বিলুপ্তির পথে ‘বাবুই’ পাখি

প্রকাশঃ জুন ১৬, ২০১৫ সময়ঃ ৪:৪২ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৪:৪২ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্ক

babui pakhi‘বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই ।”জীবন ও নিসর্গের কবি রজনীকান্ত সেনের এই কবিতাটি ছোটবেলায় পড়েননি এমন মানুষ খুব কেই খুঁজে পাওয়া যাবে। তবে আবহমান বাংলার এই সৃষ্টিশীল পাখি বাবুই আজ বিলুপ্তের পথে।

সময়ের বিবর্তনে ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে আজ এ পাখিটি আমরা হারাতে বসেছি। সেই সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে শিল্পী, সম্প্রীতি এবং সামাজিক বন্ধনের কারিগর বাবুই পাখি ও তার বাসা।
বাংলাদেশে তিন প্রজাতির বাবুই পাখির বাসা দেখা যায়। বাবুই পাখির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো রাতের বেলায় ঘর আলোকিত করার জন্য এরা জোনাকি পোকা ধরে নিয়ে বাসায় রাখে। সকাল হলেই আবার তাদের ছেড়ে দেয়। প্রজণন সময় ছাড়া অন্য সময় পুরুষ ও স্ত্রী পাখির গায়ে কালো কালো দাগসহ পিঠ হয় তামাটে বর্ণের। নিচের দিকে কোন দাগ থাকে না। ঠোঁট পুরো মোছাকার, লেজ চৌকা। তবে প্রজনণ ঋতুতে পুরুষ পাখির রঙ হয় গাঢ় বাদামি। বুকের উপরের দিকটা হয় ফ্যাকাশে। অন্য সময় পুরুষ ও স্ত্রী বাবুই পাখির চাঁদি পিঠের পালকের মতোই বাদামি। বুকের কালো ডোরা ততটা স্পষ্ট নয়। প্রকট ভ্রুরেখা, কানের পেছনে একটি ফোঁটা থাকে। বাবুই পাখি সাধারণত তাল, খেজুর, নারিকেল, সুপারি ও আখক্ষেতে বাসা বাঁধে। ধান, চাল, গম ও পোকা-মাকড় প্রভৃতি তাদের প্রধান খাবার।

বাবুই পাখির বাসা যেমন দৃষ্টিনন্দন তেমনি মজবুত। প্রবল ঝড়ে বাতাসে টিকে থাকে তাদের বাসা। খড়ের ফালি, ধানের পাতা, তালের কচিপাতা, ঝাউ ও কাশবনের লতাপাতা দিয়ে উঁচু তালগাছে চমৎকার আকৃতির বাসা তৈরি করতো বাবুই পাখিরা। একান্নবর্তী পরিবারের মত এক গাছে দলবদ্ধ বাসা বুনে এদের বাস। বাবুই পাখি একাধারে শিল্পী, স্থপতি এবং সামাজিক বন্ধনেরও প্রতিচ্ছবি। বাবুই পাখির শক্ত বুননের এ বাসা টেনেও ছেঁড়া কঠিন।

বাবুই আবহমান বাংলার শোভন পাখি । এরা দলবেধে বাসা বাঁধে তালগাছের পাতায়। দৃষ্টিনন্দন বুননে সে বাবুই পাখির বাসা সুউচ্চ তালগাছ আরও নয়নাভিরাম করে তোলে। বাবুইয়ের মতো এমন সুন্দর নিপুণ কারিগরী বুননে দুষ্টিনন্দন বাসা আর কোন পাখি বুনতে পারেনা। আর মানুষের পক্ষেও এমন সুন্দর বাসা তৈরী করা সম্ভব নয়। তাই বাবুই পাখির বাসা নৈস্বর্গিক হয়ে ওঠে। তবে গ্রামবাংলায় আগের মতো বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা এখন আর চোখে পড়ে না।

১০-১৫ বছর আগেও গ্রামগঞ্জের তাল, নারিকেল ও সুপারি গাছে ব্যাপকভাবে বাবুই পাখির বাসা চোখে পড়তো। বাবুই পাখির এসব বাসা শুধু শৈল্পিক নিদর্শনই ছিলনা, মানুষের মনে চিন্তার খোড়াক জোগানো এবং স্বাবলম্বী হতে উৎসাহিত করতো। তবে কালের বিবর্তনে বিলুপ্তির দিকে বাবুই পাখি। তালগাছেই বাবুই পাখির বাসা নিরাপদ কিন্তু সে তালগাছ উজাড় হচ্ছে দিনে দিনে। আর জলবায়ূর পরিবর্তনেও বাবুই পাখি ক্রমশ বিপন্নতার পথে। নতুন প্রজন্ম হয়তো একদিন ভূলেই যাবে এ পাখিটির নাম।
প্রতিক্ষণ/এডি/নির্ঝর

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G