ইউরোপ যাচ্ছে, ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও ডেনমার্কে যে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, সেগুলো এবং এদের ব্যবহার করে অনেক অপকর্ম করতে পারে। এ ব্যাপারে সতর্কতামূলক হিসেবে এই আইন সংশোধন করেছি।
২০১৪ সালের জানুয়ারি এবং সেপ্টেম্বরে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা এবং বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার বিষয়ে যে প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন, সে বিষয়ে তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছে।
বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের সহিংসতা বিষয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ভিডিওচিত্র স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দেখিয়েছি। ইউরোপীয় পার্লামেন্টে এটি তারা ব্যবহার করবেন বলে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে তারা কী বলেছেন, এটি আমাদের এখতিয়ারের বিষয় নয়। আমরা সেটি জানতে চাইনি। কিন্তু, তারা নিজেরাই বলেছেন, ভিডিওচিত্রটি দেখার পরে বিএনপির প্রতি জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার প্রস্তাব অব্যাহত রাখবেন।
হত্যা, বিচার বহির্ভূত হত্যা, রাজনৈতিক সহিংসতা প্রসঙ্গে তারা উদ্বেগ জানিয়েছেন কিনা জানতে চইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, মানবাধিকার বিষয়ক বিন্দুমাত্র উদ্বেগ তারা জানাননি। তারা জানতে চেয়েছেন, এই চলমান সহিংসতা কবে শেষ হবে, কীভাবে শেষ হবে?
আমরা পরিস্কারভাবে বলেছি, সরকার বিভিন্ন তৃণমূল পর্যায়ের নিরাপত্তা বিধান করছে। সেখানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও সজাগ রয়েছে।
প্রতিক্ষণ/এডি/রেজা