বিদ্যাসাগরঃ মরণেই ফুরায়না কীর্তি

প্রকাশঃ জুলাই ২৯, ২০১৫ সময়ঃ ১১:৩১ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১১:৩১ পূর্বাহ্ণ

সাদিয়া এইচ. তানহাঃ

11824100_842964202461328_1629077411_nমাইকেল মধুসূদন দত্ত তার মধ্যে দেখতে পেয়েছিলেন প্রাচীন ঋষির প্রজ্ঞা, ইংরেজের কর্মশক্তি আর বাঙালি মায়ের হৃদয়বৃত্তি। যার মধ্যে এতো গুণ দেখেছিলেন মাইকেল তার নাম ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। আজ এই মহান বাঙ্গালির ১২২তম মৃত্যুবার্ষিকী।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাঙ্গালির কাছে এক চিরস্মরণীয় নাম। তাকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। তিনি সবচেয়ে বেশি নন্দিত ব্রিটিশ ভারতে বিধবাবিবাহ প্রচলণের জন্য। তবে শুধু বিধবার অধিকার আদায়ই নয়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাংলার শিক্ষা সংস্কার, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ ও পুরুষের বহুবিবাহ প্রতিকারের বিরুদ্ধে কাজ করা এবং বাংলা ভাষার সংস্কারেও সৃষ্টি করে গেছেন অনুসরণীয় কীর্তি। এছাড়া গদ্য রচনাতেও তিনি অতুলনীয় ছিলেন। উল্লেখ্য যে, তাকে বাংলা গদ্য সাহিত্যরীতির জনক বলা হয়।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে সেপ্টেম্বর তদানীন্তন হুগলি জেলার (অধুনা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা) বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মায়ের নাম ভগবতী দেবী। তিনি আনুমানিক ১১ বৎসর বয়সে ক্ষীরপাই নিবাসী শত্রুঘ্ন ভট্টাচার্যের কন্যা দীনময়ী দেবীকে বিয়ে করেছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্রের প্রকৃত নাম ঈশ্বরচন্দ্র বন্দোপাধ্যায়।

আজীবনের শিক্ষানুরাগী এই ব্যক্তি প্রথম পড়াশনা শুরু করেন গ্রামের সনাতন বিশ্বাসের পাঠশালায়। পরবর্তীতে তিনি বীরসিংহের পাঠশালা ও সংস্কৃত কলেজে অধ্যয়ন করেন এবং সাফল্যের সঙ্গে সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৮৩৯ সালের হিন্দু ল কমিটির পরীক্ষা দেন ঈশ্বরচন্দ্র। এই পরীক্ষাতেও যথারীতি কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে ল কমিটির কাছ থেকে যে প্রশংসাপত্রটি পান, তাতেই প্রথম তাঁর নামের সঙ্গে ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধিটি ব্যবহৃত হয়। কর্মজীবনে তিনি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ, সংস্কৃত কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করেন। শিশুদের জন্য রচিত “বর্ণপরিচয়” তার খুব বিখ্যাত একটি বই।

বিধবাদের দ্বিতীয়বার বিয়ের অধিকার আদায়ের জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আর শুধু আন্দোলন করেই তার কাজ শেষ হয় নি, নিজের বাইশ বছর বয়সী ছেলে নারায়ণচন্দ্রের সঙ্গে কৃষ্ণনগর নিবাসী শম্ভুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের ১৪ বছর বয়সী বিধবা কন্যা ভবসুন্দরীর বিয়ে করানোর মাধ্যমে তিনি সকলের সামনে বিধবা বিবাহের দৃষ্টান্তও স্থাপন করেন।

এছাড়া দরিদ্র ও অসহায় মানুষকেও সব সময় সাহায্য করতে তিনি। তাই তার আরেক নাম ছিল “করুণাসাগর”।

বাংলার নবজাগরণের পুরোধা এই ব্যক্তিত্ব ১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ই জুলাই রাতে তার কলকাতার বাদুড়বাগানস্থ বাসভবনে লিভার ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।

মৃত্যুর এক শতাব্দী পরও তার কর্ম ও চিন্তা মানুষকে যুগিয়ে চলেছে ভালো কাজ করার অনুপ্রেরণা।

 

প্রতিক্ষণ/এডি/সাদিয়া

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

September 2024
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
20G